ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চর্যাপদ’র ভূমি;###;রোমেনা আফরোজ

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ কবি নীরবচ্ছিন্নভাবে যাপন করেন কবিতায়

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৩ মার্চ ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ কবি নীরবচ্ছিন্নভাবে যাপন করেন কবিতায়

কবিতা নিয়ে আমার তেমন কোন ভাবনা নেই। কারণ ভাবনা তৈরি হয় বিচ্ছিন্ন বোধ থেকে। কিন্তু একজন কবি নীরবচ্ছিন্নভাবে যাপন করেন কবিতায়। কেউ যদি প্রশ্ন করেন শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের কী সম্পর্ক তখন প্রশ্নকর্তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না। প্রতিদিনের নিজস্ব যন্ত্রণা, মগ্নতা এবং ধারণার ভেতর কবিতার প্রজনন প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এইভাবে কবিতা জন্ম হলেও একসময় কবির ভেতর জয়লাভ করে মানবতার কান্না। তখন পাঠক, সমালোচক, চিন্তক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন কবি মন এবং কবিতার গভীরতা। এই মনোবিন্যাসের পরিবর্তন বা আধ্যাত্মিক স্তরে কবির অনুপ্রবেশ ঘটে প্রবাহমান গতিধারার জন্য। এই চলমান নদী ধারা থেকে জন্ম হয় পরাবাস্তববাদ বা অন্যান্য মতবাদের। একসময় কবি সাধারণ পাঠক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও পাঠক এবং কবির মধ্যবর্তী শূন্যস্থান পূরণ করে কবিতা। এই বন্ধন ততটাই শৈল্পিক যতটা কবিতা। কবিকে সময়, স্বদেশ মানুষ সর্বোপরি দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে হয়। এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজস্ব অভিব্যক্তিকে উপযোগী করার মানসিকতাই একসময় আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। একজন কবিকে নিজ ভাবনার মধ্য দিয়ে সামাজিক প্রয়োজনকে প্রবাহিত করতে হয়। এই সামাজিক প্রয়োজন অনেকটাই সময়ের দাবি। আর উত্তরাধিকারদের উত্তাপ নিজ রক্তে ধারণ করতে না পারলে একটি কবিতা কখনোই সর্বজনীনতা লাভ করে না। তাই কবিতা লেখার পূর্বে প্রয়োজন বিস্তর প্রস্তুতির। কবি ভাবনার সবচেয়ে জটিলতম অংশ হলো কল্পনা। কারণ এই কল্পনার মধ্যে বৈচিত্র, আবেদন, প্রতিবাদ এবং চিত্রকল্প থাকতে হয়। না হলে পাঠকের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়। পাঠকের আবেদনের খুব কম অংশই অনুরণিত হয় কবি ভাবনায়। তবে কবি বা কবিতা কখনোই মৌলিকতা থেকে দূরে অবস্থান করে না। অনেকসময় সরলভাবে বর্ণনার জন্য হারিয়ে যায় কবিতার আবেদন। কারণ সরলভাবে বর্ণনা করার মধ্যে হয়তো শিল্প আছে কিন্তু গভীরতা নেই কিংবা গভীরতা আছে যন্ত্রণা নেই। আবার সরলীকরণের ফলে পাঠকের কাছে কবির নিজস্ব বেদনার মৃত্যু ঘটার আশঙ্কাও থাকে। এসব চিন্তা করে কবি যন্ত্রণার নিপুণ রূপদান করেন উপমার মাধ্যমে। তবে কবিতায় রূপক, প্রতীকের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গভীরতা। যেমন ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আপাত এই সরল বাক্যের মধ্যে গভীরতা আছে, আছে প্রবল শক্তি। সেই গভীরতা ও শক্তি দিয়ে তিনি দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা উচ্চারণ করেছেন। অতি সরল হয়েও এটি প্রচ- শক্তিমান কবিতা। আমাদের চারপাশের ভেদাভেদ, বৈষম্য, প্রতিযোগিতা, দখলদারি সর্বোপরি পুঁজিবাদের ফলে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা, নৈরাজ্য ও হতাশার। এর ফলে মানব মনে এক ধরনের অসংলগ্নতা, ঐতিহ্যের প্রতি অনীহা কাজ করে। তাই এই সব বিষণœতার মধ্যে কবিকে যোগসূত্র স্থাপন করতে হয়। একমাত্র কবিতা বা কবিই পারেন মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে সেতুবন্ধন তৈরি করতে। অবশ্য কবি যখন প্রকৃতি, মানুষ কিংবা স্রষ্টার মধ্যে বিলীন হয়ে যান তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কবি মন হয়ে ওঠে মানবতাবাদী। কবি ভাবনা যাই হোক না কেন একজন কবিকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে স্বাদেশিকতাকে। কারণ নিজদেশবাসীর যন্ত্রণা অনুধাবণে ব্যর্থ কবি ধর্ম-বর্ণ সমাজের উর্ধে উঠতে পারেন না।
×