ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যন্ত্রদানব নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৯ মার্চ ২০১৭

যন্ত্রদানব নিয়ন্ত্রণে

যখন দানব যন্ত্রে নাকি মানুষের মনে লুকায়িত এই প্রশ্ন নিয়ে ওঠে ঝড়। তখন সে দানবকে নিয়ে শুরু হয় তর্ক-বিতর্কের। প্রয়োজন পড়ে সে দানবকে রুখে দেয়ার। সে যন্ত্রদানব নিয়ন্ত্রণে কয়েক দফায় আইনের খসড়া হয়েছে ২০১২, ২০১৩, ২০১৫ এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে সড়ক ও পরিবহন আইনের খসড়া প্রদান করা হলেও তা কর্যকরে দেখি না কোন উদ্যোগ। আইনের শাসনবলে, সড়ক পরিবহন আইন কতটুকু কার্যকর হবে তা আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে প্রশ্ন! একটি আইন হয়েছে যে আইনে নেই কোন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান। আইন যখন কঠোর হয়, তখন আইন ভঙ্গে অপরাধীও একবার ভাবে। তবে আইন যখন নমনীয়, সে আইন পড়ে থাকে এক কোনে। ‘সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৬’ আইনটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান নেই। ওই আইনের ৪৯ ধারায় বলা হয়েছে সকল সড়ক-দুর্ঘটনার মামলা হবে জামিন ও আপোসযোগ্য। প্রশ্ন আসে মনে, আমার নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুতে, স্কুলগামী বোন-ভাইদের মৃত্যু কিভাবে আপোস যোগ্য হয়? আমি চাইলেই পারব না তাদের ফিরিয়ে আনতে। তবে তাদের বিদেহী-আত্মার, শেষ চাওয়াটা পূরণ না করে, করতে হবে আমাকে আপোস! কে বলতে পারে! সে চালক বা হেলপার যখন জামিনে বের হবে, তার অবহেলায় পুনরায় একই অপরাধ সংগঠিত হবে না! না, আমি আইনবিরোধী নই; নই আইনের সমালোচক। আমি আইনের পক্ষপাতী, যে-আইন বিপুলসংখ্যক মানুষ মান্য করে, যাচ্ঞা করে। এ তো গেল চালক বা দানবের নিয়ন্ত্রণকারীর কথা। আমরা যারা সে দানবের মুখের গ্রাস! আমাদের কি নেই কোন দায়িত্ব! একটি শহর ‘ঢাকা’র চলমান কথাই ধরি। পাঁচ-দশ মিনিট হাঁটার পথের পর রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। আমরা যারা সকাল-সন্ধ্যায়, ব্যস্ততা বা তাড়াহুড়ার কথা বলে ওভারব্রিজে না উঠে ট্রাফিক থামিয়ে রাস্তা পার হতে যাই! দুর্ঘটনা কি ঘটে না সেখানে! যারা আমরা হিসাবি! না পকেটের হিসাবের কথা বলিনি, সময় হিসাবি! বাসে উঠলে আমাদের সময়-সচেতনতা যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যদি একটু সময় নিয়ে আগে বের হই! তাহলে কি বাসচালককে তাড়া দিতে হয়! কত দুর্ঘটনা ঘটে যায় প্রতিদিন এই রাজপথে সবই কি চালকের অবহেলা! একজন চালক সেও ‘মানুষ’, তার দায়িত্ব যেমন সঠিক স্থানে আপনাকে-আমাকে পৌঁছে দেয়ার। তার সঠিক দায়িত্ব নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ির চাকা পরিচালনা করা। বরং যাত্রীদের অকথ্য ভাষাতে প্ররোচিত হয়ে যখন গাড়ির গতি বাড়তে থাকে, আপনার জীবন-গতির মিটার ততটাই ঝুঁকিতে পড়ে। প্রায় দেয়াল বা বিলবোর্ডে দেখি ‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।’ তবে কেন আপনার-আমার একটু সচেতনতায় সুন্দর হবে না আমাদের জীবনটা! একটু সচেতনতায় বেঁচে যাবে যেমন আমাদের জীবন নামের প্রদীপটা। তেমনি রুখে দেয়া যায় এই যন্ত্র-দানবদের। তবে সচেতনতা শুরু হোক আপনার-আমার থেকে। বাসে ঝুলে না গিয়ে, একটু অপেক্ষা করে যাওয়াটাই ভাল। ট্রাফিক থামিয়ে না, বরং ফুটওভার ব্রিজ বা জেব্রা ক্রোসিং ব্যবহারে চলার পথ হোক সুন্দর। চালককে দ্রুত গতিতে চালানোর প্ররোচনা নয় বরং নিরুৎসাহিত করা তখনি সম্ভব, যখন আপনি-আমি হব সময় সচেতন। কারণ সময় সচেতনতা দুর্ঘটনা কমায়। সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা থেকে
×