বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে বিএনপি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সহযোগিতা নিচ্ছে। যারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে আলিঙ্গন করে তারা নিজেদের ভবিষ্যত সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে থাকলে অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সূর্য সেন হল এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুম মুনীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ও ইসি নিয়ে বিএনপির সংশয়ের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা যদি কোন কারণে নির্বাচনে হেরেও যান, তবু তিনি জনমতকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করবেন না। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কী না। আমি হলফ করে বলতে পারি অবশ্যই নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করা নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে কমিশনের বেঁধে দেয়া টাকার চেয়ে বেশি খরচ করা কিভাবে বন্ধ করবে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সামনে দুটি অভিন্ন বিপদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক হচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অন্যটি হচ্ছে মাদকাশক্তি। আজকে আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য যারা এসব সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে আলিঙ্গন করছেন তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছেন, দেশের ক্ষতি করছেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে শিক্ষক রাজনীতিতে ছাত্ররাজনীতি এবং ছাত্ররাজনীতে শিক্ষক রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আমি বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি শিক্ষকরা ছাত্রনেতাদের তোষামোদ করছেন, খুশি করার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। ছাত্রনেতারা শিক্ষকদের রুমে এসে হুমকি দিচ্ছেন। শিক্ষকরাও এটি মেনে নিচ্ছেন। এই ছাত্রনেতাদের কাছে নিজের আত্মসম্মানবোধ বিকিয়ে দেবেন না। ছাত্রনেতাদের বিলাসী জীবনযাপনেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকাল ছাত্রনেতাদের হলের থাকার প্রবণতা কমে আসছে। আমরা যখন রাজনীতি করতাম তখন দিনে মধুতে বসে সন্ধ্যায় বিভিন্ন হলের ক্যান্টিনে যেতাম। পাশাপাশি আমরা যখন মফস্বলে প্রোগ্রামে যেতাম তখন বাস আর ট্রেনে করে যেতাম। সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে। কিন্তু আজকালের ছাত্রনেতারা বিমানে করে যাওয়ার জন্য টিকেট নিতে অনুরোধ করে। যেটা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমাদের আবার সেইসব অস্তিত্ব ও মূল্যবোধের কাছে ফিরিয়ে যেতে হবে।
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রাক্তনদের স্মৃতি রোমন্থনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবেন। এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের এ ধরনের উদ্যোগ আপনাদের নেটওয়ার্কিং আরও সম্প্রসারিত করবে। শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হৃদয়ের টানে ফিরে এসেছেন। আমরা আপনাদের সাড়া পেয়ে অভিভূত। আশা করছি হলের উন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আপনারা এগিয়ে আসবেন।
জীবনে বড় হওয়ার জন্য কঠিন পরিশ্রমের বিকল্প নেই ॥ স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, জীবনে বড় হওয়ার জন্য কঠিন পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। বড় হতে হলে অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রস্তুতি রাখতে হবে। কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার সৎ সাহস অর্জন করতে হবে। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নদীর ঢেউ। যে নদীর ঢেউ নেই সেই নদীর কোন মূল্য নেই। যে আকাশে মেঘ নেই সেই আকাশ আকাশ নয়। যে সাগরে ঢেউ নেই সেটা কোন সাগর নয়। যে প্রকৃতিতে দুর্যোগ নেই সেটা কোন প্রকৃতি নয়।
জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী ওই সব কথা বলেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ মাহ্বুবর রহমান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রমুখ।
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, কোন অবস্থাতেই মনোবল হারাবে না, নিজেকে দুর্বল ভাববে না। নিজে নিজের জীবনকে শেষ করে দেবে না। চেষ্টা করবে-লড়াই করবে, সাফল্য একদিন আসবেই। দারিদ্র্যকে- বেকারত্বকে পরাজিত করতে এরই নাম তারুণ্য।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা পরীক্ষার্থী হবে না, শিক্ষার্থী হবে। পরীক্ষার্থী হয়ে কোন রকমের সার্টিফিকেট নিয়ে কোন রকমে পরীক্ষায় পাস করবে এ শিক্ষা কোন কাজে আসবে না। তাই শিক্ষার্থী হও। শিক্ষার্থীর মতো নিজেকে গড়ে তোল, পরীক্ষার্থী নয়। জীবনে জন্য শিক্ষাগ্রহণ কর, জীবিকার জন্য নয়।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে তোমাদের বলতে চাই ‘একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সততার শক্তি। তোমরা যারা শিক্ষাগ্রহণ করছ ডিসিপ্লিনটা মেনে চলবে, বড়দের সম্মান করবে, মুরুব্বিদের সম্মান করবে, বাবা-মাকে যথাযথ সম্মান দেবে। তুমি যদি তোমার বাবা-মাকে সম্মান না দাও তুমি যখন বাবা-মা হবে তখন তোমার সন্তান তোমাকে সম্মান দেবে না। তিনি শিক্ষার্থীদের সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, একজন রাজনীতিকের জীবনে মানুষের ভালবাসার চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই। বিল বোর্ডের ছবি একদিন মুছে যাবে, পোস্টারের ছবি ছিঁড়ে যাবে, ব্যানারের ছবি ম্লান হয়ে যাবে, গেটের ছবি ভেঙ্গে যাবে, বাগানের ফুল শুকিয়ে যাবে, পাথরের ছবি নাম খয়ে যাবে, হৃদয়ে লিখা নাম রয়ে যাবে। হৃদয়ে নাম-বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু। হৃদয়ে নাম লিখেছেন বারে বারে- বেঁচে থাকবেন শেখ হাসিনা। ওই বিলবোর্ডের বড় বড় ছবি কাজে আসবে না।
নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দয়া করে ছবি প্রদর্শনের চেয়ে একটু কাজে মনযোগী হোন। নেতাদের খুশি না করে, জনগণকে খুশি করার এজেন্ডা হাতে নিন। নেতাদের খুশি করে লাভ নেই। আপনি যাদের জন্য রাজনীতি করেন তাদের খুশি করেন। আপনার যারা ভোটার তাদের আপনার খুশি করতে হবে। ভোটার যদি আপনাকে চায় আপনি আপনাকে অগ্রাহ্য করতে পারব না। আমি যদি আমার পার্টিকে ভালবাসি জনপ্রিয় ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। আমার নেত্রীর নির্দেশে সেই ভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার তিন শ’ মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা বৃত্তির দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক ও এক শ’টি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।