ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বহুমাত্রিক আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপিত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৮ মার্চ ২০১৭

বহুমাত্রিক আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তির সংগ্রামে সাত কোটি বাঙালীকে ঐক্যের সুতায় গেঁথেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির মননে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার বহ্নিশিখা জ্বেলে দিয়েছিলেন জাতির জনক। তারই স্বপ্ন সংগ্রামের পথ ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। শুক্রবার ছিল স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির ৯৮তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। সকাল থেকেই রাতঅবধি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে জাতির জনককে। কোন আয়োজনে শিশুদের শোনানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর গল্প। কোথাও বা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি এঁকেছে শিশুরা। বক্তার আলোচনায় উঠে এসেছে দেশপ্রেমের আলোয় উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা। গানের সুরে কিংবা নৃত্যের মুদ্রায় নিবেদন করা হয়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। চারুকলার বকুলতলায় বঙ্গবন্ধু উৎসব ॥ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শুক্রবার শিশু দিবসে বর্ণিল হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলা। ছিল খ্যাতিমান ও উদীয়মান শিল্পীদের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা। সকাল থেকে রাত অবধি সুরে সুরে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে জাতির জনককে। পরিবেশিত হয়েছে নয়নজুড়ানো নান্দনিক নৃত্য। অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঁচ শতাধিক শিশু শিল্পীর অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সেই সঙ্গে ছিল স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে নিবেদিত আলোচনা। বঙ্গবন্ধু উৎসব শীর্ষক দিনভর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাঙালী সাংস্কৃতিক জোট। দুই পর্বের আয়োজনে উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী কোনালের গানের সুরে সূচনা হয় উৎসবের। গেয়ে শোনান ‘মুজিবুর আছে বাঙালীর অন্তরে, বাঙালীর ঘরে ঘরে’। গান শেষে উৎসবের প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। উৎসব উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দিনব্যাপী এ আয়োজনের বিকেলের পর্বে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিশু শিল্পীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি ছিল আলোচনাসভা। এ পর্বে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো’ ॥ জাতির জনকের জন্মদিনের সকালে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একক বক্তৃতা। একাডেমির বটতলায় শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনান নাট্যজন অধ্যাপক মমতাজউদ্্দীন আহমদ, কবি আসাদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, নাট্যজন লাকী ইনাম, নাট্যজন ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, কবি শামীম আজাদ এবং ডাঃ নুজহাত চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। বিকেলে একাডেমির নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু : ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক’ শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠান। এ বিষয়ে একক বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ বদরুল আহসান। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ॥ জাতির জনকের জন্মদিনে ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলা মায়ের মুক্তি এলো এমন ছেলের জন্য’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বর্ণিল আয়োজনে সাজানো দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সকালে ছিল শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১১টায় মঞ্চস্থ হয় লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা ও নির্দেশিত নাটক ‘মুজিব মানে মুক্তি’। বেলায় ১২টায় উপস্থাপিত হয় শিল্পকলা একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনা। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় তামান্না তিথীর উপস্থাপনায় শিশুদের সঙ্গে ডাঃ নুজহাত চৌধুরী ও লিয়াকত আলী লাকীর অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধুর গল্প শোন শীর্ষক অনুষ্ঠান। এরপর ছিল শিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় দেখানো হয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘দি সুজ’, ‘মাটির পাখি’, ‘মন ফড়িং’ এবং ‘রক্তজবা ও মাধো’। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে পটের গান ॥ বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় পটের গান। সেগুনবাগিচার জাদুঘর আঙিনায় বিকেলে এ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরিবেশিত হয় বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী লোকজ শিল্পীরীতিতে কবি, লেখক ও গবেষক ড. এনামুল হক রচিত, সুরারোপিত ও স্বকণ্ঠে উপস্থাপিত এবং পটচিত্রী শম্ভু আচার্য চিত্রিত ‘মহাপুরুষের অন্তর্ধান : ছহী শহীদ মুজিবনামা’ শীর্ষক পটের গান। শত শিশুশিল্পে বঙ্গবন্ধু স্মরণ ॥ হৃদয়ের ভালবাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এঁকেছে দুই শতাধিক শিশু। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের তিন থেকে পনেরো বছর বয়সী এই শিশুদের হাতের কাঁচা রঙে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় প্রকাশিত হয়েছে কচিমনে লুকিয়ে থাকা অজস্র মুজিব। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার পল্লবীর ৩২ নম্বর সড়কে আয়োজিত শিশুশিল্প উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে নজরে পড়েছে এমন দৃশ্য। পঞ্চমবারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করে সেন্টার ফর এডভান্স নারচারিং এ্যান্ড ভিজ্যুয়াল আর্ট স্টাডিজ (ক্যানভাস)। আগামী প্রজন্মের জন্য নিবেদিত ‘ক্যানভাস আর্ট ফেস্ট’ শীর্ষক আয়োজনকে এবারো নানা রঙে সাজানো হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হয় শিশুশিল্পীদের সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান। একইসঙ্গে আগ্রহীরা মেতে ওঠে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায়। সেখানে এক শিশুকে দেখা গেছে মুজিবের সাজে। দুপুরের পর শিশুদের আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনী শুরু হয়। একইসময়ে অভিজ্ঞ শিল্পীদের তত্ত্বাবধানে চারুকলার বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারী শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রঙ, কারু ও মৃত্তিকা শিল্প, স্থির ও ছাপচিত্র এবং ভাস্কর্য ও সমন্বিত শিল্পকলার সম্পর্কে জেনেছে। একইসঙ্গে তারা হাতে-কলমে শেখারও সুযোগ পেয়েছে।
×