ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মেন্ডিসে নির্লিপ্ত বাংলাদেশ বোলাররা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৯ মার্চ ২০১৭

মেন্ডিসে নির্লিপ্ত বাংলাদেশ বোলাররা

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৯০ রানে জিতে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডের পর শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার সনাৎ জয়সুরিয়া বুঝিয়েছেন, ‘ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।’ সঙ্গে বলেন, ‘পার্থক্য হলো আমরা স্কোর বোর্ডে রান জমা করতে পারিনি। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা রান পাচ্ছে। আমাদের স্কোর বোর্ডে রান তুলতে হবে। তখন কোন পার্থক্য থাকবে না।’ মঙ্গলবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই তা করে দেখালেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ম্যাচেই আবার বাংলাদেশ বোলাররাও ধারহীন বোলিং করলেন। এক কুশল মেন্ডিসের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সামনেই নির্লিপ্ত হয়ে ধরা দিলেন বাংলাদেশ বোলাররা। তাতে করে কুশলের ১০২ রানের সঙ্গে উপুল থারাঙ্গার ৬৫ রানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাও ৩১১ রান করে ফেলল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর বাংলাদেশ দল টস জেতার ভাগ্যে ভাসতে পারছে না। শ্রীলঙ্কা সফরে শুধু টস হারই হচ্ছে। টেস্ট সিরিজ ড্র করার পর প্রথম ওয়ানডেতেই টস হেরেও জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে যখন শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং নিল এবং সেই ব্যাটিংটা লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা ভালভাবে করল, তাতে বাংলাদেশ শুরুতেই চাপে পড়ে গেল। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও যেন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেল। বোলাররা যে একেবারেই ভাল বোলিং করতে পারেননি। অথচ প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে ৩২৪ রান জমা করার পর বাংলাদেশ বোলাররাও লঙ্কানদের চেপে ধরেছিলেন। মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। তাতে করে শ্রীলঙ্কাও ২৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই বোলাররাই যেন নিষ্ক্রিয় হয়ে রইলেন। শুরুতে মাশরাফি একটি উইকেট তুলে নেন। কিন্তু এরপর কোন বোলারই আলো ছড়াতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে শেষ ওভারে গিয়ে হ্যাটট্রিকই করলেন তাসকিন। কিন্তু শুরুতে যে নির্লিপ্ত ছিলেন তাসকিনসহ বোলাররা, তাতেই অনেকদূর এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বোঝাই গেল, শ্রীলঙ্কা পুরো পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছে। এই সিরিজে শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটাররাও দলের জন্য যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বর্তমান ক্রিকেটারদের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। কিভাবে সিরিজে ফেরা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন। জয়সুরিয়া তো এখন নির্বাচক কমিটির প্রধানই। তার সঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার, শ্রীলঙ্কা দলের এখন ম্যানেজার অশাঙ্ক গুরুসিংহে ও নির্বাচক কমিটির সদস্য রমেশ কালুভিতারানাও সবসময় দলের লক্ষ্য যেন প্রতিফলন পায়, সেই চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। দ্বিতীয় টেস্টে হারের পর থেকেই সেই চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে তার কোন ফল মিলেনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে গিয়ে শুরুতেই ব্যাটিংটা ভাল করলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। শুরুতেই ১৮ রানে একটি উইকেট শিকার করেন মাশরাফি। দানুস্কা গুনাথিলাকাকে আউট করেন। কিন্তু এরপর যেন আর কোনভাবেই উইকেট তুলে নেয়া যাচ্ছিল না। ব্যক্তিগত দুই শ’তম ওয়ানডে খেলতে নামা অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা ও কুশল মেন্ডিস মিলে বড় সংগ্রহের পথেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। মাশরাফি, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজ, তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান কিংবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত; কেউই এই দু’জনকে রুখতে পারছিলেন না। স্কোরবোর্ডে রান জমা করেই যেতে থাকেন। দু’জন মিলে দলকে ১৩০ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান। যেই দ্বিতীয় উইকেটে ১১১ রানের জুটি হয়, তখন গিয়ে আউট হন থারাঙ্গা (৬৫)। তাও রানআউট হন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত একটি থ্রোতে এই আউটটি হয়। তবে উইকেটে থাকেন মেন্ডিস। যিনি দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। টেস্টে এক ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ১৯৪। সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে এবারের টেস্ট সিরিজেই করেছেন। মেন্ডিস এবার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন। সেটিও বাংলাদেশের বিপক্ষেই করেন। তৃতীয় উইকেটে গিয়েও বড় জুটি হয়। মেন্ডিস ও দিনেশ চান্দিমাল মিলে ৮৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটে যখন ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করছিলেন, তখন মনে হয়েছে ৩২০ রানও করে ফেলতে পারে শ্রীলঙ্কা। মুস্তাফিজের বলে যখন দলীয় ২১২ রানে গিয়ে চান্দিমাল (২৪) আউট হয়ে যান, তখন মনে হয়; এবার চাপে পড়বে শ্রীলঙ্কা। এরআগেই ১০২ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করে ফেলেন মেন্ডিস। চান্দিমাল যখন আউট হন, তার ৪ রান পরে মেন্ডিসও (১০৭ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০২ রান) তাসকিনের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এ মুহূর্তে গিয়ে মনে হয়, শেষ পর্যন্ত ৩০০ রান নাও করতে পারে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু আসেলা গুনারতেœ (৩৯) ও মিলিন্ডা সিরিবার্দেনের (৩০) ব্যাটিংয়ে শুধু তিন শ’ রানই করেনি শ্রীলঙ্কা, ১১ রান বেশি করেছে।
×