ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন আইন

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩০ মার্চ ২০১৭

সড়ক পরিবহন আইন

জেল-জরিমানার বিধান রেখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রথম সড়ক পরিবহন আইনে যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান রাখা হয়েছে ন্যূনতম ৮ম শ্রেণী এবং সহকারীর যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পাস। পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে বয়সও বেঁধে দেয়া হয়েছে ২১ বছর। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রণীত এই আইনে তিন রকম শাস্তি দেয়া যাবে দ-বিধির অধীনে। নরহত্যা (উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে) হলে ৩০২ ধারা প্রযোজ্য হবে। যাতে শাস্তি মৃত্যুদ-। আর খুন নয় এমন ঘটনায় ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সাজা দেয়া যাবে যাবজ্জীবন। আর শুধু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য হলো ৩০৪ (খ)-এর জন্য তিন বছরের কারাদ-। এর ফলে শেষ পর্যন্ত যানবাহন মালিক ও চালকদের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সুশীল সমাজের দাবি ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সে ক্ষেত্রে তা যাবজ্জীবন না হোক, অন্তত ১৪, ১০ অথবা নিদেনপক্ষে ৭ বছরের জেল-জরিমানাসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা ছিল বাঞ্ছনীয়। তদুপরি বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার অপরাধ হবে জামিন ও আপোসযোগ্য। আগামী অধিবেশনে জাতীয় সংসদে ওঠার মধ্য দিয়ে পাস করার কথা রয়েছে আইনটি। তার মানে হলো গণদাবিকে উপেক্ষা করে পরিবহন মালিক ও চালক-হেলপারদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটল সরকার। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’- সংগঠনের তথ্যমতে, দেশে প্রতি হাজার যানবাহনে নিহতের সংখ্যা বছরে ১৬৯ জন অথচ অত্যধিক যানবাহনের দেশ জাপানে এই মৃত্যুর হার মাত্র দু’জন। শুধু ট্রাফিক আইনকানুন কঠোরভাবে মানার কারণেই জাপানে দুর্ঘটনার হার অবিশ্বাস্যভাবে কম। এর বিপরীতে বাংলাদেশে বিরাজ করছে এক নৈরাজ্যজনক অবস্থা। এখানে সারাদেশে তো বলাই বাহুল্য, এমনকি রাজধানীতেও প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে চলে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ৭ম। কোন কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। সে অবস্থায় এরকম একটি দুর্বল আইন হলে চালকরা যে আরও বেপরোয়া হবে এবং বাড়বে সড়ক দুর্ঘটনা, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সত্য বটে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেবল ড্রাইভার দায়ী নয়। বরং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ভুল সিগন্যাল, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, অসতর্ক যাত্রী ও পথচারী, সড়কের পাশে হাটাবাজার, সড়কের যথেচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদিও কম দায়ী নয়। প্রশিক্ষিত-সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন চালকেরও অভাব প্রকট। বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। সভ্য ও উন্নত হতে হলে এসব বাধাই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে পর্যায়ক্রমে। তবু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যেহেতু চালককে প্রাথমিকভাবে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, সেহেতু শাস্তির বিধান একটু বেশি রাখা হলে সে সতর্ক ও সাবধান হতে পারে। আর সতর্ক ও সাবধান হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার এমনিতেই কমে আসবে। আইনে শাস্তির বিধান কঠোর হলে সাজার ভয়েও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে বাধ্য হবে চালক। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে বর্তমানে দক্ষ চালকের অভাব প্রকট যানবাহনের তুলনায়। ৮ম শ্রেণী পাস ড্রাইভার এবং ৫ম শ্রেণী পাস হেলপার পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। এমনকি রাজধানীতেও অনেক কিশোর বয়সী চালকের সন্ধান মেলে। তাদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে পেশাদার দক্ষ চালক। তাদের শুধু গরু-ছাগল-মানুষ চিনলে হবে না, নিজেদেরও মানুষ ও মানবিকবোধসম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চালক। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।
×