ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;১২তম সাক্ষী আবদুল কাদেরের জবানবন্দী

রাজাকাররা আমার ভাই বাদশাকে গুলি করে হত্যা করেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ মার্চ ২০১৭

রাজাকাররা আমার ভাই বাদশাকে গুলি করে হত্যা করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী মোঃ আবদুল কাদের জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, রাজাকাররা আমার ভাই আবদুল বাছিত ওরফে বাদশাকে আটক করে। এর পর পাকিস্তানী আর্মিরা আমাকেও বেঁধে ফেলে। এরপর তারা আমাকে ও ভাইকে মারপিট করে বাড়ির মালামাল লুটপাট করে নিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। নির্যাতনের পর আমাকে মৃত ভেবে ফেলে যায়। পরে জানতে পারি রাজাকাররা আমার ভাই বাদশা ও নজাবত আলীকে গুলি করে হত্যা করেছে। লাশ না পাওয়ায় তাদের কবর দিতে পারিনি। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষী এ সমস্ত কথা বলেছেন। জবানবন্দীর সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবদুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আবদুল কাদের। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম দক্ষিণ খলাগ্রাম। থানা রাজনগর। জেলা- মৌলভীবাজার। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২৬/২৭ বছর। আমি লেখাপড়া জানি না। একাত্তর সালে কৃষিকাজ করতাম। বর্তমানেও কৃষিকাজ করি। একাত্তর সালের ২৯ নবেম্বর ভোর বেলা ১০০/১৫০ পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। ওই রাজাকারদের মধ্যে রাজাকার সমসুর, রাজাকার নেছার আলী, রাজাকার উজের আহম্মেদ, রাজাকার ইউনুছ আহমেদ ও রাজাকার মোকারক ছিল। ওই সময় আমি ও আমার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাছিত ওরফে বাদশা আমাদের বাড়িতেই ছিলাম। ঐ রাজাকাররা ও পাকি সৈন্যরা আমাদের ঘর থেকে আমার ভাইকে আটক করে। এবং বলে ‘মুক্তি পাইছি, মুক্তি পাইছি’। এরপর তারা আমাকেও আটক করে। আটকের পর আমাকে ও আমার ভাইকে নির্যাতন করে। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, অপহরণসহ ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ১১ জনকে অপহরণ আটক ও নির্যাতন এবং ২২টি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ। আসামি পাঁচজন হলেন শামসুল হোসেন তরফদার, মোবারক মিয়া, নেসার আলী, ইউনুস আহমেদ এবং ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী। তাদের মধ্যে ইউনুস আহমেদ ও ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের আদেশে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন তদন্ত সংস্থা। মোট ১ বছর ৩ মাস ৯ দিন তদন্ত করে ৯৮ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনসহ ২৭৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথ। এর মধ্যে রয়েছে ৮৩ পৃষ্ঠার সাক্ষীদের জবানবন্দী, ৪০ পৃষ্ঠার জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণপত্র এবং ৫৮ পৃষ্ঠার অন্যান্য ডকুমেন্টস। তদন্ত চলাকালে ৬০ জনের বেশি সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে।
×