ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাদুঘরের ডিওরামা ঘিরে বাড়তি কৌতূহল

আপন পরিবেশ, কৃত্রিম পশুপাখি- দৃষ্টি নন্দন উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

আপন পরিবেশ, কৃত্রিম পশুপাখি- দৃষ্টি নন্দন উপস্থাপনা

মোরসালিন মিজান ॥ জাতীয় জাদুঘরের অনেকগুলো গ্যালারি। অজস্র নিদর্শন দিয়ে সাজানো। প্রতিদিনই ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তবে একটু ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা ডিওরামাগুলোতে। চারদিকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা বিশাল বাক্সের সামনে ভিড় লেগে থাকে সব সময়। জাদুঘরের একাধিক বিভাগের আওতায় আছে বেশ কিছু ডিওরামা। তবে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ। এই বিভাগের ডিওরামাগুলোতে বাঘ হাতি হরিণ পাখি সাপ মাছ ইত্যাদি প্রাণীর কৃত্রিম উপস্থাপনা। স্বচ্ছ কাঁচের সামনে তাই ভিড় লেগে থাকে সব সময়। বড়রা কৌতূহল নিয়ে দেখেন। আর শিশুরা তো বিনোদন কেন্দ্র জ্ঞান করে। এই বিভাগের গ্যালারি পরিদর্শনে গেলে প্রথমেই চোখে পরে সুন্দরবনের ডিওরামা। এটি গড়ে তোলা হয়েছে তিন নম্বর গ্যালারিতে। চার দেয়ালের ভেতরেই অদ্ভুত সুন্দর ম্যানগ্রোভ বন! দুই পাশের দেয়ালের প্রায় পুরোটাজুড়ে বড় গ্লাস শোকেস। এর ভেতরে নানা প্রজাতির গাছ। ঘন বন। হাতের বাম পাশে সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যেন জীবন্ত! অপর অংশে কান খাড়া করা তীক্ষè চাহনির হরিণ। ডান পাশে পাখিদের ওড়াওড়ি। কৃত্রিম সৃষ্টি হলেও খুব আকর্ষণীয়। পশু পাখিদের বিচিত্র ডাকাডাকিও কানে আসে। সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। ৭ নম্বর গ্যালারিতে তিনটি ডিওরামা। একটিতে পুকুর। কিছুটা অবিন্যস্ত বটে। তবে পুকুরের আদলটি পরিষ্কার। পাশেই আবার নদীর ডিওরামা। এখানে বিশাল এক মাছের উপস্থাপনা। এর লম্বা খাঁজকাটা ঠোঁট। দেখতে অনেকটা করাতের মতো। নাম তাই করাত মাছ। পাশের ডিওরামায় ছোট বড় নানা আকার ও আকৃতির সামুদ্রিক প্রাণী। এই গ্যালারির ডান পাশের দেয়ালটিও খুব আকর্ষণীয়। এখানে চারটি সেমি ডিওরামা। একটিতে প্রজাপতিদের বাস। পাশেরটিতে মৌমাছি। বড়সড়ো দেখতে মৌচাক। যেন সামান্য বিরক্ত করলে আর রক্ষা নেই। ছুটে আসবে। হুল ফোটাবে। তারও বেশি ভয় ধরিয়ে দেয় কালনাগিনী। এ সাপ রীতিমতো ফণা তুলে আছে। অজগর দেখেও পিলে চমকে যায়! এসবের বাইরে আছে গুঁই সাপ ও হলদে গুঁই। অদূরেই নয় নম্বর গ্যালারি। এখানে দু’টি ডিওরামা। বড়টিতে ডলফিন। আগ্রহ নিয়ে দেখে বাচ্চারা। অপর ডিওরামাটিতে মুখপোড়া হনুমান। গাছে ঝুলে আছে। সাধারণত সিলেট ময়মনসিংহ কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও পার্বত্য বনাঞ্চলে এদের বাস। তবে চাইলেই দেখা যায় না। মজা করে দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। এখানে সেমি ডিওরামা আছে ৬টি। ছোট ওয়াল শোকেসের মতো ডিওরামায় বিচিত্র সব প্রাণী। রুই মাছের মতো দেখতে একটি প্রাণী বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দেখেই বোঝা যায়, এটি বনরুই। আছে লাল বানর, উল্লুক। সজারুর সে কী কাঁটা! দুটি সজারু যেন সত্যি সত্যি ছুটে চলেছে। চিতা বিড়াল বা কাঁকড়াভুক বেজিও বাদ যায়নি। সবই স্বরূপে হাজির করা হয়েছে। সবশেষে দশ নম্বর গ্যালারি। এখানে বেশ বড় ডিওরামা। একটিই। পুরোটা জুড়ে বন। না, আর কোন প্রাণী নেই। যেন হাতির একলা রাজ্য। এক দম্পতি। সঙ্গে বাচ্চা হাতি। একটি আস্ত কলাগাছ সাভার করছে। সব মিলিয়ে অন্য রকম বিনোদন। দর্শনার্থীরা এখানে এসে যেন চিড়িয়াখানা দেখার আনন্দ লাভ করেন। শিশুরা প্রতিটি ডিওরামার সামনে দাঁড়ায়। কৌতূহল নিয়ে দেখে। বাচ্চাদের হৈ-হুল্লোড় দেখে মনে হয়, এ যেন বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিনের মতো শনিবারও প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ডিওরামার সামনে ছিল বাড়তি ভিড়। শিশু-কিশোররা তো নড়তেই চাইছিল না। চোখে মুখে সে কী কৌতূহল তাদের! ছুটির দিন হওয়ায় এদিন দুই সন্তানকে নিয়ে জাদুঘর পরিদর্শনে এসেছিলেন আমিনুল ইসলাম। একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। বললেন, বাঘ হাতি হরিণ বানর ওরা চিড়িয়াখানায় দেখেছে। কিন্তু এখানে উপস্থাপনাটা একটু অন্যরকম। ঘরের ভেতরে বনের পরিবেশ। সেই বন থেকে বাচ্চারা একটি একটি করে প্রাণী খুঁজে নিচ্ছে। নাম ধরে ডাকছে। আঙুল ধরে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। দেখাচ্ছে। সব দেখে বোঝা যায়, ডিওরামাগুলো দেখে ওরা খুব খুশি। অন্য একটি ডিওরামার সামনে দাঁড়িয়ে কৃত্রিম বানরের সঙ্গে খেলা করছিল হিমেল। ক্লাস টু পড়ুয়া শিশু এসেছিল বড় বোনের সঙ্গে। জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে কিছু সময় সিনেমা দেখেছে। তার পর বন্য পশুপাখি দেখা। বলল, সিনেমার চেয়ে এখানে বেশি ভাল লাগছে। তার মতে, জাদুঘরের হাতি আর বাঘগুলো অনেক সুন্দর। কামড় দিতে আসে না! এ প্রসঙ্গে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ডিওরামাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপন্ন প্রায় প্রাণীদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। যে প্রাণী যে পরিবেশে থাকে, সেই আপন পরিবেশেই এদের দেখছেন দর্শনার্থীরা। এ কারণেই ডিওরামা নিয়ে দর্শনার্থীরা বিশেষ কৌতূহী বলে জানান তিনি।
×