ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল কমিটির আলোচনা

১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও পাওনা আদায়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৬ মার্চ ২০১৭

১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও পাওনা আদায়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণহত্যার একটি রাজনীতি ও দর্শন রয়েছে। গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাই তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে কেন গণহত্যা চালানো হয়েছিল। ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও পাওনা আদায়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের সংবিধানকে তছনছ করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। জামায়াতীকরণকে হেফাজতীকরণ দিয়ে প্রতিহত করা যাবে না, প্রতিহত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধকরণ দিয়েই করতে হবে। শনিবার রাতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ৪৭তম গণহত্যা দিবসের এক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তাদের আলোচনার পরপরই মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে ও আগুনের পরশমণি গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পীরা। অন্ধকার দূরে ঠেলে আলোকে উজ্জ্বল হতে একই সঙ্গে জ্বালানো হয় ৪৭ মশাল। পরে আলোর মিছিল ঢাবির জগন্নাথ হলে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মিছিলে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সন্তান ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি নেতারা। সমাবেশে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের শিরিন আখতার, অধ্যাপক অজয় রায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুছ, প্রজন্ম একাত্তরের শাহীন রেজা নূর, ন্যাপের পার্থ সারথী চক্রবর্তী ও মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ। কাজী মুকুলের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। শাহরিয়ার কবির বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবগুলো দূতাবাসে এবারই প্রথম জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে কেন গণহত্যা চালানো হয়েছিল। গণহত্যার একটি রাজনীতি ও দর্শন রয়েছে। গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্তদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মের নামে রাজনীতি করে ওরা শিশু কিশোরদেরও রেহাই দিচ্ছে না, শিশুদের ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা শেখানো হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে ওদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। জাতীয় গণহত্যা দিবসের অনুষ্ঠানে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সংসদ অধিবেশন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের উচিত ছিল আরও আগেই গণহত্যা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধানকে তছনছ করা হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অথচ শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদার প্রশ্ন তোলার পরপরই পাকিস্তানের এক লেখক বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বিকৃতভাবে বই লেখার সাহস দেখিয়েছে। এত অল্প সময়ে বিশ্বের কোথাও এত লোক শহীদ হয়নি। রাও ফরমানের উদ্দেশ্য ছিল সবুজ বাংলাকে রক্তে রঞ্জিত করা। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৬-৭ হাজারের মতো লোক হত্যা করা হতো। সেই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপহাস করেছেন। শহীদ ও শহীদদের সন্তানকে অপমান করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পাঠ্যসূচীতে সাম্প্রদায়িকরণ খুবই দুঃখজনক। আগামী বছর পাঠ্যসূচীতে ’৭১ সালে জামায়াতীদের যে ভূমিকা তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচার যাতে আমাদের আদালতেই হয়, সে ব্যাপারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানীদের কাছে আমাদের যে পাওনা তা আদায়ে জোরালো জনমত গড়ে তুলতে হবে। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, শহীদদের সংখ্যা নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলা হয়। অথচ জেনারেল নিয়াজীর বইয়ে বলা আছে, ঢাকা শহরে এক রাতেই ৫০ হাজার লোক হত্যা করা হয়েছিল। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ইতিহাসের এই দিনটিকে স্মরণ করার তাৎপর্য তখনই সার্থক হবে যখন মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারব। জামায়াতীকরণকে হেফাজতীকরণ দিয়ে প্রতিহত করা যাবে না, প্রতিহত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধকরণ দিয়েই করতে হবে। শিরিন আখতার বলেন, ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। দায়মুক্তি কিছুটা হলেও হয়েছে।
×