ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকুরেদের ইনক্রিমেন্ট বাড়াতে কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ মার্চ ২০১৭

সরকারী চাকুরেদের ইনক্রিমেন্ট বাড়াতে কমিটি গঠন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারী চাকুরেদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাড়াতে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটি সরকারী বেতন-ভাতায় বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করবে। মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হলে আগামী বছর থেকেই সরকারী কর্মকর্তাদের ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কমিটির সিদ্ধান্তের উপর। রবিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত এক সভায় কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া বেতন-ভাতা নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সেল গঠন করা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। সভা শেষে মুহিত বলেন, অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা করে আমরা বলেছিলাম, আর ভবিষ্যতে বেতন কমিশন হবে না। সো উই অলসো প্রমিজ, তবে এমন একটা অল্টারনেটিভ সিস্টেম করতে হবে যাতে অটোম্যাটিক্যালি ইনফ্লেশন ফ্যাক্টর ইজ টেকেন কেয়ার। সেটা নিয়ে আলোচনায় আজকে বসলাম। তিনি বলেন, আজ প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই আলোচনার উপর ভিত্তি করে আজকে ছোট্ট একটা কমিটি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের (সমন্বয় ও সংস্কার) নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট দেবে। ওই রিপোর্ট দেয়ার পর আমরা আরও চিন্তা করব এ বিষয়ে আর কি করা যায়। জানা গেছে, ৯ সদস্যের এ কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ ও পরিসংখ্যান বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের প্রতিনিধি থাকছেন। এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ভবিষ্যতে আর কোন বেতন কমিশন করা হবে না। তবে আমাদের বর্তমান কমিশনে কিছুটা সংস্কার এমনভাবে আনতে হবে যাতে গ্রাজুয়্যালি বেতন বাড়বে। এক বছর হবে, এক বছর হবে না, ডিপেন্ডিং অন সিচুয়েশন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়েই আলোচনা করা হলো। যে সেল গঠন করা হবে সেটাই যথেষ্ট হবে। মূল্যস্ফীতি এখন অনেক কম। বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা কিভাবে বিবেচনায় নেয়া হবে। মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী বেতন তো নাও বাড়তে পারেÑ এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, সামনে নাও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমানে যে সিস্টেম সেখানে ইনক্রিমেন্ট হয় ৫ শতাংশ হারে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, যদি মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশ হয় তার মানে কি বেতন বাড়বে না? আর যখন ৬ শতাংশ হবে, তখন কি বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি দেখতে হবে?’ এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব কিছু ওই কমিটি দেখবে। তাদের তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে এ সংক্রান্ত একটি ভাল সিদ্ধান্ত আসবে বলে মন্তব্য করেন মুহিত। প্রসঙ্গত, অষ্টম পে-স্কেল অনুযায়ী গত ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে বেতন আর ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। এতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারী কর্মকতা-কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করে সরকার, যাতে বেতন বাড়ে গ্রেড ভেদে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ পর্যন্ত। অষ্টম পে-স্কেলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে যোগ দেয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হয় মাসে প্রায় ২২ হাজার টাকা, যা আগের কাঠামোতে ১১ হাজার টাকা ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় এলাকা অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া এবং গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা। বর্তমান ২১ লাখ সরকারী চাকরিজীবী এই হারে মূল বেতন পাচ্ছেন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে। আর ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা কার্যকর হয়েছে। সপ্তম বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল ২০০৯ সালের ১ জুলাই। সেই সময় সরকারী চাকরিজীবীদের সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা বেসিক ধরে বেতন দেয়া হতো। ইতোপূর্বে একসঙ্গে এত টাকা বেতন ভাতা বাড়ানোর নজির দেশে নেই।
×