ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কুসিক নির্বাচন

কাউন্সিলর প্রার্থী জেতাতে আঁতাত জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

কাউন্সিলর প্রার্থী জেতাতে আঁতাত জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৬ এপ্রিল ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে দলের বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এখনও নানা নাটকীয়তার অভিযোগ উঠছে এবং ক্রমেই বেরিয়ে আসছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোপন আঁতাতের নানান বিষয়। এমনই অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি ছেড়ে আসা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদবীধারী প্রভাবশালী এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী তার চাচাসহ তাদের স্বজনরা নির্বাচনে জয়ী হতে তলে তলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে নির্বাচনে নগরীর ২৩নং ওয়ার্ড ও বাতাবাড়িয়া ভোটকেন্দ্রে ওই ছাত্রনেতার চাচার বিজয় হলেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার শোচনীয় পরাজয় ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বাতিবাড়িয়া পুরুষ ও মহিলা ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তার এক ভাতিজা কুবি ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা কাউন্সিলর পদে জয়ের জন্য বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে তলে তলে আঁতাত করেন। বিএনপি মেয়র প্রার্থী আগের মেয়াদে মেয়র থাকাকালে ২৩নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের ওই কাউন্সিলর প্রার্থী তার ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা ও তাদের পরিবার সিটি কর্পোরেশনের ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন কাজে ভাগ-বাটোয়ারায় ভূমিকা পালন করতেন। স্থানীয়রা আরও জানান, গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ভোটের রাজনীতিতে তারা নিজের জয় নিশ্চিত করতে তলে তলে দলবল নিয়ে কাজ করেছেন বিএনপি মেয়র প্রার্থীর পক্ষে। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও তার ভাতিজা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা নিজেদের বাতাবাড়িয়া পুরুষ ও মহিলা ভোট কেন্দ্রে কাউন্সিলর পদে নিজের জয় নিশ্চিত করতে পারলেও এ কেন্দ্রে শোচনীয় পরাজয় হয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর। জানা যায়, বাতাবাড়িয়া পুরুষ ও মহিলা ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ওই কাউন্সিলর প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ৩৪৩ ভোট এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ১ হাজার ৫১৫ ভোট। ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সীমা পেয়েছেন মাত্র ৭১৬ ভোট। প্রাপ্ত ভোটের এ সমীকরণে স্থানীয়রা বলছেন- আওয়ামী লীগের ওই কাউন্সিলর প্রার্থী জয়ী হতে তার ভাতিজা কুবি ছাত্রলীগ নেতা দলবল নিয়ে মেয়র প্রার্থী সাক্কুর সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। এতে ওই কেন্দ্রে শোচনীয় পরাজয় হয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সীমার। স্থানীয়রা আরও জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ওই ছাত্রনেতা শিবিরের সাথী পদে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এক ছাত্রলীগ নেতার হাত ধরে তিনি কুবি ছাত্রলীগের পদধারী প্রভাবশালী ছাত্রনেতা বনে যান। এরপর তার নেতৃত্বে বহিরাগতরা ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর কুবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষককে মারধরের কারণে ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে তার চাচা ওই কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রভাবে ছাত্রলীগ তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বলে জানা গেছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় এবং নির্বাচন নিয়ে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে নানা নাটকীয়তা ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ নগরজুড়ে বেশ তোলপাড় চলছে।
×