ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হবে। বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার সবটুকুই এখনও সরকারের হাতে রয়েছে। বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যুত থাকলেও গ্রাহককে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অভিযোগ করে সহসা প্রতিকারও মেলে না। সেবার মান বৃদ্ধি করতে বিতরণ ব্যবস্থায় বেসরকারীকরণের দিকে ঝুঁকছে সরকার। বুধবার একটি বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা বেসরকারীখাতে ছেড়ে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা বেসরকারীখাতে বিদ্যুতের সঞ্চালনের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছি। এখন বিতরণ ব্যবস্থায় বেসরকারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এর আগেও বিদ্যুত সংযোগের জন্য সময়ক্ষেপণ এবং অহেতুক গ্রাহক হয়রানি করার জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দায়ী করেন নসরুল হামিদ। তিনি এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার তাগিদও দেন সরকারী কর্মকর্তাদের। প্রতিমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা এবং সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বুধবার বলেন, তাদের অবসরের পর মনে হয় পাঁচ গুণ বুদ্ধি বেড়ে যায়। এক সময় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা এককভাবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের হাতেই ছিল। এরপর বিতরণ ব্যবস্থার গ্রামীণ এলাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়। শহরাঞ্চলেও নতুন নতুন কোম্পানি করা হয়। এখন ঢাকার জন্য ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা নিয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা নিয়ে নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠন করা হয়। এর বাইরেও দেশের মধ্যঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করছে পিডিবি। সরকার এসব জায়গায় নতুন রাষ্ট্রীয় কোম্পানি গঠন করতে চাইলেও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বিতরণ ব্যবস্থায় নতুন কোম্পানি করা হলেও তার মালিকানা রয়ে গেছে সরকারের হাতেই। সরকারের পুরাতন লোকবল দিয়েই কোম্পানিগুলো চালানো হচ্ছে। এতে সারাদেশের গ্রাহকই হয়রানি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। তবে বিদ্যুত বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারীখাত থেকে বেসরকারীখাতে বিতরণ ব্যবস্থা সরিয়ে নেয়া একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। সরকার পিডিবির পুরো বিতরণ ব্যবস্থা কোম্পানি করে সরিয়ে নিতে চাইলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এক্ষেত্রেও শুরুতে বাধা আসবে। তবে এখনও বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কেউ এগিয়ে আসেনি। এদিকে বুধবার সামিট পাওয়ারের সঙ্গে গাজীপুরের কড্ডায় ১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে পিডিবি। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের যৌথমূলধনী কোম্পানি এ্যাটকিন এ্যালায়েন্স কাজ পায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান না করতে পারায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ সম্ভব হয়নি। পরে সামিট গ্রুপ কোম্পানির সব শেয়ার কিনে নেয়। বিদ্যুত কেন্দ্রটি হবে দ্বৈত জ্বালানির। কেন্দ্রটি ফার্নেস অয়েল (এইচএফও) থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত ৭ দশমিক ১৫ টাকায় এবং গ্যাসে ২ দশমিক ৮০ টাকায় পিডিবির কাছে বিদ্যুত বিক্রি করবে। চুক্তিতে পিডিবির পক্ষে সংস্থার সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামান এবং সামিট এইচ এ্যালায়েন্স পাওয়ার লিমিটেডের পক্ষে প্রকৌশলী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন সই করেন। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ শেষ হলে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্কে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা যাবে। একই সঙ্গে গাজীপুরের পোশাক শিল্পের মালিকরাও সাশ্রয়ী বিদ্যুত পাবেন। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুত কেন্দ্রটি ১৫ বছর ধরে সরকারের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করবে। কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে ১৫ মাসের মধ্যে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসসহ বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×