ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার সাত প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ এপ্রিল ২০১৭

একনেকে ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার সাত প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইটি অবকাঠামো-সাইবার নিরাপত্তা আধুনিকায়ন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশী ঋণের পরিবর্তে নিজস্ব উদ্যোগে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ওই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সম্ভাব্য অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের তিন-চতুর্থাংশ। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবারের সভায় ‘রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব অর্থায়নেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। এজন্য বাইরে থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন নেই। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হবে না। তবে এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য প্রকল্পে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। তাই এটি কোন সমস্যা নয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইটি অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সাইবার নিরাপত্তা নিজেদের উদ্যোগে নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এজন্য আর্থিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার ৭ প্রকল্প অনুমোদন ॥ মঙ্গলবারের একনেক সভায় মোট ৭টি প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা সরকারী তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। বাকি ৪ হাজার ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে। মুস্তফা কামাল জানান, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে পরিত্যক্ত বসতবাড়ি সরকারের হেফাজতে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। পরিত্যক্ত এসব বসতবাড়িতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। পরিত্যক্ত এসব জমির উপযুক্ত ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে তারা সুষ্ঠু পরিবেশে বসবাস করতে পারেন। এতে তাদের কাছ থেকে আরও ভাল সেবা পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী সব জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্র অফিসে পর্যায়ক্রমে আধুনিক ভবন নির্মাণসহ অফিস আধুনিকায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। সভায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ‘শাহজালাল ফার্টিলাইজার’ শীর্ষক প্রকল্প দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে বিদ্যমান সার কারখানার নিকটবর্তী এলাকায় পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা স্থাপন, যাতে সুলভমূল্যে কৃষকদের নিকট সার সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। তিনি বলেন, সরকার এখন ইউরিয়া সারের আমদানি হ্রাস করে দেশে প্রয়োজনীয় সারের উৎপাদন করতে চায়। এ লক্ষ্যে আমরা সরকারীভাবে নতুন সার কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়েও সার উৎপাদন শুরু করব। ইতোমধ্যে সৌদি আরবের কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এখানে এ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে তিনি জানান। অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ ॥ ৪৭৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারী আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৩০৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প, ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প। এছাড়া ১১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম (চতুর্থ পর্ব) প্রকল্প, ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীরের ভাঙ্গন থেকে বিভিন্ন এলাকা রক্ষাকল্পে তীর সংরক্ষণকাজ প্রকল্প এবং ৪৩৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (রাজশাহী জোন) প্রকল্পও সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
×