ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দর দিবস আজ ॥ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

চট্টগ্রাম বন্দর দিবস আজ ॥ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বারখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর ১৩০ বছরে পদার্পণ করছে আজ ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার। প্রতি বছরের মতো এবারও বন্দর কর্তৃপক্ষ দিনটিকে বন্দর দিবস হিসেবে পালন করছে। এ উপলক্ষে গ্রহণ করা হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। চট্টগ্রাম বন্দরের ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে এবারের আয়োজন ব্যতিক্রমী। সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচীতে এবার নতুন সংযোজন বন্দর ব্যবহারকারী এবং সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণের দু’দিনব্যাপী ‘পোর্ট এক্সপো বাংলাদেশ-২০১৭’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৭ এপ্রিল দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই এক্সপো উদ্বোধন করবেন। বন্দর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির বাণী বাসস জানায়, এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, ‘১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তার আগে থেকেই জাতীয় উন্নয়নে এ বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় এ বন্দরের গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।’ চট্টগ্রাম বন্দরকে এতদঞ্চলের একটি আধুনিক এবং উন্নত বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমন আশা প্রকাশ করে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আগামী দিনেও চট্টগ্রাম বন্দরের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা অক্ষুণœ থাকবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ এ বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সত্তর দশকের শেষদিকে এ বন্দর কন্টেইনার বন্দরের যুগে প্রবেশ করে। ২০১৬ সালে এ বন্দর ২৩ লাখ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে, যা খুবই প্রশংসনীয়। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিগত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং লয়েড’স লিস্টের জরিপে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের মধ্যে ১১ ধাপ এগিয়ে ৭৬তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের কর্মদক্ষতা ও সামগ্রিক কার্যক্রমে এ ধরনের গতিশীলতা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর আরও সমৃদ্ধি ও দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হবে। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচীকে স্বাগত জানান এবং দিবসটির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বাণী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর হচ্ছেÑ চট্টগ্রাম বন্দর। প্রাচীনকাল থেকে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, এ অঞ্চলের সভ্যতার ক্রমবিকাশেও এ বন্দরের বিশেষ প্রভাব রয়েছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক বন্দরসমূহের সঙ্গে সংগতি রেখে উন্নত প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে এ বন্দরকে একটি বিশ্বমানের বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিক বন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বয়ংক্রিয় কন্টেইনার অপারেশন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সিটিএসএস এবং বন্দরে নিরাপদে জাহাজ যাতায়াত ও বহিঃনোঙ্গর অবস্থানকালীন জাহাজসমূহকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু করা হয়েছে। এ বন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড্ করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে এ বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহকে ব্যবহারের সুবিধা প্রদানের জন্য এ বন্দরকে আরও আধুনিক ও আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন। বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে এ বন্দর আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ কর্মসূচী বন্দর দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী শুরু হয়েছে সোমবার। এদিন বন্দর ভবন, জাহাজসমূহ এবং পুরো এলাকাকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। এ যেন এক মহাউৎসবের আমেজ। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা বিশেষ এ দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকেন। কেননা, চট্টগ্রাম বন্দর এমনই একটি সংস্থা যে সংস্থাটি কোন ধরনের ছুটি ভোগ না করে সারা বছর বিরামহীন সেবা প্রদান করে থাকে। এমনকি ঈদের ছুটিতেও শুধু নামাজের জন্য সকালের শিফট ছাড়া পুরোদমে চলে কন্টেনার এবং পণ্য ওঠানামা। দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহিনী শিরা হিসেবে বিবেচিত চট্টগ্রাম বন্দর আজ বর্ণিল আমেজে পালন করতে যাচ্ছে তার জন্মদিন, যা বন্দর দিবস হিসেবে পালিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স হাজার বছরেরও বেশি হলেও ১৮৮৮ সালকে ভিত্তি ধরে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। সে হিসেবে ১২৯ বছর পূর্ণ করে বন্দর পদার্পণ করছে ১৩০ বছরে। আগে বন্দরে আসত খোলা পণ্য। ১৯৭৭ সালে প্রথম আসে ৬টি কন্টেনার। সেই ৬ কন্টেনার থেকে শুরু হওয়া কন্টেনার হ্যান্ডলিংক্রমেই বাড়তে বাড়তে বর্তমানে হ্যান্ডলিং হচ্ছে প্রায় ২২ লাখ টিইইউএস কন্টেনার। বন্দর প্রতিনিয়ত মাইলফলক স্থাপন করছে আবার নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারের আয়োজনে রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ভোজ, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় পতাকা ও বন্দর পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিবসের কর্মসূচী। বন্দরের অর্জন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। এছাড়া ২৭ ও ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে পোর্ট এক্সপো। বন্দর কর্র্তৃপক্ষ জানায়, প্রথমবারের মতো পোর্ট এক্সপো আয়োজনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এ কাজটি অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক্সপো উদ্বোধন করবেন। বন্দর দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর মধ্যে আরও রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে সাফল্য ও কার্যক্রমের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের উপস্থাপনা, বন্দরের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক কর্মচারী পরিবারকে অনুদানের চেক প্রদান এবং ভিডিও কনফারেন্সে বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়। বন্দরের নবনির্মিত কারশেডে আয়োজিত পোর্ট এক্সপোতে বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারী এবং সংশ্লিষ্ট শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে।
×