ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বৃক্ষমানবী সাহানার মুখে শীঘ্র দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৮ মার্চ ২০১৭

বৃক্ষমানবী সাহানার মুখে শীঘ্র দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ‘বৃক্ষমানবী’ সাহানা খাতুনের (১০) মুখে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার হবে বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়কারী চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি সাহানার মুখে প্রথমবারের মতো অস্ত্রোপচার করা হয়। সফল অস্ত্রোপচার হওয়ার পর চিকিৎসকেরা আশা করছিলেন সাহানা সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের একমাসের মধ্যেই সাহানার মুখে আবারও গাছের শেকড়ের মতো উঠতে দেখা গেছে। এ জন্যই সাহানার মুখে পুনরায় অস্ত্রোপচার করে শেকড়গুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সাহানা বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটের ষষ্ঠ তলায় ‘ব্লু’ ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন জানান, ‘১৫ মার্চ সাহানার মুখে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সাহানার বাবা মেয়েকে নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। তাই এক সপ্তাহ বিলম্বে অস্ত্রোপচার করা হবে। বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের রোগের মতো অতটা গুরুতর নয় সাহানার রোগটি। আমরা ভেবেছিলাম, প্রথম অস্ত্রোপচারেই সাহানা সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু তার মুখে আবারও শেকড়ের মতো বের হয়েছে। তাই আবারও অস্ত্রোপচার করা দরকার। এবার আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। প্রথমবারের মতো এবারও বিনা খরচে এই অস্ত্রোপচার করা হবে।’ কলমাকান্দার লেগুরা ইউনিয়নের বালুচরা গ্রামের দিনমজুর শাহজাহান মিয়ার একমাত্র মেয়ে সাহানা। মাতৃহীন মেয়ে সাহানার এমন রোগ নিয়ে চিন্তিত মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব। সাহানার যখন ছয় বছর তখন ওর মা মারা যায়। আমি একজন দিনমজুর। প্রায় দেড় মাস ধরে হাসপাতালে আছি। আমার মেয়েকে দেখার মতো কেউ নেই। তাই মেয়েকে ছেড়ে যেতে পারছি না। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই মেয়ের শরীর বেশি ভাল না। কিছু খেতে চাচ্ছে না। সব সময় শুয়ে থাকে। আবারও নাকি অস্ত্রোপচার করা হবে। ভেবেছিলাম অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু আবারও সাহানার মুখে গাছের শেকড়ের মতো বের হয়েছে। ডাক্তাররা যেন দ্রুত আমার মেয়েকে সুস্থ করে দেন।’ গত ২৯ জানুয়ারি সাহানাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সাহানা খাতুনের মুখ, থুতনি, নাক, দুই কানের লতিতে বের হওয়া উপসর্গগুলো গাছের শিকড়ের মতো দেখতে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস’ নামক রোগে আক্রান্ত সাহানা। এই রোগের সূত্রপাত হয় গত বছরের মাঝামাঝিতে। ১০ বছর বয়সী সাহানার মুখে ছোট ছোট গাছের শেকড়ের মতো জিনিস দেখা যায়, তবে কিছুদিনের মধ্যেই তা বাড়তে থাকে। এর আগে বাংলাদেশে প্রথম এই রোগে আক্রান্ত হন আবুল বাজানদার নামে এক যুবক। গাছের মতো প্রায় ৫ কেজি শেকড় হয়েছিল ২৭ বছর বয়সী আবুল বাজানদার। তবে হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। সাহানাই সম্ভবত প্রথম কন্যাশিশু যে এই ‘বৃক্ষ’ রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের রোগে এর আগে কোন কন্যাশিশু, মেয়ে বা নারীর আক্রান্ত হওয়ার তথ্য তাদের জানা নেই। বেশ কয়েকজন পুরুষ রোগীর বিষয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেলেও কোন নারীর ক্ষেত্রে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
×