ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ৪ দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন ৭ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৫ মার্চ ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী ৪ দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন ৭ এপ্রিল

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ এপ্রিল চার দিনের সফরে দিল্লী যাচ্ছেন। আগামী ৮ এপ্রিল সেখানে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময়সূচী যৌথভাবে ঘোষণা করেছে। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের এই সফর শুরু হবে ৭ এপ্রিল। পরদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দুই বছর আগে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা ঘুরে যাওয়ার পর এবার দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আসন্ন এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের উষ্ণ এবং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের আরও অগ্রগতি হবে, বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হবে এবং দুই নেতার মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর হচ্ছে ৭ বছর পর। ২০১০ সালের জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো ভারতে দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে প্রস্তুতি চলছে। সফরের প্রস্তুতি হিসেবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ঢাকা সফর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বৈঠকও করেছেন। সেই বৈঠকের একদিন পরেই মঙ্গলবার দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হলো। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে কি কি চুক্তি হতে পারে সে বিষয়েও প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা-দিল্লী। তবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সামনে রেখে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, সেসব নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা-দিল্লী উভয় পক্ষ মিলেই সেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরের সময় ২০ থেকে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। প্রধানমন্ত্রীর জন্য এটা একটি বিরল সম্মান বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা সাধারণত খুব কম ক্ষেত্রেই কোন দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে ভারত। এর আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর গত ৩০ নবেম্বর দু’দিন ঢাকা সফর করেন। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে সময় ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রত্যাশা করছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যেন ভারত সফর করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত ৮-১০ নবেম্বর দিল্লী সফর করেছেন। সেখানে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে কি কি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা করেন দুই পররাষ্ট্র সচিব। ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে যোগদানের সময় গত বছর ১৬ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণেই এই সফর হবে। সে অনুযায়ী গত বছর ১৯-২০ ডিসেম্বরে ভারত সফর ঠিক হয়েছিল। তবে হঠাৎ করেই সেই সফর পিছিয়ে যায়। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তবে সে সফরও পিছিয়ে যায়। এরপর ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের সফরে এপ্রিলের প্রথমার্ধে দিল্লী সফরের বিষয়ে চূড়ান্ত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আসন্ন ভারত সফর হবে মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। যদিও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রীর মৃত্যুর সময়ে শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লী গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমনে দুই দেশ পরস্পরকে সমর্থন করে আসছে। গত বছর পহেলা জুলাই রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর মোদি এক বার্তায় শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন। অন্যদিকে কাশ্মীরের উরি হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে থাকবে বলে জানায় বাংলাদেশ।
×