ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নীতিমালায় পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ মার্চ ২০১৭

একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নীতিমালায় পরিবর্তন আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে গত বছরের জটিলতার অভিজ্ঞতার কারণে এবার নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অনলাইনে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় আসবে এ পরিবর্তন। ভর্তিতে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পছন্দের এক কলেজ নির্বাচন করে দিতে পারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। তবে শিক্ষার্থীরা গত বছরের মতো এবারও ১০টি কলেজকেই পছন্দের তালিকায় রাখতে পারবে। সেই পছন্দের তালিকা থেকে একটি কলেজ নির্বাচন করে দেয়া হবে। নির্বাচিত কলেজেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে। তবে কেউ যদি ওই কলেজে থাকতে না চায় তাহলে তাদের ভর্তির পর মাইগ্রেশনের সুযোগ থাকবে। মাইগ্রেশন করে তারা মেধার ভিত্তিতে অন্য কলেজে ভর্তি হতে পারবে। সোমবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে নতুন এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাও উদ্যোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। চেয়ারম্যানরা বলেছেন, আগের বছর একেক শিক্ষার্থীকে ১০টি করে কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থী এর মধ্যে যত কলেজেই মনোনীত হোক সেখানেই তাকে রাখা হয়। ফলে একেকজন শিক্ষার্থীর নাম ১০টি কলেজের তালিকায় চলে আসে। অথচ তারা একটি কলেজে ভর্তি হওয়ায় বাকি কলেজে আসন ফাঁকা পড়ে থাকে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ মেধাবীরাই একেকজন অসংখ্য কলেজে মনোনীত হওয়ায় কিছুটা কম মেধাবীরা প্রথমে কোন কলেজেই মনোনীত হয়নি। বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলছেন, আগের জটিলতা এবার এড়াতে চায় বোর্ডগুলো। তবে যাতে কোন জটিলতায় পড়তে না হয় সেজন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি কলেজ পছন্দ করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনই চূড়ান্ত নয়। বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তাদের সায় থাকলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো একাদশ শ্রেণীতে অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতি চালু হয়। ওইবার শিক্ষার্থীদের পাঁচটি কলেজ পছন্দের সুযোগ দেয়া হয়। সেখান থেকে একটি কলেজ নির্বাচন করে দেয়া হয়। কিন্তু সে সময়ে সফটওয়্যার জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। পরে একাধিক মেধাতালিকা করে সেই পরিস্থিতির সামাল দিতে হয়। এরপর গত বছর সেই পদ্ধতি তুলে দিয়ে ১০টি কলেজ পছন্দের সুযোগ দেয়া হয়। আর শিক্ষার্থীদের ১০টি কলেজেই মেধাক্রম তৈরি করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের যে কোন কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। এবার আবারও কিছুটা ২০১৫ সালের পদ্ধতিতে ফিরে আসছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। একটি কলেজ নির্বাচন করে দেয়ার বিষয়ে বোর্ডগুলো একমত। সভায় উপস্থিত একজন চেয়ারম্যান জানান, অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতির বিশ্বব্যাপী সিস্টেম একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে দেয়া। আমরাও সেভাবে শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রথমবার সফটওয়্যার জটিলতার কারণে দ্বিতীয়বার সে পদ্ধতি থেকে ফিরে আসা হয়। গত বছর দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থীর যখন ১০টি কলেজে মেধাক্রম থাকে তাকে তখন ১০টি কলেজে খোঁজ নিতে দৌড়াতে হয়। অনেকেই নিশ্চিত না করে একাধিক কলেজে ভর্তি হয়। একটি কলেজে আসন খালি হলে অন্য কলেজ থেকে এসে ভর্তি হতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই এবার একটি কলেজ পছন্দ করে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীর যদি ওই কলেজ পছন্দ না হয় তাহলে সে মাইগ্রেশনের জন্য অনলাইনে আবেদন করবে। মেধা অনুযায়ী তার কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। সম্প্রতি শেষ হয়েছে এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা। এখন ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছে। এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ বা মে মাসের প্রথমে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। মে মাসেই অনলাইনে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। আসনসংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। তবে সরকারী কলেজের সংখ্যা ৩২৯টি। এরমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক রয়েছে ৩০০টি কলেজে। আর এতে একাদশ শ্রেণীর আসনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। রাজধানীতে ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে প্রায় ৫০ হাজার। এরমধ্যে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাহিদামতে ভাল মানের কলেজ আছে প্রায় ৩০টি। আসনসংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন। শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে আসনের কোন সঙ্কট না থাকলেও ভালমানের কলেজের সঙ্কট রয়েছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই পছন্দের কলেজ প্রায় একই।
×