ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, আজ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ মার্চ ২০১৭

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, আজ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

আরাফাত মুন্না/মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে আজ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। সম্পন্ন হয়েছে সব প্রস্তুতি। রসমালাই ও খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত এই শহরের বাসিন্দার মতো সারাদেশের দৃষ্টি থাকছে কুমিল্লায়। দীর্ঘ ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনজুম সুলতানা সীমা প্রার্থী কি এই কুমিল্লার নগর প্রধানের মসনদে বসবেন, নাকি সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ধরে রাখবেন তার নগর প্রধানের আসন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখবেন, জিতল কোন প্রতীক, ‘নৌকা’, নাকি ‘ধানের শীষ’। এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজই। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোটগ্রহণ। ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পাশাপাশি কুমিল্লা টাউন হলেই ইসি স্থাপিত কন্ট্রোল রুম থেকেই ফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ৩৮ হাজার নতুন ভোটারও ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। এদিকে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে নির্বাচনী এলাকা। বুধবার সকালে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট শহরের বিভিন্নস্থানে মহড়া দিয়েছে। বিকেলের মধ্যে ১০৩ ভোট কেন্দ্রেই ভোটের সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন উপলক্ষে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ভোটারদের নির্বিঘ্ন ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। পৃথক প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা এ আহ্বান জানা। রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করছি শান্তিতেই ভোটগ্রহণ করতে পারব। তিনি বলেন, কেউ অবৈধভাবে ব্যালট পেপারে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রচারের শুরু থেকেই বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিলেন। তবে প্রচারের শেষদিন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অঘটন না ঘটায় তার সেই শঙ্কা খুব একটা আমলে নেননি রিটার্নিং অফিসার। সাক্কুর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-লের বরাবরে কয়েকটি কেন্দ্রের পুলিশ ইনচার্জ পরিবর্তনের আবেদন করা হয়। পরে রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিকে বুধবারও জনকণ্ঠের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে সাক্কু বলেন, ভোট নিয়ে একটা শঙ্কা আছে। তবে যদি নির্বাচন কমিশন নিজেদের কথা রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে তবে অনেক ভোটেই আমি জয়ী হব। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমাও জয়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করে জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ সারাদেশে যেভাবে উন্নয়ন করছে কুমিল্লায়ও সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ নৌকার প্রার্থীকেই ভোট দেবে। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। আপনারা কেন্দ্রে এসে ভোট দিন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ থেকে আনজুম সুলতানা সীমাকে এবং বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনিরুল হক সাক্কুকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। পরে ২ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন প্রার্থীরা। ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ১৪ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৫ মার্চ ১৫৮ জন বৈধ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার। ওই দিন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। সীমা ও সাক্কু ছাড়াও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আরও দুইজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে শিরীন আক্তার (তারা প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব) মামুনুর রশিদ। অন্যদিকে ২৭ ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন প্রার্থী লড়ছেন। সংরক্ষিত ৯ মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪০ জন প্রার্থী। দুই লক্ষাধিক ভোটার ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ এবং নারী ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯। ২৭ ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৩। মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৬২৮টি। নির্বাচনে ১০৩ কেন্দ্রে একজন করে ১০৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬২৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ১ হাজার ২৫৬ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। ফ্যাক্টর ৩৮ হাজার নতুন ভোটার ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার হওয়ার ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের মন জয় করতে উঠে পড়ে লেগেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী। এই ৩৮ হাজার ভোটই এবার টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে বলে মনে করেন তারা। জয়পরাজয়ে তাদের ভূমিকা থাকবে ব্যাপক। সে কারণে তাদের ওপর নজর বেশি দুই প্রার্থীর। জানা গেছে, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রথম নির্বাচনে ভোটার ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। আর এবার ৩৮ হাজার ২৯৩ জন ভোটার বেড়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জনে। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে একাধিক স্থানীয় সমাজসেবী, রাজনৈতিক, দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে নতুন ভোটারদের বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, বড় দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন। তাদের এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কুসিকের ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের মধ্যে। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে চলা কুসিক নির্বাচনে এই নতুন ভোটার একটা ফ্যাক্টর। সীমা ও সাক্কু কখন-কোথায় ভোট দেবেন ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তার বাবা প্রবীণ রাজনীতিবিদ আফজাল খানকে সঙ্গে নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা মর্ডান স্কুল (প্রাইমারী শাখা) কেন্দ্রে ভোট দেবেন। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বাবা মায়ের কবর জিয়ারত মাধ্যমে দিনের কর্মসূচী শুরু করবেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। পরে তিনি দারোগা বাড়ি মাজার ও কালিয়া ঝুড়ি মাজার জিয়ারত করে সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নবাব হোচ্ছাম হায়দার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন। যা বললেন রিটার্নিং অফিসার ॥ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও উল্লেখযোগ্য কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণও করতে পারব। সমস্ত প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১০৩ কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপার, সিল ও ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বে থাকা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও পৌঁছে গেছেন। আশা করছি কোথাও কোন সমস্যা নেই। বৈধ অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যাদের বৈধ অস্ত্র রয়েছে। এদের কারও অস্ত্রই আমরা জমা নেইনি। সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে কেউ অস্ত্র বের করবেন না, এখন পর্যন্ত কেউ বের করেওনি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, যদি কেউ তার বৈধ অস্ত্র বের করেছেন, এমন খবর পাওয়া যায় তাহলে তার ওই অস্ত্র সিজ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১০৩ ভোট কেন্দ্রই অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছি আমরা। নির্বাচনের সার্বিক মূল্যায়ন জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমরা পার করেছি। যে কোন মূল্যে শান্তিুপূর্ণ পরিবেশেই ভোটগ্রহণ সমাপ্ত করব। যদি কেউ অবৈধভাবে ব্যালটে হাত দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন রিটার্নিং অফিসার। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা কুমিল্লা ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ ৪টি বাহিনীর সাড়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন আজ। এর মধ্যে ২৭ প্লাটুন বিজিবি (৬০০ জন), র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর ৩৩৮ জন, পুলিশের ২ হাজার ৪৫৬ জন ও আনসারের ১ হাজার ৯৭২ জন সদস্য আজ নগরীতে দায়িত্ব পালন করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে ৩৬ ॥ রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল জানান, ভোটগ্রহণের সময় কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে জড়িতদের সঙ্গে সঙ্গে সাজা দেয়া হবে। এ জন্য ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ৩৬টি মোবাইল কোর্ট কাজ করবে। অপরাধকারীরা কোনভাবেই পার পাবে না। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করবে যে সঙ্গে সঙ্গেই সাজা পাবে। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ॥ ২৯ মার্চ মধ্যরাত থেকে ৩০ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, স্পীড বোট, ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোর চলাচলের ওপরও এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। ১৯ কেন্দ্রের পুলিশ কর্মকর্তা পরিবর্তন ॥ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, সদর দক্ষিণের ও কোতোয়ালি থানা আওতাধীন ১৯টা ভোট কেন্দ্রের পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। জানা গেছে, এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষ থেকে বুধবার রাতে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-লের বরাবরে আবেদন করা হয়। পরে রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ॥ এদিকে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে। নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের নির্বাচনী সমন্বয়নকারী এজেন্টদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইমরান হোসেন ইকু ও আবদুর রাজ্জাক নামে দুজনকেই ৬নং ওয়ার্ড থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান সীমা ও সাক্কুর ॥ নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক আছে উল্লেখ করে ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র আনজুম সুলতানা সীমা। বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, যে কোন পরিস্থিতিতেই যেন ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে যান। ভোটারদের উদ্দেশে বুধবার সীমা জনকণ্ঠকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। আপনারা কেন্দ্রে এসে ভোট দিন। তিনি বলেন, কারচুপির মাধ্যমে জয়ের কোন চেষ্টাও আমি করিনি। জনগণ যাকে ভোট দেবেন সেই মেয়র হবেন। এখানে জোরজবরদস্তির কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারের শেষদিন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আশা করছি, ভোটের দিনও সবাই শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দেবেন। আমি ভোটে বিশ্বাসী। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন সীমা। অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভোটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যত শঙ্কাই থাক আপনারা কেন্দ্রে আসুন, ভোট দিন। ভোটের বিকল্প কিছুই নেই। তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আমার কর্মীদের বাড়ি বাড়িতে গিয়ে পুলিশের লোকজন খোঁজাখুুঁজি করেছে। আমার কর্মীরা ঠিক মতো বাড়িতে ঘুমাতেও পারেনি। এসব কারণে ভোট নিয়ে আমার একটা শঙ্কা রয়েই গেছে। তবে যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে আমিও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। আর জয়ী হলে নিজের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার কথাও বলেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের এই প্রথম মেয়র। শঙ্কা নেই স্থানীয়দের মনে ॥ স্থানীয়দের মতে, নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার শেষ হওয়ায় ভোটারদের মনে এক ধরনের স্বস্তিও বিরাজ করছে। যদিও কুমিল্লার অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এবার ভোটের দিনটিকে ঘিরে আতঙ্কের কথাও উঠছে। তবে যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুমিল্লা র‌্যাব-১১ উপ-অধিনায়ক মেজর আশিক বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন নয়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি মডেল নির্বাচন হোক এটাই আমরা চাই। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে নেয়া হবে সব ধরনের পদক্ষেপ। তিনি বলেন, নির্বাচনের সহিংসতা এড়াতে ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয় বস্তু এবং দুটি ডগ স্কোয়াড আনা হয়েছে, তারা বিভিন্ন এলাকায় অশনি সংকেত শনাক্ত করবে। ২৩ বছর পর কুমিল্লা পুনরুদ্ধারের সুযোগ আওয়ামী লীগের ॥ স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৪ এবং ১৯৮৯ সালে সদর আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে দুইবার কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে দলীয় কোন্দল, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে কুমিল্লা নগরীতে আর আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। এর আগে ১৯৭৯ সালে আফজাল খান ভোটের ফলাফলে এগিয়ে থাকলেও জয়ী হতে পারেননি। পরে ’৮৪ ও ’৮৯ সালে বাহাউদ্দিন বাহার পর পর দুইবার কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে জয় লাভ করেন। এবার কুমিল্লায় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের কারণে দীর্ঘ ২৩ বছর পর কুমিল্লা নগরী পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। উল্লেখ্য, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের একটি সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই প্রশাসন কুমিল্লা জেলার কেন্দ্রে অবস্থিত কুমিল্লা মহানগরীর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। এই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম প্রায় ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ২৭টি ওয়ার্ড জুড়ে। কুমিল্লা মেগাসিটির মধ্যে বিস্তৃত, যার আওতায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে আগে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা নামে দুটি পৌরসভা ছিল। ২০১১ সালের ১০ জুলাই তারিখে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ জারি করে পৌরসভা দুটিকে একটি সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা দেয়। পরে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি নির্বাচনে জয় লাভ করলে তাকে আবার দলে নেয়া হয়।
×