ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানান্তর হচ্ছে উত্তরায়

বিজিএমইএ ভবন ছয় মাসের মধ্যে ভাঙতে হবে ॥ আপীলের রায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ মার্চ ২০১৭

বিজিএমইএ ভবন ছয় মাসের মধ্যে ভাঙতে হবে ॥ আপীলের রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙতে ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। বিজিএমইএর তিন বছরের সময় চেয়ে আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ ওই ভবন ভাঙতে ছয় মাস সময় দেন। বিজিএমইএর আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ প্রদান করা হয়। শুনানিতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে আদালত যে সময়সীমা দিয়েছেন তা রবিবার থেকেই গণনা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বিজিএমইএ নতুন ভবন হতে যাচ্ছে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে। বিজিএমইএর উর্ধতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর থেকেই বিজিএমইএ বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ভবনের জন্য জায়গা খুঁজছিল। বিমানবন্দর থেকে কাছে হওয়ায় উত্তরা এলাকাই ছিল পছন্দের শীর্ষে। হাইকোর্ট এই বহুতল ভবন অবৈধ ঘোষণা করার পর আপীল বিভাগেও একই রায় বহাল থাকে। বিজিএমইএ আপীলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলে গত ৫ মার্চ তা খারিজ হয়ে যায়। এর ফলে বিজিএমইএর ভবন ভাঙতে সকল আইনী বাধা দূর হয়। অবশ্য রিভিউ খারিজ করে রায় ঘোষণার দিনই ভবন ভাঙতে কত সময় প্রয়োজন তা জানিয়ে বিজিএমইএকে ৯ মার্চের মধ্যে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেছিলেন আপীল বিভাগ। সে অনুযায়ী, ৮ মার্চ বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। গত ৯ মার্চ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১২ মার্চ দিন নির্ধারণ করেন। সে অনুযায়ী রবিবার বিজিএমইএর পক্ষে আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী তিন বছরের সময় আবেদনের ব্যাখ্যা দেন। তখন আদালত এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ও হুন্দাই চেয়ারম্যানের জেলে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, জেনুইন স্টেটমেন্ট দেন। যৌক্তিক গ্রাউন্ডে আসুন। দুটি বাড়ি ভাড়া করে অফিস স্থানান্তর করা যায় না? সরকারকে বলুন গুলশানে আপনাদের দুটি বাড়ি ভাড়া করে দিতে। অথবা আপনারা শেরাটন কিংবা সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে ভাড়া নেন। ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের ২ জুন আপীল বিভাগ তা বহাল রেখেছে। এই সময়ের মধ্যে আপনারা সরানোর কোন চেষ্টা করেননি। আদালত এরপর বিজিএমইএকে ছয় মাস সময় দিয়ে আবেদনটির নিষ্পত্তি করে দেন। এ মামলায় হাইকোর্টে এ্যামিকাস কিউরির দায়িত্ব পালনকারী এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ছয় মাসের সময় দিয়েছে। ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে বলেছে। আমরা এই আদেশে সন্তুষ্ট। আইনের হাত অনেক লম্বা। আবারও প্রমাণিত হলো, কেউ আইনী প্রক্রিয়ার উর্ধে নয়। ভবন ভাঙার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএর আপীল ২০১৬ সালের ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ। একই বছর ৮ নবেম্বর আপীলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে বিজিএমইএকে অবিলম্বে ভবন ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় রাজউককে ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে বলা হয়। তবে রাজউক ভাঙলেও খরচ বিজিএমইএকে বহন করতে হবে বলে আদালত রায়ে বলেছিলেন। রায়ের অনুলিপি প্রকাশের এক মাসের ব্যবধানে রিভিউ করে বিজিএমইএ। সেই রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে গেলে ভবন ভাঙ্গা ছাড়া এখন আর কোন বিকল্প নেই। মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ডিএইচএম মুনিরউদ্দিন। পরদিন ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া। সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়। ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে হাইকোর্টের দেয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ-টু-আপীল করে। সেই আপীল আবেদনটি গত বছর ২ জুন খারিজ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খাল পাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। রবিবার থেকেই গণনা ॥ বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে আদালত যে সময়সীমা দিয়েছেন তা রবিবার থেকেই গণনা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রবিবার রায় ঘোষণার পর এ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। উত্তরায় নতুন ভবন স্থানান্তর ॥ বিজিএমইএ নতুন ভবন হতে যাচ্ছে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর উর্ধতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর থেকেই বিজিএমইএ বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ভবনের জন্য জায়গা খুঁজছিল। বিমানবন্দর থেকে কাছে হওয়ায় উত্তরা এলাকাই ছিল পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এর মধ্যে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের একটি জায়গা ও উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের একটি জায়গা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন বিজিএমইএ নেতারা। চলতি মাসের ৫ তারিখে উচ্চ আদালত বিজিএমইএর রিট খারিজ করে দিলে সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠার জায়গাটি পছন্দ করেন তারা। তবে এখনও জায়গাটির দাম-দর চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানান বিজিএমইএর ওই কর্মকর্তা। এরই মধ্যে ভবন ইস্যুতে বিজিএমইএর সভাপতির কার্যালয়ে ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বসেন বিজিএমইএ নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, এখনও ভবনটি কীভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এ মাসের মধ্যেই উত্তরায় ভবন তৈরির জায়গা কেনার বিষয়ে সব আইনী প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, এপ্রিলের মধ্যেই ভবন তৈরির কাজ শুরু করা যাবে।
×