ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্লাইওভারের জন্য দুর্ভোগ চান না মন্ত্রী মেয়ররা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

ফ্লাইওভারের জন্য দুর্ভোগ চান না মন্ত্রী মেয়ররা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে রাজধানীতে আর কোন উড়াল সড়ক নির্মাণের পক্ষে নন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতামত হলো, ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উড়াল সড়ক প্রকল্প নতুন করে হাতে নেয়া হবে। মগবাজার-মৌচাক প্রকল্পের জনদুর্ভোগের অভিজ্ঞতা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। নগর ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফকিরাপুল থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কের ঝিলমিল চুনকুটিয়া পর্যন্ত একটি উড়াল সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন এ ফ্লাইওভারটির রুটও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফকিরাপুল থেকে নাইটিংগেল মোড় ঘুরে বাবুবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ব্রিজের ওপর দিয়ে রাজউকের নবনির্মিত ব্রিজ হয়ে চুনকুটিয়া যাবে। অষ্টম বৈঠকে এ প্রকল্পটি কদমতলী পর্যন্ত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ঢাকার জন্য যানবাহন ও পরিবহন ব্যবস্থার নীতি কৌশল প্রণয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা ডিটিসিএর নবম বৈঠকে উড়াল সড়কটির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে কদমতলী ইন্টারসেকশন থেকে ৬৬৪ মিটার দক্ষিণে চুনকুটিয়া ইন্টারসেকশন পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদন দেয়ার আগে নতুন এ প্রকল্প জনদুর্ভোগ বাড়াবে এমন বাস্তবতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেনÑ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। দুই সিটির মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনও এর বিরোধিতা করেন। গণপূর্তমন্ত্রী মোশারফ হোসেনও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এক কথায় বললে, বৈঠকে যোগ দেয়া সবাই ফ্লাইওভারের বিরোধিতা করেছেন। একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করতেই হয় তাহলে ২০১৯ সালের পরে। এর আগে প্রকল্পটিতে হাত দিলে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলবে। এমনিতেই মৌচাকের প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে না। মানুষ বছরের পর বছর দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আবারও নতুন করে এ রকম কাজ শুরু হলে মানুষ আমাদের ভোট দেবে না। কারণ সামনে নির্বাচন রয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবেই হোক নতুন প্রকল্পের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করতে হবে। দুই মেয়র বলেন, মগবাজার-মৌচাক প্রকল্পের জনদুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এখন যা অবস্থা তাতে নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে গেলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। নতুন কোন প্রকল্প নিতে হলে ভেবে চিন্তে কাজ করারও পরামর্শ দেন তারা। একপর্যায়ে দুই মেয়র, রাজধানীতে চলা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, মেট্রো রেল প্রকল্পের মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হওয়ায় মিরপুরের সড়ক অচল হয়ে গেছে। মানুষ বারবার নানা অভিযোগ করছেন। ধুলোর কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা মহাদুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধন করছেন। আমাদের এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। এর মধ্যে সাঈদ খোকন বলেন, শহরের ভেতরে ফ্লাইওভার কেন হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রকম দেখা যায় না। শহরে থেকে বের হওয়ার পথে উড়াল সড়ক হয়। আমাদেরও একম চিন্তা করা উচিত। তিনি বলেন, নতুন প্রকল্প নিতে হলে ছোট করে করতে হবে। যাতে মালিবাগ-মৌচাকের মতো দুর্ভোগ না হয়। ভাগ ভাগ করে কাজ করতে হবে। একটি অংশের কাজ শেষ হলে আরেকটির কাজ শেষ করতে হবে। সব সময় নির্মাণকাজের অংশ বেষ্টনী দিয়ে রাখারও পরামর্শ দেন তিনি। আলোচনার পর ওবায়দুল কাদের সিদ্ধান্ত দেন, শর্তসহ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। এরপর সবাই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোড় দেন। কাজ শুরুর আগেই কিভাবে তা করা হবে এ নিয়ে পরামর্শ দেন তারা। সঠিক পরিকল্পনা করে কাজে হাত দেয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পায় বৈঠকে। বৈঠক সূত্রগুলো বলছে, মূলক রাজনৈতিক কারণে নতুন উড়াল সড়ক প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন সড়কমন্ত্রীসহ মেয়ররা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে একটি উড়াল সড়কের কাজও সময়মতো হয়নি। বছরের পর বছর কাজ ঝুলে যাওযায় মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাছাড়া দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।
×