ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুফতি হান্নানের ফাঁসি যে কোন মুহূর্তে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২০ মার্চ ২০১৭

মুফতি হান্নানের ফাঁসি যে  কোন মুহূর্তে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ চাঞ্চল্যকর ১৭ মামলার আসামি মুফতি হান্নানসহ তিন জনকে ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলতেই হচ্ছে। আদালতের চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকা বাকি দুই আসামি হলেন- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন। সর্বশেষ আইন প্রক্রিয়াও শেষ। এখন সংবিধান অনুসারে শেষ সুযোগে দ-াদেশ পাওয়া আসামি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। আসামি তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকার দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবেন। তার আগে স্বজনেরা কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন। হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিনজনকে আপীল বিভাগের দেয়া প্রাণদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন রবিবার খারিজ করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপীল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রিভিউ শুনানিতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন এনকে সাহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পুলিশসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে হরকাতুল জিহাদের এই তিন জঙ্গীর দ- কার্যকরে আর কোন আইনী বাধা থাকল না। আপীল বিভাগের রায়ের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় জেলকোডসহ সব আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হুজি নেতা মুফতি হান্নানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। তিনি জানান, মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ খারিজ করে দেয়ায় এখন দ- কার্যকরে আইনগত কোন বাধা নেই। তবে বিধি অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৭ দিন পর এবং ২১ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক যে কোন দিন ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় এটি আপীলের রায়। মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে বোমা ও গ্রেনেড হামালার ১৭টি মামলা রয়েছে। এছাড়া রমনা বটমূলে নববর্ষ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় মুত্যুদ- আসামি। এ মামলায় মুফতি হান্নানসহ ৮ জঙ্গীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। মামলাটি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স এ শুনানির অপেক্ষায় আছে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালা ,কোটালীপড়ায় শেখ হাসিনার জন সভা স্থলে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, হবিগঞ্জে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকা-, সিলেটে শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরানকে হত্যা প্রচেষ্টা, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলা, খুলনায় মসজিদে বোমা হামলার মামলা, পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পাটির জনসভায় বোমা হামালার মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রমনা বটমূলে হামলার মামলাটি শেষদিকে। মুফতি হান্নান আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে আহত হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হরকাতুল জিহাদে যোগদান করেন। আপীল বিভাগের রিভিউ রায়ের ফলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নানকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রথম কোন মামলায় মত্যুদ- হতে যাচ্ছে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তিন আসামির করা আপীল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের চার সদস্যের আপীল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। এরপর মুফতি হান্নানসহ তিনজন আপীলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করেন। যা রবিবার খারিজ হয়ে যায়। এখন মুফতি হান্নানসহ তিনজন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেনÑ শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন। এছাড়া হাইকোর্টে যাবজ্জীবন কারাদ- বহাল থাকা দুই আসামি মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল আপীল করেননি। এর ফলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদ-ই বহাল রয়েছে। মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন ৪০ জন। ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের এসআই কামাল উদ্দিন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহম্মেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। ঘটনার দিন অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র প্রদান করা হলে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তভৃুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ- দেন আদালত। অন্যদিকে, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদ-াদেশ অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপীলও করেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ই বহাল রাখেন। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি চলতি বছর ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। পরে ১৩ জুলাই হাইকোর্টে দেয়া মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপীল করেন মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল। তাদের সঙ্গে আদালত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপনের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করে একইসঙ্গে তিনজনের আপীল শুনেন আপীল বিভাগ। সেই আপীলের রায়ে তিনজনেরই মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়।
×