ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা ছাড়া নির্বাচন নয়-মহল বিশেষের এই চক্রান্ত সফল হবে না ॥ ইনু

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ মার্চ ২০১৭

খালেদা ছাড়া নির্বাচন  নয়-মহল বিশেষের এই চক্রান্ত সফল হবে না ॥ ইনু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র ও সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং দেশে অস্বাভাবিক সরকার এনে জঙ্গী-যুদ্ধাপরাধী-দুর্নীতিবাজদের বাঁচানোর কৌশল হিসেবে ‘বেগম জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না’ বলে যে আস্ফালন, যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে তা সফল হবে না। কোন দিনও না। এদেশের মানুষ এরকম ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেই। শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, বাঙালী-বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও সংবিধানের পথেই থাকবে। যথা সময়েই সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশবিরোধী, জাতিবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, জঙ্গী, জঙ্গীসঙ্গী, আগুনসন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে কোন আপোস হবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাঙালী জাতির হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাসের মহানায়ক বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক অগ্নিঝরা মার্চ মাসের কারিগর, কুশিলব, নায়ক সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ, আ স ম আব্দুর রব, স্বপন চৌধুরী, মার্শাল মনি, শাজাহান সিরাজসহ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ তথা ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াসের’ সদস্যদের অগ্রণী ও বীরত্ব ভূমিকার কথা জাতি কোন দিন ভুলবে না। ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ গণতন্ত্র-অসাম্প্রদায়িক-শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চ মাসে ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও অসহযোগ ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লক্ষ্যে উত্থিত জাতির আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব সূচিত হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ, ৯ মার্চ বঙ্গবন্ধুর প্রতি সমর্থন জানিয়ে মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৯ মার্চ জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে বাঙালী অফিসার ও সিপাহীদের বিদ্রোহ, ২৩ মার্চ সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। ২৫ মার্চ বাঙালী জাতির উপর পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতম ক্র্যাক ডাউন ও গণহত্যা, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা এবং বাংলাদেশকে দখলদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। অগ্নিঝরা মার্চের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর স্মরণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে নগরীর কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর জাসদের সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে দলীয় সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। বক্তব্য রাখেন জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আখতার, নাদের চৌধুরী, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা মোঃ আনোয়ারুল হক, ঢাকা মহানগর পূর্ব জাসদের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শাহ আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহাম্মেদ, শ্রমিক নেতা কাজী সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন প্রমুখ। হাসানুল হক ইনু বলেন, বাঙালী জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার হাজার বছরের স্বপ্ন ও সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। যারা মুক্তিযুদ্ধকে নিছক সামরিক যুদ্ধ বা ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ হিসাবে চিহ্নিত করে তারা বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসকে অস্বীকার করে। বাঙালীত্বের গৌরব অহংকারকেও অস্বীকার করে। ইনু বলেন, যারা বাঙালী পরিচয়ে গর্ববোধ করে না, তারাই পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি, হালখাতা, বাংলা ভাষা, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আজও বাঙালী জাতি বিরোধী ঐ শক্তি বাংলা, বাঙালিত্ব, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘোষিত-অঘোষিত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যুদ্ধ পরিচালনা করছে। অন্তর্ঘাত, নাশকতা, অগ্নিযুদ্ধ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ৫২, ৫৪, ৬৯, ৭০, ৭১ এ বাঙালী হারেনি। আজও বাঙালী ও বাংলাদেশ জঙ্গী ও জঙ্গী-সঙ্গীর কাছে হারবে না। ইনু বলেন, ৫২, ৫৪, ৬৯, ৭০, ৭১ পাকিস্তানী পাঞ্জাবী শাসক-শোষক-সামরিক জান্তার সাথে আপোস করেনি, আজও জঙ্গী ও জঙ্গী-সঙ্গীর সাথে বাঙালী-বাংলাদেশ আপোস করবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে বিস্ময়কর জাদুকরী উন্নয়ন চলছে তার সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হলে শোষণ-বৈষম্যের অবসান করতে হবেÑ সমাজতন্ত্রের পথে দেশকে পরিচালিত করতে হবে।
×