ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পাঙ্গনে দুই ভারতীয় শিল্পীর ছাপচিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ মার্চ ২০১৭

শিল্পাঙ্গনে দুই ভারতীয় শিল্পীর ছাপচিত্র প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতবর্ষের আধুনিক ছাপচিত্রে স্বকীয়তার স্বাক্ষর রাখা দুই শিল্পী অজিত শীল ও উত্তম কুমার বসাক। আর এই দুই শিল্পীরই ছাপচিত্র শিক্ষার মূল ভীত হচ্ছে শান্তিনিকেতন। শিক্ষাজীবন শেষে বর্তমানে সেই প্রতিষ্ঠানেই চলছে তাদের শিক্ষকতার পর্বটি। দুজনেই ফিগারেটিভ কাজে দারুণ পারঙ্গম। নিজস্ব আঙ্গিকে চারপাশের চেনা জগত উঠে আসে তাদের ছাপাই ছবিতে। সেই সঙ্গে জুড়ে যায় নিজস্ব মনোভাবনা। আর এই দুই শিল্পীকে নিয়ে ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে শুরু হলো ‘ডাইভারসিটি ইন ডুয়ালিটি’ শীর্ষক প্রদর্শনী। রবিবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। দুই শিল্পীর মধ্যে অজিত শীলের ছাপচিত্র মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে নর-নারী। নর-নারীর সম্পর্ক নানাভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে তার ক্যানভাসে। একাধিক রঙের ব্যবহারের মাধ্যমে নর-নারীকে আশ্রয় করে কখনও বা চিত্রপটে মেলে ধরেছেন সমাজের সামগ্রিকতা। মুন্সিয়ানার সঙ্গে রঙের ব্যবহারে তিনি এঁকে চলেন ময়ূর, ফুল, পাখি, গাছপালা, কচ্ছপ ইত্যাদি। অন্যদিকে উত্তম কুমার বসাকের ছবিতে চারপাশের চেনা জগত। তবে সেই চেনা জগতকে তিনি দেখেন নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে। ক্যানভাসে তার প্রকাশও অনন্য ভঙ্গিতে। সীমিত রঙের ব্যবহার, পরিমিতি বোধ, চিত্রকল্প নির্মাণ সবকিছুই তাকে ছাপচিত্রে বিশেষ স্থান দিয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্যশিল্পী রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। প্রদর্শনী নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন অজিত শীল ও উত্তম কুমার বসাক। শুভেচ্ছা কথনে অংশ নেন শিল্পী রশীদ আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারির পরিচালক রুমী নোমান। উদ্বোধনী বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, এ দুই শিল্পী সম্পূর্ণভাবে ছাপচিত্রের প্রতি নিবেদিত। তাদের ভাবনার প্রকাশ ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও অনন্য। একই সঙ্গে শিল্প সৃজনে তাদের করণকৌশলেও রয়েছে ভিন্নতা। এ কারণে তাদের হাত ধরে ছাপচিত্র শিল্পের ধারা ঋদ্ধ হয়েছে। এ প্রদর্শনী নিঃসন্দেহে সবার নজর কাড়বে। মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, শুধু চোখের প্রশান্তি ছড়ানোর পরিবর্তে মনের পরিবর্তে মনকে স্পর্শ করে যাওয়ার মধ্যেই রয়েছে শিল্পের প্রকৃত স্বার্থকতা। আর শিল্পরসিকের মাঝে সেই অনুভূতি সৃষ্টি করে এই দুই শিল্পীর শিল্পকর্ম। এ কারণেই অনেকক্ষণ ধরে দর্শককে নিমগ্ন রাখতে পারে এই শিল্পী যুগলের যে কোন ক্যানভাস। রুমী নোমান বলেন, ছাপচিত্রের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের এই দুই শিল্পীর যুগলবন্দী প্রদর্শনীর আয়োজন শিল্পরসিকদের আনন্দ দেবে সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে দেশের শিল্পীরাও ভারতের এই শিল্পীদের কাজের সঙ্গে, তাদের করণ কৌশলের সম্পর্কেও ধারণা পাবেন। সে কারণেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন। প্রদর্শনীতে অজিত শীলের ২৯টি এবং উত্তম কুমার বসাকের ২১টি ছাপচিত্র স্থান পেয়েছে। এচিং, লিথো, প্ল্যাট লিথো ও প্ল্যাটোগ্রাফিতে সৃজিত মোট ৪৭টি শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলমান আয়োজনটি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিষদের নতুন কমিটি ॥ সন্্জীদা খাতুনকে সভাপতি ও বুলবুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হলো জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিষদের নতুন কমিটি। পরিষদ আয়োজিত সম্মেলনের ষড়ত্রিংশতম বার্ষিক অধিবেশনের সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে এই নতুন কমিটির ঘোষণা আসে। নতুন কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন নাসেহুন আমিন। নতুন কমিটিতে কার্যকরী সদস্য হিসেবে রয়েছেন ৬৩ জন সদস্য। তিনদিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের সমাপনী দিন ছিল রবিবার। এদিন সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রতিনিধি সম্মেলন। এতে সভাপতিত্ব করেন সন্্জীদা খাতুন। সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন লাইসা আহমদ লিসা। বিকেলে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে কিশোর ও সাধারণ বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় মানপ্রাপ্তদের সনদ ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। তবলা শিল্পী মদন গোপাল দাস ও পটশিল্পী শম্ভু আচার্য্যকে রবীন্দ্র পদক ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন খন্দকার খায়রুজ্জামামন কাইয়ুম, মনসুরা বেগম, সুস্মিতা আহমেদ, রোকাইয়া হাসিনা, এ টি এম জাহাঙ্গীর, স্বপন দত্ত, পাপিয়া সারোয়ার, মিজানুর রহমান তসলিম, শ্রেয়সী রায়, মজিবুল কাইয়ুম, তানিয়া মান্নান, অনিমেষ বিজন চৌধুরী, মিতা হক, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অদিতি মহসিন, আদৃতা আনোয়ার, সমাপ্তি রায়, হেনরি তালুকদার, লাইসা আহমদ লিসা, মহিউজ্জামান চৌধুরী, পার্থ তানভীর নভেদ্, অনিমা রায়, সালমা সাবেরা নিতু, রানা সিন্হা, দিবাকর বিশ্বাস, সেকত মুখার্জী, সেঁজুতি বড়ুয়া, ফারহিন খান জয়িতা, সিমু দে, মানসী সাধু, মামুন জাহিদ খান ও ফাহিমা সামাদ। নৃত্য পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী, সুইটি দাস ও নৃত্যনন্দন। সোমেন চন্দের হত্যা দিবসে উদীচীর পাঠচক্র ॥ প্রগতিশীল কথাসাহিত্যিক, বিপ্লবী ও প্রগতি লেখক সংঘের অন্যতম উদ্যোক্তা সোমেন চন্দ। গত ৮ মার্চ ছিল তার হত্যা দিবস। এ উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যায় পাঠচক্র আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। তোপখানা রোডের উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহসভাপতি বিমল মজুমদারের সভাপতিত্বে পাঠচক্রে প্রধান আলোচক ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ। পাঠচক্রে অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ রচিত প্রবন্ধ ‘সোমেনের গল্পে নিসর্গ’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া সোমেন চন্দের জীবনের নানা দিক নিয়েও আলোচনা করেন বক্তারা। পাঠচক্রে অন্যান্যের মধ্যে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহসভাপতি নিবাস দে, অমিত রঞ্জন দে, সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন অংশ নেন। পাঠচক্রে বক্তারা বলেন, সোমন চন্দ ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং মার্কসবাদী সাহিত্যিক। নরসিংদীতে জন্ম নেয়া সোমেন চন্দ ১৯৩৬ সালে পগোজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলেও দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন নি। ‘প্রগতি লেখক সংঘ’-এ যোগ দেয়া ছাড়াও তিনি মার্কসবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলা সাহিত্যে প্রথম গণসাহিত্যের ওপর কাজ করেন সোমেন চন্দ। ১৯৪১ সালে তিনি প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে, এই প্রগতিশীল কথাসাহিত্যিককে ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আততায়ীরা।
×