ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপ লাইন নির্মাণ পেছাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ মার্চ ২০১৭

ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপ লাইন নির্মাণ পেছাচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ সম্ভাব্যতা জরিপ ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপ লাইন নির্মাণ পিছিয়ে যাচ্ছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডের (ইআইএল) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পাইপ লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করে উল্টো আরও সময় চেয়েছে ঠিকাদার কোম্পানি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, তাদের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে কাজ শেষ না হলে সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আর্থিক প্রস্তাব (আরএফপি) চাইবে বিপিসি। বিপিসির পরিচালক (পরিচালন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক এ প্রসঙ্গে শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা তাদের আল্টিমেটাম দিয়েছি। আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন না দিলে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। এর পর আমরা সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা পাঁচটি কোম্পানির কাছ থেকে আর্থিক প্রস্তাব চাইব। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নৌপথে পরিবহন করে বিপিসি। ঢাকায় জ্বালানি তেলের সিংহভাগ বিক্রি হয়। এ খাতে ট্রানজিট লসসহ বিপিসির ব্যয় হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে ট্যাঙ্কার ঢাকায় আসতে সময় লাগে প্রায় ২৮ থেকে ৩৬ ঘণ্টা। মাঝে মাঝেই তেল পরিবহনকারীদের ধর্মঘটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও তেল পরিবহনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে ব্যাপক চুরির অভিযোগ রয়েছে। পাইপ লাইন হলে এই সমস্যাও দূর করা সম্ভব। এতে আর্থিক সাশ্রয়ের সঙ্গে তেল পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করা হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা জরিপ না হওয়ায় মূল কাজ শুরু পিছিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ দেয়ার আগেই সরকার সম্ভাব্যতা জরিপ চালায়। এতে মূলত প্রকল্প ব্যয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। প্রকল্প ব্যয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা না পাওয়া গেলে প্রকল্পের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিপিসি প্রাথমিকভাবে তেল সরবরাহ পাইপ লাইনের জন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) পাইপ লাইনের ব্যয় হিসেবে প্রতি কিলোমিটার ২ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। এতে ২৫০ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এর বাইরে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ খরচ। তবে এই হিসেবটি পাঁচ বছরের পুরনো। এখন লাইন পাইপের ব্যয় কিছুটা বেড়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে কতগুলো ব্রিজ ও কালভার্ট রয়েছে। এছাড়া জমির দামসহ অন্যান্য খরচ সম্ভাব্যতা জরিপ শেষে চূড়ান্ত হতো। কিন্তু এখন এই প্রকল্প ব্যয় সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট নয় বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের দূরত্ব ১৮১ নটিক্যাল মাইল। এ দূরত্ব অতিক্রম করতে তেল পরিবহন করা নৌযানের সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। প্রতি টন জ্বালানি পরিবহনে পুরনো ট্যাঙ্কারগুলোকে প্রতি নটিক্যাল মাইলে বিপিসি পরিশোধ করে ৩ দশমিক ৮৪ টাকা। আর নতুন ট্যাঙ্কারকে পরিশোধ করে টন প্রতি নটিক্যাল মাইলে ৩ দশমিক ৩২ টাকা। পাইপ লাইন নির্মাণ করা হলে এই ব্যয় আর হবে না। সূত্র মতে বিপিসি প্রকল্পের ‘প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই প্রস্তাব’ ২০১৫ সালের ২২ জুন জ্বালানি বিভাগে পাঠায়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রস্তাবটি নতুনভাবে তৈরি করে একই বছরের আগস্টে আবারও পাঠানো হয়। ওই বছরের নবেম্বরে প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগের আগ্রহপত্র চাইবার অনুমোদন দেয় জ্বালানি বিভাগ। আগ্রহপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১৮ প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়। ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (ইআইএল) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় এই কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু প্রায় দুই বছর নানা প্রক্রিয়া পরিচালনা করেও তেল পাইপ লাইনটির চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা জরিপ তৈরি করতে পারেনি বিপিসি। প্রাক সম্ভাব্যতা জরিপ মতে চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল সরবরাহে পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২৫০ কিলোমিটার। পাইপলাইনটি দিয়ে মূলত পতেঙ্গার জ্বালানি তেল ডিপো থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত ডিজেল সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি একটি বৈঠকে কেন সম্ভাব্যতা জরিপ চালাতে এত সময় প্রয়োজন হলো তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি কেন কাজ শেষ করতে দেরি করল তার কৈফিয়ত চাইতে নির্দেশ দেয়া হয়। প্রসঙ্গত তেল পাইপ লাইনটি নির্মাণের জন্য আগ্রহী পাঁচটি কোম্পানিকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে এখনও সম্ভব্যতা জরিপ প্রতিবেদন না পাওয়ায় দরপ্রস্তাব চাওয়া যাচ্ছে না।
×