নগরে মনোরম দৃষ্টিনন্দন ভবনের পাশেই ভাগাড়, ময়লা-বর্জ্যবস্তুর স্তূপের দৃশ্যটি সত্যিই বেমানান। যুগের পর যুগ পার হয়ে যায় ময়লা জমে জমে মহানগরের ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যায় তবুও সংস্কারের কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। আমি জানি এই সমাজের সুগন্ধ বিলাসী মানুষেরা গতরে দুর্গন্ধ দূর করতে যত না সক্রিয় ঠিক ততটাই নিষ্ক্রিয় তার চারপাশটির ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ দূরীকরণে।
সমাজবিজ্ঞানী কাউপার বলেন ‘ঈশ্বর গ্রাম সৃষ্টি করেন, আর মানুষ নগর সৃষ্টি করে’ আমি মনে করি, নগর সভ্যতার আধুনিক নাগরিক জীবনের এক বিষময় ফল হলো এই ময়লা-আবর্জনার পাহাড়, ভাগাড়, দুর্গন্ধময় বাতাস ও নোংরা নর্দমা। ভোগতৃষ্ণা নিবারণে এই সমাজের বিলাসী মানুষ কত না হাজার রকমের বস্তু সামগ্রী উৎপাদন করছে। কলে-কারখানায়। আর সেগুলোর বর্জ্য বস্তুগুলোই আমাদের প্রিয় বসবাসের জায়গাটিকে পরিবেশ দূষণে কবলিত করে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তা ছাড়া জন জীবনকে দুর্ভোগে দুর্বিষহ করে তুলছে। সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক বলের জন্য সুস্থ পরিবেশ ও বিশুদ্ধ বায়ুর বিকল্প নেই। কেননা মানুষ রুমাল দিয়ে নাক, মুখ ঢেকে দুর্গন্ধময় রাস্তা দিয়ে ডাস্টবিন ভাগাড়ের পাশ দিয়ে দম বন্ধ করে আর কতক্ষণ হাঁটতে পারে। কথায় বলে পাঁচ মিনিট দম বন্ধ করে একটা মানুষ বাঁচতে পারে না। অথচ না খেয়ে পাঁচদিন থাকতে পারে। আর মানুষকে দিনে গড়ে ২২ হাজার বার, শ্বাস গ্রহণ করে ১৬ কেজি বায়ু সেবন করতে হয়। বায়ু দূষণে কবলিত মহানগরে বিশুদ্ধ বায়ুর বড়ই সঙ্কট।
পড়ালেখা ও চাকরি খোঁজার সুবাদে মোটামুটি ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, ঢাকা তিনটি মহানগরীর পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা আবর্জনা ভাগাড় সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঢাকা কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর রেলপথে আসার সময় দেখেছি রেললাইনের উভয় পাশে মাঝে মাঝেই ময়লা-আবর্জনা তরকারির খোসা জবাই করা পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি পড়ে থাকতে এবং সেগুলোর দুর্গন্ধ চলন্ত ট্রেনে বসেও টের পাওয়া যায়। সামন্য বৃষ্টি হলে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট, রিয়াজ উদ্দিন বাজার এবং ময়মনসিংহের রেল স্টেশন রোড, ট্রাঙ্কপট্টি, গাঙ্গিনার পাড় তলিয়ে যায় এবং অনেক যাত্রী নর্দমার ও বৃষ্টির নোংরা কাদা জলে মাখামাখি করে ওঠে এ রকম দৃশ্যের কোন অভাব নেই এই মহানগরগুলোতে। তাই আমি মনে করি ময়লামুক্ত মহানগর এখন সব মহানগরবাসীর প্রাণের দাবি। যদিও আমাদের দেশটি তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ এখানে নগর ইউরোপ আমেরিকার নগর পরিকল্পনার মতো গড়ে ওঠেনি। উপরন্তু এখানে রয়েছে ভূমির আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ। কাজেই এখানে পাবলিক হেল্থ হুমকির সম্মুখীন হয়ে থাকে। তবে আমরা যদি স্বাস্থ্য বিধি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন হই তাহলে এই মহানগরগুলোকে ময়লামুক্ত রাখতে পারি।
চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে