ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগের হাত-পা বেঁধে দিলে জনগণ যাবে কোথায় ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

বিচার বিভাগের হাত-পা বেঁধে দিলে জনগণ যাবে কোথায় ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের হাত- পা বেঁধে দিলে মানুষ যাবে কোথায়? তিনি বলেন, ভারতের কাছ থেকে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দাবিতে প্রয়োজনে জাতিসংঘে যেতে হবে। বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জিয়াউর রহমান গবেষণা পরিষদ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের কথা শুনতেন না। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচন চায়। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন চাই। অন্য কোন পথে নয়। সেই নির্বাচন করার জন্য জায়গা দিতে হবে। আমাদের কথাই বলতে দেয়া হবে না, সভা-সমাবেশ করতে গেলে বলবে নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে। এমন আচরণ করলে কি নির্বাচনে যাওয়া যায়? তিনি বলেন, হাওড়ের পানি উজান থেকে আসছে। ভারত বাঁধ দিয়ে রাখে। আর বেশি পানি হলে বাঁধ ছেড়ে দেয়। তখন বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল ডুবে যায়। পানির ন্যায্য হিস্যা আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী পানি বণ্টনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পাওনা কোথায়? পাওনার কথা বললেই ভারতবিরোধী হয়ে গেলাম? তিনি বলেন, গঙ্গা ব্যারাজে যে বাঁধের কথা বলা হয়েছে তাও হচ্ছে না। এখন বলা হচ্ছে নোম্যান্সল্যান্ড করার জন্য তার মানে আরও ৫০ বছর। আমার ন্যায্য অধিকার যদি কেউ হরণ করে নেয় তাহলে প্রতিবাদ করবো না? গাইবান্ধায় বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে সাজা দেয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের অপরাধ তারা নাকি আন্দোলনের সময় অনেক কিছু করেছে। মামলাগুলোতে যাদের সাক্ষী আনা হয়েছিল কেউ বলেনি যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তারা জড়িত ছিল। মজার ব্যাপার হলো যাদের সাজা দেয়া হলো তাদের সম্পর্কে বিচারককে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি তো সব শুনলেন তাদের অপরাধ কি ছিল, কিভারে সাজা হলো? তিনি বললেন, আমার কিছু করার নেই। আমার হাত-পা বাঁধা। জুডিশিয়ারির হাত-পা যদি বেঁধে দেন, সাংবাদিক ভাইদের হাত-পা যদি বেঁধে দেন দেশের মানুষ যাবে কোথায়? বিএনপির কথা বাদ দেন। দেশের মানুষের কোন নিরাপত্তা আছে? সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ হত্যা করেও কাজ হবে না। দেশের মানুষ অধিকার রক্ষায় অতীতের মতো তাদের চাওয়া-পাওয়া ছিনিয়ে আনবে। তিনি বলেন, সরকার দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে ফেলেছে। দুঃখ হয় যখন প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে ফিরে এসেছেন আমরা তাকে ধন্যবাদ দিতে পারলাম না। কারণ, তিনি আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসতে পারেননি, শুধু দিয়ে এসেছেন। মিনিমাম যে পানির ন্যায্য অধিকার সেটাও পেলাম না আমরা। মমতা একেবারেই নাখোশ করে দিলেন। তিনি বলেছেন, ‘তিস্তায় কোন পানি নেই। আমি পানি দিতে পারবে না।’ আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন জিমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবীব, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাবীবুর রশিদ হাবীব প্রমুখ। যে কোন মুহূর্তে সরকারের পতন Ñদুদু ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সময় ফুরিয়ে এসেছে যে কোন মুহূর্তে এ সরকারের পতন ঘটতে পারে। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হাওড় অঞ্চলকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণার দাবিতে ‘জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করে দুদু বলেন, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ হাওড় অঞ্চলের দুর্গত এলাকা নিয়ে মন্ত্রী এবং তার সচিব ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এ জন্য আমরা তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। এ জন্য সরকারকেই সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-তথ্যগবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ। বিএনপির সিলেট জেলা কমিটি ঘোষণা আবুল কাহের শামীমকে সভাপতি এবং আলী আহম্মদকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বিএনপি কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কমিটি অনুমোদন করেছেন বলে দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানিয়েছেন।
×