ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বরেকর্ড- ইতিহাস গড়ে শেষ আটে বার্সিলোনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১০ মার্চ ২০১৭

বিশ্বরেকর্ড- ইতিহাস গড়ে শেষ আটে বার্সিলোনা

জাহিদুল আলম জয় ॥ অবিশ্বাস্য, অলৌকিক, অনন্য, অনবদ্য কোন বিশেষণই যথেষ্ট নয়। যে দোর্দা- প্রতাপে বার্সিলোনা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে তা রূপকথার গল্পকেও যেন হার মানিয়েছে। বুধবার রাতে ইউরোপ সেরার আসরের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে কাতালানরা ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ফরাসী চ্যাম্পিয়ন প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইনকে (পিএসজি)। বার্সার জয়ের ব্যবধানটা বিস্ময়কর নয়। বিস্ময়কর এ কারণেই, এই বার্সাই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে প্যারিস থেকে এক হালি গোল হজম করে এসেছিল। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, শেষ আটে এক পা দিয়ে রেখেছে পিএসজি। কথাটার ভিত্তিও ছিল। কেননা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসেই এর আগে ছিল না কোন দলের চার গোল করে পরের লেগে ফিরে আসা। মানে ব্যবধানটা ঘুচিয়ে জয় দিয়ে পরের পর্বে যাওয়ার। কাজটা করতে হলে ইতিহাস ও বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে। কিন্তু দলটার নাম যেহেতু বার্সা, অসাধ্য কিংবা অসম্ভব কিছুই নয়। যাদের বলা হয় নান্দনিক ফুটবলের পূজারি। দলে আছেন সময়ের তিন সেরা তারকা লিওনেল মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ। এ কারণেই হয়নি বলে কোনদিন হবে না, এমনটা তো নয়। অসাধ্য সেই কাজটিই করে দেখিয়েছে বার্সা। রেকর্ডের সব পাতাই ওলট-পালট করে দিয়েছেন লুইস এনরিকের শিষ্যরা। গুণে গুণে পিএসজির জালে ছয় গোল দিয়েছে তারা। জয়ের ব্যবধান ৬-১ গোল। দুই লেগ মিলিয়ে বার্সার জয় ৬-৫ গোলে। ঘরের মাঠ ন্যুক্যাম্পে ম্যাচের শুরুতে হয়তো মেসিরাও ভাবেননি যে তারা পরের রাউন্ডে উঠতে পারবেন। তবে চেষ্টা করতে দোষ কী? সেটা করতে গিয়ে তৃতীয় মিনিটেই গোল করেন সুয়ারেজ। শুরুর এই গোলটিও ছিল দেখার মতো, উত্তেজনাকর। একবার গোলমুখ থেকে ফিরে আসার পর সুয়ারেজের ফিরতি শটও পিএসজির একজন ডিফেন্ডার ফিরিয়ে দেন গোলমুখ থেকে। কিন্তু ততক্ষণে দেখা যায় বল গোললাইন অতিক্রম করেছে। ম্যাচের ৪০ মিনিটে লেভিন খুরজাওয়ার আত্মঘাতী গোলে দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সা। বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে আরও মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে কাতালানরা। লক্ষ্যের দিকে তারা একধাপ এগিয়ে যায় ৫০ মিনিটে মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করলে। এই গোলটি নিয়ে অতিথিরা আপত্তি জানায়। ডি বক্সের মধ্যে পিএসজির একজন খেলোয়াড় পড়ে গিয়েছিলেন, তার গায়ের ওপর গিয়ে পড়েন নেইমার। তাতেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান জার্মান রেফারি ডেনিজ আইটকিন। মাঠেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন অতিথি ফুটবলাররা। তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর আরেকটি গোলের জন্য হন্যে হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। কেননা আরেকটি গোল পেলেই অন্তত ম্যাচটিকে অতিরিক্ত সময়ে নেয়া যাবে। কিন্তু ৬২ মিনিটে এডিনসন কাভানি পিএসজির হয়ে চোখ ধাঁধানো গোল করলে সব স্বপ্নই যেন ফিকে হয়ে যায়। কেননা তখন ব্যবধান হয় ৩-১। আর বার্সাকে পরের পর্বে যেতে হলে তখন গোল করতে হবে আরও তিনটি। এমন দুরূহ লক্ষ্যে মুহুর্মুহু আক্রমণ শাণাতে থাকে এনরিকের শিষ্যরা। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছিল না। বরং পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল পেতে পারত পিএসজি। কাভানি ও ডি মারিয়া গোলরক্ষককে একা পেয়েও ব্যর্থ হন। তারা কাজে লাগাতে পারলে হয়ত বার্সার ইতিহাস গড়া হতো না। এভাবেই ম্যাচ এগিয়ে যায় শেষক্ষণে। কিন্তু ম্যাচের দুই মিনিট বাকি থাকতে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে আসে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। শুরুটা করেন নেইমার। ৮৮ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে অসাধারণ গোল করে ব্রাজিলিয়ান তারকা ব্যবধান করেন ৪-১। এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তখন ৯১ মিনিটে আবারও পেনাল্টি পায় বার্সা। এবারের সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্কের ঢেউ উঠেছে। সুয়ারেজ ডি বক্সের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যান, রেফারি বাঁজান পেনাল্টির বাঁশি। স্পট কিক থেকে নেইমার গোল করে ব্যবধান করেন ৫-১। অবাক ব্যাপার কি জানেন? এই গোলের পরও দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান হয় ৫-৫। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাঠে গোল করার সুবাদে শেষ আটে চলে যাবে পিএসজিই। কিন্তু তা হতে দেননি সার্জেই রবার্টো। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে (৯৫ মিনিট) চলতি বলে পা ছুঁয়ে অবিশ্বাস্য গোল করেন তিনি। তাতেই গোটা ন্যুক্যাম্প উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে যায়। কেননা দুই লেগ মিলিয়ে প্রয়োজনীয় গোল যে হয়ে গেছে বার্সার। এই গোলটিও মানতে পারেনি অতিথিরা। তাদের দাবি, গোলটি করার সময় স্পষ্ট অফসাইড ছিলেন রবার্টো। একই রাতে ‘ভুল’ শুধরে দুরন্ত এক হ্যাটট্রিক করেছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের গ্যাবনিজ স্ট্রাইকার পিয়েরে ইমেরিক আউবামেয়াং। তাতে শেষ আট নিশ্চিত হয়েছে তার দলের। শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে বেনফিকাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে সিগন্যাল ইদুনা পার্কের দলটি। প্রথম লেগে লিসবনে গিয়ে ১-০ গোলে হেরেছিল ডর্টমুন্ড। কিন্তু রিটার্ন লেগের জয়ে ৪-১ ব্যবধানে পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয় ‘দ্য ইয়োলো থান্ডার’দের।
×