ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেবশ্রী চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে

ভারতের বোলিংয়ের প্রাণ অশ্বিন-জাদেজা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৭

ভারতের বোলিংয়ের প্রাণ অশ্বিন-জাদেজা

কোন কিছু প্রমাণ করার ছিল না। কিন্তু নিজেদেরই দেখানোর প্রয়োজন ছিল যে কোন পরিস্থিতিতেই ম্যাচ জিততে সক্ষম। বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চলতি সিরিজে সমতা ফেরানোর পর এ কথা বলেছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। চিন্নাস্বামীর কঠিন পিচে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার থেকে ৮৭ রানে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচের পর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিরাট বলেছেন, প্রথম টেস্টে হারের পর আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই দেখাতে চেয়েছিলাম যে, আমরা লড়াই করতে পারি। সেই ইচ্ছা ও আত্মবিশ্বাসই এই জয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। কোহলি আরও বলেন, এবার আর পেছনে ফিরে তাকাতে চায় না দল। সিরিজ জেতাটাই লক্ষ্য। ম্যাচ জয়ের লক্ষ্যে যে দুই যোদ্ধার অবদান অনস্বীকার্য তাদের দুজনেই রবীন্দ্র, যাদের তেজে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া কম্পিত। একজন রবীচন্দ্রন অশ্বিন, আরেকজন রবীন্দ্র জাদেজা। বেঙ্গালুরু টেস্ট জিতে মাঠের বাইরে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়লেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। একসঙ্গে যুগ্মভাবে আইসিসি টেস্ট ক্রমতালিকার শীর্ষে উঠে এলেন দুজনে। এর আগে কোন স্পিনার জুটি একসঙ্গে আইসিসি টেস্ট বোলারদের ক্রমতালিকায় শীর্ষস্থান দখল করতে পারেনি। সেদিক থেকে দেখলে মাঠের বাইরে জুটি হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়লেন অশ্বিন-জাদেজা। বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় টেস্টে বল হাতে ২ উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। তবে উইকেট পাওয়ার বিচারে নয়, বোলার হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এর আগে সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে দ্রুততম ২৫০ টেস্ট উইকেট নেয়ার কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন অশ্বিন। এছাড়া টেস্ট বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে কপিল দেবকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তামিলনাড়ুর এই স্পিনার। তবে এদিন রেকর্ডের খাতায় অন্যভাবে যোগ হলো অশ্বিনের নাম। ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১১টি ম্যাচে ৩ হাজার ৭০১টি বল এখনও পর্যন্ত করেছেন অশ্বিন। এক মৌসুমে এতবার হাত ঘোরানোর রেকর্ড আর কোন ভারতীয় বোলারের নেই। সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে দ্রুততম ২৫০ উইকেট রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। বেঙ্গালুরু টেস্টের আগে আইসিসি ক্রমতালিকায় অশ্বিন এক নম্ব^রে ছিলেন। তবে এই টেস্টের পরে জাদেজা অশ্বিনকে ছুঁয়ে ফেললেন। এই টেস্টে ভারত নাটকীয়ভাবে ৭৫ রানে জয় পেয়েছে। প্রথম ইনিংসে জাদেজা ৬ উইকেট নেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিন ৬ উইকেট নেন। দ্রুততম ২৫টি পাঁচ উইকেট। রেকর্ডের পর রেকর্ড করেই এখন ইতিহাসে পাতায় রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সঙ্গে ভারতের সেরা টেস্ট বোলারের তালিকায়ও ঢুকে পডলেন। পঞ্চম ভারতীয় হিসেবে টেস্টের সেরা বোলারের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেললেন তিনি। চিন্নাস্বামীতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে উঠে এলেন পাঁচ নম্ব^রে। ছাপিয়ে গেলেন কিংবদন্তি বোলার বিষেন সিং বেদিকে। চা বিরতির ঠিক আগে ম্যাথু ওয়েডের উইকেটের সঙ্গেই এই তালিকায় জায়গা করে নিলেন অশ্বিন। তখন ২৬৬ উইকেট নিয়ে একই জায়গায় ছিলেন। এরপর তাতে যুক্ত হলো আরও তিন। তার শিকারের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেন ডেভিড ওয়ার্নার, হ্যান্ডসকম্ব^, মার্শ, ওয়েড, স্টার্ক ও লিয়ঁ। বেঙ্গালুরুতে অশ্বিন শুরু করেছিল ২৬১ উইকেট নিয়ে। অসাধারণ ২০১৬ মৌসুমের সাফল্য বার বারই রেকর্ডে তুলে এনেছে তার নাম। একাধিক ব্যক্তিগত রেকর্ডের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেট র‌্যাঙ্কিংয়ের বোলিংয়ের শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে ১৩টি উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নেমেছিলেন অশ্বিন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছটি উইকেট নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পুনে টেস্টে সাতটি। তার সঙ্গে যোগ হলো আরও আট। অশ্বিনের আগে তালিকায় রয়েছেন জহির খান। তার দখলে রয়েছে ৩১১টি উইকেট। জহিরের আগে ৪১৭ উইকেট নিয়ে হরভজন সিং। ৪৩৪ উইকেট নিয়ে কপিল দেব দ্বিতীয় স্থানে। ৬১৯ উইকেট নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ অনিল কুম্ব^লে। এটি অশ্বিনের ৪৭তম টেস্ট ম্যাচ। ঘরের মাঠে তার উইকেটের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২০২। এক ম্যাচের জন্য ক্লারির রেকর্ড ছুঁতে না পেরে অশ্বিন অবশ্য মজা করে বললেন, ‘মনে হয় ক্লারি গ্রিমেত আমার থেকে ভাল মানুষ ছিলেন।’ যদিও পরে বলেন, ‘আমার মনে হয় সবটাই নিজের মতো করেই নিজের পথেই হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী এটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। গত পাঁচ-ছয় বছরে অনেক কিছু হয়েছে যার থেকে অনেক ভাল জিনিস শিখেছি। অনেক ভাল স্মৃতি রয়েছে। যদি পেছন ফিরে দেখি তা হলে মনে হয় বৃষ্টি আমার ক্যারিয়ারের সঙ্গে ঠিক করেনি। তবে আমি খুশি আজ যেখানে রয়েছি।’ অনেকের উইকেট ছিটকে দেয়ারই স্মৃতি রয়েছে তার সঙ্গে তবে তার মধ্যে রয়েছে বেশকিছু বিশেষ মুহূর্ত। বলেন, ‘কেন উইলিয়ামসন আমার ২০০তম শিকার হিসেবে খারাপ নয়। এছাড়া বেশকিছু ভাল উইকেট রয়েছে আমার তালিকায়। যেমন নাগপুরে এবি ডি ভিলিয়ার্স, এই টেস্টে দুবার কেন উইলিয়ামসন, গত বছর দুবার কুমার সঙ্গাকারার মতো উইকেট। যা আমার সারা জীবনের সঞ্চয়ের অঙ্গ। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে আমি আরও ভাল করব।’ ম্যাচ সেরা হয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। অশ্বিনের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে তিনিও ভারতের এই সাফল্যের ইতিহাসে সমান অংশীদার। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে এক উইকেট। দুই ইনিংসে অপরাজিত ৪২ ও ৫০। এই ঐতিহাসিক টেস্টে নিজের সাফল্যে খুশি জাদেজা। ‘আমি দারুণ খুশি। আমি মাঠে নেমে ব্যাট হাতে নিজের কাজটি করে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। দলীপ ফাইনাল আমাকে খুব সাহায্য করেছে। ওই ম্যাচে আমি উইকেটও পেয়েছিলাম। আত্মবিশ্বাসটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমি এই ধরনের উইকেটে বল করে অভ্যস্ত।’ বল হাতে যখন বাজিমাত করছেন অশ্বিন তখন ব্যাটে বলে সমানভাবে নিজের সেরাটা দিয়ে গিয়েছেন জাদেজা। অশ্বিনের দুই ইনিংসে উইকেট যথাক্রমে চার ও ছয়। জাদেজা বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে উইকেট সেøা হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয় আমরা উইকেটের পেসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বল করেছি। এ রকম সেøা টার্নিং ট্র্যাকের জন্য অশ্বিন খুব ভাল বোলার। ২০০ উইকেট নেয়ার জন্য অশ্বিনকে শুভেচ্ছা। ওর সঙ্গে বল করাটা খুব উপভোগ করেছি।’ অশ্বিন এবং জাদেজা ফ্যাক্টর বর্তমান সময়ে ইন্ডিয়ান স্পিন এ্যাটাকের মূল অস্ত্র এই দুইজন। তারা দুইজন যে জলন্ত দেশলাইয়ের কাঠি এটা তারা আগেও প্রমাণ করেছে এখনও করছে। তবে তাদের উঠে আসার গল্প যদি বলি তবে তাদের নেপথ্যে উঠে আসে এক চিরাচরিত ব্যক্তির নাম, তিনি হলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। কেননা এই দুইজন তারই ছত্রছায়াই মানুষ হয়েছেন। যেমন অশ্বিন গতকাল বললেন তার সাফল্যের সব কৃতিত্ব ধোনিরই আর জাদেজা তো তারই পথের পথিক। যখনই অফ ফর্মে থাকা ভাজ্েিজক উপেক্ষা করে অশ্বিনকে খেলা তো আবার অফ ফর্ম থাকা সত্ত্বেও জাদেজাকে খেলিয়ে যেত তখনই সমালোচকরা ধোনিকে একহাত নিত। কিন্তু তিনি মাহি, আসল খেলোয়াড় চিনতে ভুল করেন না তিনি জানেন তারা কখনই রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড় না। ইট ইজ মাহি স্পেশাল।
×