ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পানগুছিতে ট্রলারডুবি ॥ স্বজনদের অপেক্ষা

আরও এক লাশ উদ্ধার ॥ নিখোঁজ ১৭

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ মার্চ ২০১৭

আরও এক লাশ উদ্ধার ॥ নিখোঁজ ১৭

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পানগুছি নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় আর এক নারীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। এনিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ জন। বুধবার দুপুরে উদ্ধার হওয়া নারীর নাম রিমা বেগম (২৩)। নিহতের পিতা পুটিখালী গ্রামের হালিম হাওলাদার তার মরদেহ শনাক্ত করেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার উত্তরে পানগুছি নদীর শ্রেণীখালি এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এর আগে, মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল থেকে মা-মেয়েসহ ওই ট্রলারে থাকা চার নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু রয়েছে। তাদের উদ্ধারে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান সরদার বলেন, নিখোঁজদের সন্ধানে বুধবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৪টি দলে ভাগ হয়ে পানগুছি নদীর বদনীভাঙ্গা থেকে ফুলহাতা পর্যন্ত তল্লাশি চালাচ্ছে। এছাড়া নৌবাহিনী দুটি ডুবুরি দল ও কোস্টগার্ড সদস্যরাও উদ্ধার চালিয়ে যাচ্ছেন। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুই পাশের ১০ কিলোমিটারজুড়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে প্রায় ৮০ যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ডুবে যায়। এর আগে মঙ্গলবার সুফিয়া বেগম (৬০), তার মেয়ে বিউটি বেগম (৩৮), নাদিরা বেগম (২০) ও সিয়ার বানুর (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান। এ ঘটনায় মঙ্গলবারই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে, বুধবার দুপুরে মোরেলগঞ্জ বাজারের কাপুড়ের পট্টি এলাকায় ট্রলারডুবির ঘটনায় মানববন্ধন করেছে এলাকবাসী। তারা পানগুছি নদীতে চলাচলকারী নৌযানগুলোর খেয়াঘাট অতিক্রম করার সময় গতি কমিয়ে চালানো এবং নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি করেন। এখনও নিখোঁজদের সন্ধানে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। উদ্ধারকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি নিজেরাও ট্রলার নিয়ে নদীতে খুঁজে ফিরছেন নিখোঁজ স্বজনদের। দুর্ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ায় নিখোঁজদের জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্বজনেরা। এখন অপেক্ষা করছেন লাশের জন্য। মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাটে বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তার ১৮ মাস বয়সী শিশু সন্তানের খোঁজে এসেছেন উপজেলার ভাসানদল গ্রামের মিজানুর রহমান খোকন। তিনি জানান, তার ভাবি সালমা বেগম (২৭) তার ছেলে সাজ্জাদকে নিয়ে মোরেলগঞ্জ বাজারে যাচ্ছিলেন। ট্রলারডুবির পর থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি। পরিবারের লোকজন লাশের খোঁজে নদীতে ঘুরছে। আরেক নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজন শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, বাগেরহাট থেকে তার ভাবি রোকেয়া বেগম ও ভাতিজা স্থানীয় রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আবির আল শামস (১৫) বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রলারডুবির পর ভাবি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভাতিজার কোন খোঁজ নেই। ট্রলার ভাড়া করে নদীতে তিনি ভাতিজার সন্ধান করছেন। মোরেলগঞ্জের চিংড়িখালী গ্রামের তবিবুর রহমান জানালেন, জমি রেজিস্ট্রি করতে স্ত্রীকে নিয়ে মোরেলগঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিসে যাচ্ছিলেন। সাঁতরে নিজে তীরে উঠতে পারলেও স্ত্রীর সন্ধান এখনও মেলেনি। নিখোঁজ হাসিব আকনের (৭) ভাই মারুফ আকন ভাইসহ চারজন ছিলেন ওই ট্রলারে। দুজন সাঁতরে তীরে উঠেছেন। নাদিরা বেগমের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু তার ভাইকে এখনও পাওয়া যায়নি। এমন নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ তাদের স্বজনদের সন্ধানে নদীর দুই পাড়ে ভিড় করছেন।
×