ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছরেও খোঁজ মেলেনি বেনাপোল পৌর প্যানেল মেয়র তুহিনের

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৮ মার্চ ২০১৭

চার বছরেও খোঁজ মেলেনি বেনাপোল পৌর প্যানেল মেয়র তুহিনের

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ বেনাপোলের পৌর প্যানেল মেয়র ও ছাত্রলীগ নেতা তুহিন নিখোঁজের চার বছর পার হলেও নিখোঁজের কোন রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। আসলে তুহিন বেঁচে আছে নাকি চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেছে- এ কথা কেউই বলতে পারছে না। তুহিনের পরিবার এখনও পথচেয়ে আছে কখন তাদের সন্তান বাড়ি এসে মা-বাবা বলে ডাকবে। এছাড়া তুহিনের স্ত্রী আর কোলের সন্তান এখনও পথচেয়ে বসে আছে স্বামী আর পিতার অপেক্ষায়। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে কিছুই বলছেন না। তুহিন নিখোঁজের পরের ঘটনা আরও লোমহর্ষক। বিভিন্ন মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে একটি চক্র ‘তুহিন তাদের কাছে আছে’ এই ফাঁদ পেতে তুহিনের স্ত্রীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তুহিনকে তো ফিরে পায়নি, উপরন্তু তার কাছে থাকা ও ধারদেনা করে আরও কয়েক লাখ টাকা হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ স্ত্রী সালমা বেগম। আদরের ছোট ছেলে তুহিন নিখোঁজের দুই বছর পর ছেলের কোন খোঁজ না পাওয়ায় সন্তান হারানোর বেদনা নিয়ে তুহিনের পিতা ২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল রাতে মারা যান। তুহিনের মাও শয্যাশায়ী। তারিকুল আলম তুহিন (৩৮) ছিলেন বেনাপোল পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা নগরের ন্যাম ভবনের যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বাসা (এমপি হোস্টেল) থেকে নিচে নামার পরপরই নিখোঁজ হন তুহিন। নিখোঁজের চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। গুম হওয়া অনেক নেতার মতো তুহিনও স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছেন। তুহিন বেনাপোল পৌরসভার ভবারবেড় গ্রামের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি মৃত ডাক্তার ইউসুফ আলমের ছেলে। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ও প্যানেল মেয়র তারিকুল আলম তুহিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে মেয়র ও তুহিনের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এদিন রাতে র‌্যাব তুহিনের বাড়িতে হানা দেয়। পরদিন ৪ মার্চ সকালেই তুহিন ঢাকায় চলে যান। সেখানেই অবস্থান করতে থাকে তুহিন। তুহিন নিখোঁজের সময় স্ত্রী সালমা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নিখোঁজের ২০ দিন পর তিনি পুত্রসন্তানের মা হন। অপেক্ষায় ছিলেন তুহিন বাড়ি ফিরলে ছেলের নাম রাখবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন না আসায় ছেলের নাম রাখা হয় তুমুল আলম। তুহিনের মা, স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা তুহিনকে ফিরে পাওয়ার আশায় এখনও পথচেয়ে আছেন। চার বছরেও তাকে ফিরে না পাওয়ার ফলে অসহায় পরিবারটির বোবাকান্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। তুহিনের স্ত্রী সালমা আলম জানান, চার বছরেও আমার স্বামীর সন্ধান কেউ দিতে পারেনি। জীবিত হোক আর মৃত হোক আমি তুহিনকে চাই।
×