এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার খুটাখালী বনবিটের একাধিক এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন চলে এলেও নির্বিকারের ভূমিকায় বনবিট কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে বনবিট কর্মকর্তাদের যোগসূত্র আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে উর্ধতন কর্মকর্তা এ খবর জানতে পেরে সোমবার বিকেলে এসি ল্যান্ড দিদারুল আলমের নেতৃত্বে বিজিবি, আনসার ও ফরেস্ট যৌথ অভিযান চালিয়েছে। খুটাখালী জঙ্গল এলাকা থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত বালুভর্তি ২টি ট্রাক, চারটি শ্যালো মেশিন ও বিপুল পরিমাণ পাইপ জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের খবর আগে ভাগে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বনবিট কর্মকর্তার কাছে থাকেন, এমন ব্যক্তিরা ‘দুতিয়ালী’ করায় সিন্ডিকেট সদস্যদের কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, খুটাখালী বন বিটের অধীন পাগলিবিল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। অন্তত ৩৫টি শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে ছরা থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে আশপাশের এলাকায় ভাঙন ধরেছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে সামাজিক পরিবেশ। হুমকির মধ্যে রয়েছে জীববৈচিত্র্য। শুধু পাগলিবিল ছড়া ও খুটাখালী বন বিটের জীববৈচিত্র্যই নয়, অব্যাহতভাবে অনিয়মতান্ত্রিক এ বালি উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়ি রাস্তাঘাট, মুক্তিযোদ্ধা সামাজিক বনায়ন, ২০০৭-৮ সালের বন বিভাগের সৃজিত সেগুনবাগিচা, মধুশিয়ার শত বছরের গর্জন বাগানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। প্রতিদিন এ বালি উত্তোলনের কারণে পুরো এলাকায় পরিবেশ এখন বিপন্ন। অনেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বসতবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র। নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এর সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় নেয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় বন বিট কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারদলীয় কিছু নেতা অবৈধভাবে এ বালি উত্তোলন করে চলেছে। উপরওয়ালার সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে ‘ধরাকে সরা’ ভাবেন প্রভাবশালীরা। পাগলিরবিল ছড়ার প্রায় চার কিলোমিটার আশপাশ পাহাড় ধস ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। পুরো এলাকাটি ভূমি ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বেপরোয়া বালি উত্তোলনের কারণে পাহাড় ধসের মতো ঘটনাও ঘটছে। এলাকার আশপাশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বৃষ্টিপাতে পাহাড় ভেঙ্গে বালি নেমে আসায় পাগলিবিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুরো এলাকাটি হুমকিতে পড়েছে। বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে এসব এলাকা ধসে গিয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। সরজমিনে দেখা গেছে, এ পাগলিরবিলের পাহাড়ী ছড়ার চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৩০-৩৫টি পয়েন্টে থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বালু। তারা প্রতিদিন ৩৫টি বালু উত্তোলনের বলগেট (ড্রেজার) ব্যবহার করছে। ফলে পাগলিবিলে পাহাড়ী ঢলের পানি চলাচলের একমাত্র ছড়াটি এখন ক্ষতবিক্ষত। অন্যদিকে প্রতিদিন অবৈধ বালু সরবরাহের জন্য ট্রাক চলাচলের কারণে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এক বালু ব্যবসায়ী জানান, এ ব্যবসা করতে প্রতি মাসে স্থানীয় বন বিট ও উত্তর বন বিভাগের কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসনকে মাসোহারা দিতে হয়। স্থানীয় কৃষকরা জানান, পাহাড় ভেঙ্গে তাদের চাষের জমি বালু চাপা পড়ে নষ্ট হয়েছে। খুটাখালী বিটের মেনজিয়াম বাগানের পার্শ্ববর্তী সিদ্দিকের রাস্তা এলাকায় ৮-১০ একর পাহাড়ের গাছ থেকে চাষাবাদের জমিতে পরিণত করা হয়েছে। সেগুন বাগানের পূর্ব পার্শ্বে ২০০৭-০৮ সালের আকাশমণি বাগান কেটে ৫০ একর জায়গা দখল করে নেয়া হয়েছে। সেখানে স্থানীয় সরকারদলীয় একনেতার নেতৃত্বে আম, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা বাগান করা হয়েছে। পাগলিরবিল বালুমহাল থেকে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে তাকে পদায়ন করা হয়েছে।
দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে। পাগলিরবিল কোনাপাড়া এলাকায় আকাশমণি গাছ কেটে ১০-১২টি ঘর তৈরি ছাড়াও দখল অব্যাহত রয়েছে। মধুশিয়া, ফান্ডাছড়ি, মহিষের কাটা এলাকার শত শত গর্জন গাছকাটা হয়ে গেছে। অনেক গাছের মাথাই সেখানে এখন সাক্ষী। বালুর ট্রাকে করে গাছগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। এলাকাবাসী জানিয়েছে, কর্তিত গাছগুলো ঈদগাঁও বাজারের লুতুর স’মিল এবং খুটাখালী বাজারের মিটুর স’মিলে মজুদ করা হচ্ছে। অভিযান চালালে বিপুল পরিমাণ বনের গাছ জব্দ করা সম্ভব হবে এমনটি জানান, খুটাখালী এলাকার স্থানীয়রা। খুটাখালী বিট কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে সাংবাদিকরাই এসব উদ্ভট কথাবার্তা বলে বেড়ান বলে জানান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: