ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী আজ দিল্লী যাচ্ছেন- সম্পর্কের নবদিগন্তের আশা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ এপ্রিল ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী আজ দিল্লী যাচ্ছেন- সম্পর্কের নবদিগন্তের আশা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার চারদিনের সফরে দিল্লী যাচ্ছেন। আগামীকাল শনিবার সেখানে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীদের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-দিল্লী সম্পর্কের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হতে নয়াদিল্লীর উদ্দেশে রওনা দেবে। বাংলাদেশ বিমানের বিজি ১০৯৭ যোগে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয় বিমানবাহিনীর পালাম স্টেশনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের বিমান অবতরণ করবে। সেখানে ভারতের ভারী শিল্প ও গণপ্রতিষ্ঠান প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। আজ শুক্রবার থেকেই প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের এ সফর শুরু হচ্ছে। আগামীকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দুই বছর আগে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা ঘুরে যাওয়ার পর এবার দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের উষ্ণ এবং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের আরও অগ্রগতি হবে, বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হবে এবং দুই নেতার মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর হচ্ছে ৭ বছর পর। ২০১০ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথমবারের মতো ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজি। প্রধানমন্ত্রীর জন্য এটা একটি বিরল সম্মান বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা সাধারণত খুব কম ক্ষেত্রেই কোন দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রয়েছেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মাদ জয়নুল আবেদীন, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে গণমাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ২৫৭ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে গণমাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেনÑ দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় ও দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক আশিস ঘোষ সৈকত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করবেন। আগামীকাল শনিবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুত-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক-চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি গুরুত্ব পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল, ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। এছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠান থেকে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। এবারের সফরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন, তাদের মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সাতজন শহীদকে সম্মাননা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ৬৬১ জনকে এই সম্মাননা দেয়া হবে। ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের ব্যবসায়ীদের একটি বিজনেস ইভেন্টে অংশ নেবেন। সেই ইভেন্টে বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে। ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে যোগদানের সময় গত বছর ১৬ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সে অনুযায়ী গত বছর ১৯-২০ ডিসেম্বরে ভারত সফর ঠিক হয়েছিল। তবে হঠাৎ করেই সেই সফর পিছিয়ে যায়। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তবে সে সফরও পিছিয়ে যায়। এরপর ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সফরে এপ্রিলের প্রথমার্ধে দিল্লী সফরের বিষয়ে চূড়ান্ত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর হচ্ছেÑ মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। যদিও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর মৃত্যুর সময়ে সমবেদনা জানাতে শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লী গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচী ॥ সফরের প্রথমদিন আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৈঠক করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অর্ভ্যথনা অনুষ্ঠান ও নৈশ্যভোজে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। ওইদিন সকালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকাল সাড়ে ১১টায় হায়দরাবাদ হাউসের ডেকান স্যুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। সেখানেই দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। হায়দরাবাদ হাউসেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে হিন্দি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে হায়দরাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদির আয়োজনে ভোজে অংশগ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। দুপুর সাড়ে ৩টায় মানেকশ সেন্টারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। সন্ধ্যায় ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ হামিদ আনসারীর সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। সফরের তৃতীয়দিন রবিবার সকালে আজমির শরীফের উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে দুপুরে দিল্লী ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশ্যভোজে অংশ নেবেন তিনি। দিল্লী সফরের চতুর্থদিন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন ব্যবসায়ী কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। দিল্লী সফর শেষে বাংলাদেশ বিমানে ১০ এপ্রিল রাত ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×