ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির সিদ্ধান্ত!

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৭ এপ্রিল ২০১৭

মাশরাফির সিদ্ধান্ত!

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর গ্রহণ করলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। গুঞ্জন ছিল বাতাসে। সচরাচর ক্রীড়াঙ্গনে এটি হয়ে থাকে সর্বদাই। হয় বোর্ডের সঙ্গে মনোমালিন্য, না হয় কোচের সঙ্গে টানাপোড়েন; নিদেনপক্ষে সহখেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্কের ওঠানামা। ঘটনার পেছনে কার্যকারণ যাই হোক না কেন, মাশরাফির অবসরের ঘটনা হঠাৎ করেই, অনেকটা আকস্মিক, বলা যায় বিনা মেঘে বজ্রপাত যেন। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টসের পরপরই ধারাভাষ্যকার উপস্থাপক ডিন জোন্সকে জানিয়ে দেন মাশরাফি, বাংলাদেশের হয়ে এটাই তার শেষ সিরিজ। একই সঙ্গে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সতীর্থ, কোচিং স্টাফসহ বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। লড়াকু মনোভাবের অধিনায়ক মাশরাফির কণ্ঠস্বরটা কী এ সময় একটু কেঁপে গিয়েছিল? সত্যি বলতে কি, যে কোন বিদায়ই স্পর্শকাতর ও হৃদয়স্পর্শী। মাশরাফির এই বিদায়ী ঘোষণায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার লক্ষ কোটি ভক্ত ও দর্শক নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছেন, আবেগে হয়েছেন আপ্লুত। একজন যথার্থ খেলোয়াড়ের জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? কোন ট্রফি কিংবা পুরস্কারই এর তুল্যমূল্য নয়। বিদায় বেলায় মাশরাফিও নিশ্চয়ই তার অগণিত ভক্তের ভালবাসায় অভিষিক্ত হয়েছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটল। ২০০৬ সালের ২৮ নবেম্বর বাংলাদেশের অভিষেক টি-টোয়েন্টি দিয়েই মাশরাফির এই ফরম্যাটে খেলা শুরু। ২০১৪ সালে মুশফিকুর রহিম যখন ইনজুরিতে পড়েন, তখন এই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই নেতৃত্বে ফিরেছিলেন মাশরাফি। সে বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সীমিত ওভারের দুটি ফরম্যাটেরই অধিনায়কত্ব তুলে দেয়া হয় তার হাতে। সেই থেকে চলতি সিরিজ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত এলাকা নড়াইল থেকে উঠে এসে জাতীয় দলে ঠাঁই করে নেয়া এবং দক্ষতা ও কৃতিত্বের সঙ্গে অধিনায়কত্ব অর্জন করা আদৌ সহজসাধ্য কাজ নয়। মাশরাফির মেধা ও খেলোয়াড়ি যোগ্যতাই তাকে বর্তমানে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তবে এও সত্য যে, সবাইকেই একদিন না একদিন সরে যেতে হয়। বিদায়ের প্রাক্কালে মাশরাফি ফেসবুকে লিখেছেন, সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে উত্থান এবং পতন ছিল। ... পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছি। এই সংস্করণ আর উপভোগ করছিলাম না।... আমার পায়ের যে অবস্থা, শরীরের যে অবস্থা, তাতে আর পেরে উঠছিলাম না। বর্তমানে দলটি একটি ভালো দল এবং দলে বেশ কয়েকজন উদীয়মান খেলোয়াড় আছেন। তরুণদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়াও আমার কাজ। আর এই খানেই মাশরাফির শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব। সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি যেমন সতীর্থ খেলোয়াড়দের বুকে আগলে রেখেছেন, তেমনি স্থান করে দিয়েছেন তরুণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের। তবে সান্ত¡নার কথা এই যে, টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও মাশরাফি এখনই ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন না। সেই হিসেবে ভক্তদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মাঠে আমরা মাশরাফির সেরা খেলাটাই দেখতে চাই। একজন প্রকৃত খেলোয়াড়ই কেবল জানেন তাকে কখন থামতে হবে। বেস্ট অব লাক মাশরাফি।
×