ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক কমিশন রিপোর্ট

হেফাজতী পাঠ্যবই উগ্র মৌলবাদী প্রজন্ম তৈরি করবে

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১১ মার্চ ২০১৭

হেফাজতী পাঠ্যবই উগ্র মৌলবাদী প্রজন্ম তৈরি করবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের মতো পাঠ্যপুস্তক থেকেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা মুছে ফেলে পাকিস্তানী উগ্রবাদী ভাবাদর্শে নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করবে হেফাজতের কথায় তৈরি করা নতুন পাঠ্যবই। নতুন প্রজন্ম এই পাকিস্তানী ধারায় শিক্ষিত হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত অন্ধকার। পাকিস্তানীদের দোষর হেফাজতীদের কথায় জেনেশুনেই সরকার যে পাঠ্যবই প্রণয়ন করেছে সে পাঠ্যবই পড়ে যে প্রজন্ম তৈরি হবে তারা হবে উগ্র মৌলবাদী জেহাদী। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, বাঙালী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তদন্তে জাতীয় নাগরিক কমিশনের রিপোর্টে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাজের প্রগতিশীল, শুভবুদ্ধি ও মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষকে এ সাম্প্রদায়িকীকরণ রুখে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে গঠিত এ নাগরিক কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করে শুক্রবার কমিশনের সদস্য, বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, লেখকসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরে বলেছেন, হেফাজতের দাবির কারণে স্কুলের পাঠ্যসূচীতে যে সাম্প্রদায়িকীকরণ হয়েছে তা থেকে সরে আসার ঘোষণা সরকারকে দিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। এখানে বাংলার বদলে যে উর্দুকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে তা রদ করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রের সব বিষয়ে বর্ণবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করার জন্য প্রয়োজনে প্রশাসনের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাঙালী জাতির ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না এবং জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না সে সব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে সংবিধান লংঘনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। হেফাজত ও জামায়াতের মতো সকল মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী সংগঠন অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থানকারী জামায়াত-হেফাজতীদের অপসারণ করতে হবে। এর আগে অতি সম্প্রতি স্কুলের পাঠ্যসূচী থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ বাদ দেয়া হয়েছে অমুসলিম ও অসাম্প্রদায়িক লেখকদের দ্বারা রচিত হওয়ার কারণে। হেফাজত-জামায়াতের মৌলবাদীরা দীর্ঘকাল ধরে পাঠ্যসূচী ইসলামীকরণের যে দাবি করছিল, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থানকারী তাদের সমর্থক আমলারা তা বাস্তবায়িত করেছেন বলে ইতোমধ্যেই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নেরও দাবি করছে। এরই এক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ অনুসন্ধানের জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীকে চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে সদস্য সচিব করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি নাগরিক কমিশন গঠন করে। যার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষেই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে ধানম-ির ডব্লুভিএ মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত সভার সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টাম-লীর সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী এবং সূচনা বক্তব্য রাখেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তদন্তে জাতীয় নাগরিক কমিশনের প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। আরও বক্তব্য রাখেন গণআদালতের অন্যতম বিচারক এবং আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তদন্তে জাতীয় নাগরিক কমিশনের সদস্য বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী ও পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তদন্তে জাতীয় নাগরিক কমিশনের সদস্য শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। সূচনা বক্তব্য লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, সংবিধানের মতো পাঠ্যপুস্তক থেকেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা মুছে ফেলে পাকিস্তানী উগ্রবাদী ভাবাদর্শে নতুন প্রজন্ম সৃষ্টির উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত করেছেন তার রাজনৈতিক ও পারিবারিক উত্তরসূরী জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া। তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে একাত্তরের পরাজিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থান করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় অর্জন মুফে ফেলে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনকে মুক্ত করতে পারেননি। পাঠ্যবই নিয়ে এখন হেফাজত জামায়াতীরা যা করছে তা নতুন কিছু নয়।
×