ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১০ মার্চ ২০১৭

কবিতা

আমাদের কথা জাহিদ হায়দার তুমি আর আমি ছাড়া আমাদের প্রেমের বিষণ্ণ ইতিহাস কেউ লিখবে না। গত সপ্তাহে তিন শ’ পাতা শেষ হলো। মনে হচ্ছে, আমাদের কাননবীথিদিন ও তৃষ্ণাকথা আরও লিখতে হবে। একটি অধ্যায়ের নাম : ভোরের মৌনপ্রীতিলতা’; আর এক অধ্যায়ের : শস্যলগ্ন চুম্বন।’ কতটুকু লিখলে তুমি? পুনঃপাঠে মনে হচ্ছে, ‘বৃষ্টির রাতে আনন্দপর্ব’ আর ‘অপূর্ণবিলাস’ নামের দুটি অধ্যায় আবার লিখতে হবে। ১০.০২.২০১৭ ** প্রদীপের সখ্য অনীক মাহমুদ বহুদিন রাতের আঁখিতে অশ্রুপ্লাবী স্বপ্ন মেখে প্রদীপের ভরম্ভর ভাদ্র বধূর মতোন জনান্তিকে শুনেছি নিবেশ খোলা বিরহের গল্প। কাঁটার সভঙ্গ বৃন্ত ছোঁয়া ফুলের ফোয়ারা যেন নৈঃসঙ্গ্যের হরীতকী ইচ্ছে মন্ত্রে নির্বাসন চায়! কতোজন পুষ্প বিলাসীর লালসাকে মুখ্যব্রত ভেবে দিনরাত নিজের সারল্য দায়বদ্ধের উপোল কলাবৃত্তে উপচার পুঞ্জীভূত করে তুমুল দুক্ষোভে ফেটে পড়ে! সদানন্দ, আকাশটাকে হাত দিয়ে যদি বিভক্ত করতে পারো যদি পারো পঞ্চাঙ্গুলের সৌষ্ঠবে রোধ করতে সূর্যের আলো সময়ের গোপালক রক্ষাপাল হতে পারবে মহাঢ্য ঐন্দ্রজালিক, অলৌকিক জোনাকির জীবনচক্রের টোলে হতে পারবে কোনো বা স্মার্তপ-িতের ডামি মিথ্যার ম্লানিমা ঢাকতে পারবে এমনটা যশঙ্কর সত্যকথা আমাদের ঝোলায় বাড়ন্ত, ধৈর্যের খিলানে অপরিমেয় আলোকলতা সন্ধ্যার সীমানা রাতের কণ্ঠিতে, নিশান্তক নতজানু ভোরের উন্মিদে শামাদানী শিখা আর তলার বন্ধুত্ব আলো আর অন্ধকার, কাঁটা আর বৃন্ত পরিজ্ঞাত সদানন্দ, ওই হ্যানিমান বেচারাকে দানবসিদ্ধির পথে বলে দিতে পারো সৌহার্দ্য- সম্প্রীতি অন্তঃস্তল পরিবাহী রূপোলি আগুনে দ্যুতিময়! মাৎসর্য তিমিরের ফাঁদে পা দিলে তাবৎ মানবিক বৃক্ষসন্ধি হারায় যৌবন প্রদীপের সখ্য হয়তো বাঁধতে পারে শিখা-সলতেই গাঁটছড়া তলার আঁধার পারে না ছড়াতে সাবর্ণির দিশে দিশে হার্দ্য সন্দীপন... ** একুশের অগ্নিস্মৃতি হাসান হাফিজ বর্ণমালা এখনো রক্তের দাগ তোমার শরীরে রক্তরংই লাবণ্য ও অহং তোমার এত ক্রোধ তোমার নিভৃত বুকে এত দ্রোহ এতটা বারুদ কীভাবে সঞ্চিত ছিল অগ্নিবীজ এত বোঝবার উপায় ছিল না- আপাতনিরীহ শান্ত নির্বিরোধ স্বভাব তোমার ছিল- আঘাতে জাগ্রত হলে অনশ্বর রুদ্রতাপে জ্বলে উঠলে দুর্বাসার মতো যখনই আক্রান্ত হই শত্রুর বিরুদ্ধে আমি, আমরা এই বঞ্চিতেরা স্বাভাবিক নিয়মেই জ্বলে উঠতে জানি সেই অগ্নি স্বতঃস্ফূর্ত, প্রকৃতিরই মতো সহজিয়া স্বৈরাচার পুড়ে ভস্ম অমন স্বপ্ন ও সাধ শুধু এই ছোট জনপদে কেন থাকবে সীমায়িত? খুলেছে অর্গল মাতৃভাষা দিবসের রক্তঝরা অঙ্গীকার গর্ব হোক বিশ্বমানবের সানন্দ সম্পদ হোক বিশ্বমানবের... ** স্পার্কটাকাস সৈয়দ রফিকুল আলম হলিউড অভিনেতা ইয়েল ব্রাইনারের পৌরাণিক একটি ছবির সিকোয়েন্স ছিল এ রকম : তোমরা দোর্দ- রাজন্য প্রবৃত্তে দাসদের প্রতি শিকলে বাঁধা অনড় মানুষের প্রতি খড়্গ চালাতে দ্বিধা করো না, রক্তের নহর ভাটি টানে নিম্নে ধাবিত হয়, রক্ত লেলুপে মত্ত তোমরা অসুরেরা হৈ হৈ উল্লাস ধ্বনিতে মদমত্তে উদযাপন করো। আজ আমি তোমাদের ইচ্ছায় নিপতিত হবো না- তোমাদের মধ্যে কে আছো বীর, এসো, যুদ্ধ হোক, হয় বাঁচব নয় মরবো...। আমরাও একটি সময় নিষ্পেসিত ছিলাম, সেই বীর পুরুষ অলৌকিক সন্তানের সুমধুর কণ্ঠ শৈলীতে জেগে উঠলাম, হাতে অস্ত্র নিলাম, ভূখ-ব্যাপী পোড়াগন্ধ, মা বোনের আব্রু লাঞ্ছিত, সমুদ্র সম রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলো। সে বিবর্তনশীল কণ্ঠাকাকীর্ণে না গিয়েও বলা যায় আসলে কি দেশমাতৃকার স্বর্ণ সন্তানেরা কি আজও নিরাপদ? খা-ারকের মতো জিঘাংসা প্রবৃত্তে বর্ণ বিভেদ ওঠে আসে নিম্ন থেকে চর্বিসার স্বার্থপর লোভাতুরের আধিক্যে। ক্ষুদ্রতম আয়ের যাদের হয়তো এতটুকু মাথা খোঁজার ঠাঁই আছে কিংবা নাই, হয়তো বা আশ্রয় ধর্মশালায়। কূটবুদ্ধি স্বার্থপর লোভাতুর মানুষের ঘৃণিত ইচ্ছে জাগে নিরীহ পরিযায়ী পাখিদের আশ্রয়ের ভিটে বাড়ি মারদাঙ্গা সন্ত্রাসে দখলীভুক্ত করতে, বিবেক বর্জিত বিভীষণদের মনে ন্যূনতম অনুতাপ নেই, আছে কূট কাটব্যে নাট্যশালার নৈব্যক্তিক সংলাপে মাটি ভিজানোর অপচেষ্টা...। যাদের অবদান সর্বাগ্রে এ দেশের আলো বাতাস-শ্বাস প্রশ্বাসের, আজ তারা সব হারিয়ে সারমেয় স্বরূপ গাছ তলায় শিশু সন্তানসহ খড়কুটো ঘাস পাতা খেয়ে অনিশ্চল অদৃশ্য আড়ালে। স্বাধীনতা প্রত্যেক জনমানুষের স্বাধিকার : জাতির জনক বলেছিলেন’ কোন মানুষ গৃহহীন হবে না-না খেয়ে মরবে না’ তা যে জনকের কন্যা দৃঢ়ভাবে অক্লান্তে অনুসরণ করছেন তা শুধু হাওয়াই ফানুস নয়, স্বতঃসিদ্ধে সত্য তবু কেন কালো ভূতের ডেড়ায় লুকে থাকা ভিজে বেড়ালের ক্যাঙ্গারু আস্ফালন? ** মূর্তিমান অন্যকিছু গোলাম কিবরিয়া পিনু রাংতা ও অন্যান্য উজ্জ্বল পাত দেখে পা রেখো না! পূর্বাঞ্চলে সূর্য না উঠেও জখমি আলোতে শুকনো খেজুরের লোভে শিস্জাত ধ্বনি কণ্ঠে ধারণ করো না! বাতাবি লেবুর গন্ধেÑ ত্রিকোণ তাঁবুতে প্রবেশ করো না- মন ছুঁয়ে গেলে ফিরতে পারবে না কৃত্রিম আলোর উস্কানিতে! ঝকঝক করা লোকও এ-সংসারে সভ্য নয় দূরের গাছের তলায় যে জোয়ান দাঁড়িয়ে আছে সেও মূর্তিমান অন্যকিছু হতে পারে। ** হরিৎ বর্ণমালা মুহাম্মদ ফরিদ হাসান কথারা বুনে গেছে স্বপ্নের মুখ, সোনালী ধান আর ‘মা’ ডাকের লোভে প্লে-কাড হাতে আমার পূর্বপুরুষ পকেটে রেখেছে হরিৎ জীবন, অনাগত সব বসন্ত। অক্ষরের সাথে অক্ষর মিলে হয় জীবন শব্দের সাথে শব্দ জুড়ে ওড়ে শাড়ি, গাঁয়ের বধূ- পাতায় পাতায় জড়িয়ে থাকে বাংলা বর্ণমালা আর আমার পূর্বপুরুষ বুকে রেখে তাজা বুলেট, মলিন হেসেছে, মুখে তাঁর ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান। রক্তে রক্তে লাল হয়ে হয় খরস্রোতা নদী আমি বাঙালী, এমন সহস্র নদী দেহে আমার পরাণে হরিৎ বর্ণমালা।
×