ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৫ মার্চ ২০১৭

গণহত্যা দিবস

আজ ২৫ মার্চ। ’৭১-এর এই দিনের ভয়াল রাতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন যাঁরা তাঁদের সবার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এবারের ২৫ মার্চ এসেছে নতুন বার্তা নিয়ে। এতদিন ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ছিল সর্বস্তরের মানুষের। অবশেষে দাবি পূরণ করেছে সরকার। গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। শুধু তাই নয়, মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সবার। এ লক্ষ্যে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী বলে আমরা মনে করি। আমাদের স্বাধীনতার পূর্বরাত এই ২৫ মার্চ। এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি স্মরণীয় দিন। এক ভয়াল নিষ্ঠুরতার স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত। এর পর পরই ঘোষিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চে পরিকল্পিত পন্থায় নেমেছিল বাঙালী হত্যার মহোৎসবে, নেমেছিল রক্তের স্র্রোতে বাঙালীর সব স্বপ্নকে ভাসিয়ে দিতে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালীর জীবন উৎসর্গ করার ঐতিহাসিক ঘটনার পথ ধরে এ দেশের মানুষকে পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ। এই পথের ধারাবাহিকতায় আসে ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং এসবেরই ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু নির্বাচনের এই রায় দেখে চমকে যায় পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদী স্বৈর-সামরিক চক্র। দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল ছয় দফার পক্ষে। সেই ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্সে (সোহ্্রাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দিলেন এক ঐতিহাসিক ভাষণ। সংগ্রামের পূর্বাপর ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তাঁর ওই ভাষণে ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিলেন তিনি, নির্দেশ দেন শত্রুর মোকাবেলা করার। চলতে থাকে নানা চক্রান্ত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন এবং সুকৌশলে আলোচনার নামে সৈন্য ও সমরাস্ত্র আনা শুরু করেন। এভাবে সুকৌশলে শুরু হয় কালক্ষেপণ। তারপর এক পর্যায়ে আসে ২৫ মার্চ। এই ২৫ মার্চের রাতে সশস্ত্র পাকিস্তানী বাহিনী হায়েনার মতো নেমে পড়ে গণহত্যায়। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাসভবন এবং ছাত্রদের হল, রাজারবাগ পুলিশের হেডকোয়ার্টার, ইপিআর সদর দফতর, বিভিন্ন স্টেশন ও টার্মিনালে আক্রমণ চালানো হয়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালী হত্যার উৎসব শুরু হয় ওই রাতে। ঘাতকদের প্রতি ঘৃণা এবং শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি এখন দরকার গণহত্যাকারীদের প্রকৃত পরিচয় জানা। আমরা মনে করি এজন্য প্রথমে দরকার, গণহত্যার শিকার সকল শহীদকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া। সরকার পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী এই দেশের ঘাতকদের মুক্তিযুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য শাস্তি দিয়েছে, দিচ্ছে। এখন দরকার ২৫ মার্চের গণহত্যাকারী ঘাতকদের পরিচয় এবং তাদের শাস্তি। সরকার গণহত্যা দিবস ঘোষণার মাধ্যমে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। সেই পথ ধরে ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস‘ হিসেবেও স্বীকৃতি পাবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
×