ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প কি চীনা মিডিয়া আমদানি করতে চান -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ মার্চ ২০১৭

ট্রাম্প কি চীনা মিডিয়া আমদানি করতে চান -স্বদেশ রায়

মিডিয়া ও গণতন্ত্র যমজ শব্দ। এর এক থেকে অন্যকে ভিন্ন করা যায় না। একে অপরের শুধু পরিপূরক নয়, একটির অস্তিত্বও নির্ভর করে অপরটির অস্তিত্বের ওপর। এ কারণে দেখা গেছে গণতন্ত্রের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ারও বিকাশ হয়েছে। আবার যেখানে যেখানে গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বা কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি সেখানে মিডিয়ার কোন অস্তিত্ব নেই বা ছিল না। মিডিয়ার নামে এক ধরনের প্রোপাগা-াই সেখানে চলে বা চলেছিল। পৃথিবীতে এই মুহূর্তে নানান রূপে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান ঘটছে, উত্থান ঘটছে এক ধরনের অথরেটিয়ান শাসনের। এই দুইয়ে মিডিয়ার কোন স্থান নেই। গত কয়েক দিনে পৃথিবী জুড়ে আলোচনার বিষয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ মুহূর্তে আমেরিকার মিডিয়ার যে সম্পর্ক তা নিক্সনিয়ান যুগকে ছাড়িয়ে না যাক, তার সমান হতে চলেছে। গত শতকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের ভিতর নিক্সনের সঙ্গেই মিডিয়ার সব থেকে খারাপ সম্পর্ক যায়। যে যুগটাকে আমেরিকার মিডিয়ার ইতিহাসে নিক্সনিয়ান মিডিয়া যুগ বলা হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে উদার মিডিয়ার সম্পর্ক ভাল নয়। মিডিয়ার যে অংশটির সম্পর্ক ভাল ছিল না তারা ডেমোক্র্যাট সমর্থিত। তবে কখনই কোন রিপাবলিকান প্রার্থীর সঙ্গে মিডিয়ার এ অংশটির সম্পর্ক এমন ছিল না। এবার থাকার মূল কারণ ছিল, ট্রাম্প এবার রিপাবলিকান পার্টির অন্য সময়ের অবস্থান থেকে সরে গিয়েছিলেন। রিগ্যান প্রার্থী হয়ে রিপাবলিকানদের অনেক ট্রাডিশন থেকে সরে এসেছিলেন। কিন্তু রিগ্যান গণতন্ত্রের মূল চরিত্রে আঘাত করেননি। বিশেষ করে তিনি গণতন্ত্রে ধর্মীয় বিদ্বেষ, বর্ণ বিদ্বেষ এবং নির্বাচনের জন্য হেট ক্যাম্পেন বা ঘৃণা নির্ভর প্রচার করেননি। এবার এই ধর্ম বিদ্বেষ, বর্ণ বিদ্বেষ এবং ঘৃণা নির্বাচন প্রচার দেখা যায় ট্রাম্পের ক্যাম্পে। উল্লিখিত এই তিনটিই যখন কারও নীতিতে মূল প্রভাব ফেলে তখন আর গণতন্ত্র থাকে না বা ধ্বংসের মুখে পড়ে গণতন্ত্র। তাই গণতন্ত্র রক্ষার জন্যই মিডিয়ার ওই অংশ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নামে। তাদের এই উদ্দেশ্য আরও বড় ভাবে পৃথিবীর প্রগতিশীল মানুষ ও প্রগতিশীল মিডিয়াকে আকর্ষণ করতে পারত যদি তারা যাকে সমর্থন করেছিলেন ওই প্রার্থী হিলারির সততা নিয়ে প্রশ্ন না থাকত। তিনি যদি মধ্যপ্রাচ্যের হত্যা ও যুদ্ধকে সমর্থনকারী একজন নেতা না হতেন। যাহোক, নির্বাচনের আগেই বোঝা গিয়েছিল নির্বাচিত হবার পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক ভাল যাবে না। এ কোন ব্যক্তির বিষয় নয়, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আচণের বিষয়ও নয়। এ সম্পূর্ণরূপে নীতির বিষয়। অর্থাৎ যেখানে বর্ণ বিদ্বেষ, ধর্ম বিদ্বেষ থাকে এবং ধর্মীয় একতাকে জাতীয়তাবাদ হিসেবে দেখানো হয় সেখানে তখনই মিডিয়া ও গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটতে পারে না। ধর্মীয় একতাকে যখনই জাতীয়তাবাদ হিসেবে দেখানো হয়, বিশ্বাস করা হয় তখনই কিন্তু মিডিয়ার বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া মিডিয়ার বিকাশ নির্ভর করে সমাজের চিন্তা চেতনার ওপর। যখন কোন সমাজের ওপরের শ্রেণীর বড় অংশ ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, সমাজের নীচু তলায় ধর্মীয় উন্মাদনা চলে তখন ওই সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে মুক্ত চিন্তা ধীরে ধীরে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। কারণ, তখন আর চিন্তার শত ফুল ফোটার কোন সুযোগ থাকে না। মানুষের চিন্তাকে একটি বিশ্বাসের গর্তে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। বিশ্বাসের গর্ত সব সময়ই অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেখানে কোন আলোর রেখা পাওয়া সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ যে পশ্চিমকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার ওই পশ্চিম কিন্তু তার দুয়ার বন্ধ করে দিচ্ছে; এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে। তারা এখন বলছে, এটা মাইগ্রেশানবিরোধী আন্দোলন, মুসলিম মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন, এটা বাইবেলিক জাতীয়তাবাদ। কিন্তু বাস্তবে এ ক্রিশ্চিয়ানিটি। এ সম্পূর্ণরূপে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ। এতদিন তারা যে মুসলিম ধর্মীয় মৌলবাদের কথা বলেছে এখন ঠিক অনুরূপ ক্রিশ্চিয়ান মৌলবাদ তাদের গ্রাস করছে সচেতন বা অবচেতনভাবে। আর এ সময়ে সেখানে চিন্তার বিকাশ বন্ধ হবে। বন্ধ হবে মিডিয়ার জন্যে দুয়ার। ট্রাম্প তার হোয়াইট হাউসের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-এ নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, বাজফিড, সি এন এন, পলিটিকো, লস এঞ্জেলস টাইমস এবং হাফিংটন পোস্টের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তার দুই দিন পরে ট্রাম হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টদের ডিনার বয়কট করেন। এবং ট্রাম্প জানিয়ে দেন, মিডিয়া সত্য প্রকাশ করে না। তাদের কোন সোর্স নেই। এ কথা সত্য কখনও কখনও দুই একটি সংবাদপত্র বা টেলিভিশন বা অন্য কোন মাধ্যম তাদের নিজস্ব দায়িত্ব ফেলে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। আমেরিকার একটি দুটি পত্রিকা যে সে কাজ করছে না তা নয়। এগুলো ওই মিডিয়ার ব্যর্থতা। গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত তাদের ভূমিকাকে উন্মোচন করে দেয়া। কখনই তাদের প্রতি খড়গহস্ত হওয়া নয়। তাই আমেরিকার মিডিয়ার হাতে গোনা কয়েকটি মাধ্যমের ভিতর যে একটা বিরোধীদলীয় চরিত্র আছে শুধু মাত্র এ জন্যেই ট্রাম্প আমেরিকার মিডিয়ার ওপর খড়গহস্ত হয়েছেন। তিনি তাদের বয়কট করছেন এমন মনে করলে ভুল হবে। বরং ট্রাম্পের এই আচরণের পরে এখন হিসাব করার সময় এসেছে, পৃথিবীতে উদার মিডিয়া, স্বাধীন মিডিয়া কি সত্যি থাকতে পারবে? এতদিন ছোট ছোট পরিসরে আঘাত আসছিল। ট্রাম্পের এই আঘাত কী প্রথম বড় আকারের আঘাত নয়? সত্যি অর্থে উদার ও স্বাধীন মিডিয়ার স্থান পশ্চিমা দুনিয়া। এর বাইরে আফ্রিকার ভিতর সাউথ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া ওইভাবে মিডিয়ায় ডমিনেট করে না পৃথিবীতে। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে সব থেকে বড় মিডিয়া ভারতে। তারপরে জাপান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল ও বাংলাদেশে। সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নে কোন স্বাধীন মিডিয়া ছিল না। চীনে কোন স্বাধীন মিডিয়ার অস্তিত্ব নেই। এমনকি পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও নেই কোন স্বাধীন মিডিয়ার অস্তিত্ব। শুধুমাত্র আমেরিকার কারণেই বা প্রভাবে পূর্ব এশিয়ার জাপানে স্বাধীন মিডিয়া আছে। আমেরিকাসহ সারা পৃথিবীতে আজ যে স্বাধীন মিডিয়া এর উৎপত্তি স্থল বা মাদারল্যান্ড কিন্তু ব্রিটেন। তাদের অনেক কলোনিতে অনেক সময় মিডিয়ার কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। এমনকি সংবাদপত্রে সত্য বলতে গিয়ে ব্রিটিশ কলোনি ভারতের এই বেঙ্গলে জেমস লঙের কারাদ-ও হয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে বহু পত্রিকা নিষিদ্ধ হয়েছে। নাটকের বিরুদ্ধে কালাকানুন তৈরি হয়েছে। তারপরেও কিন্তু স্বাধীন মিডিয়ার মাতৃভূমি ব্রিটেন। ব্রিটেনে এখনও কিন্তু ট্রাম্পের মতো কেউ মিডিয়ার বিরুদ্ধে ঘণ্টা বাজায়নি। কিন্তু ব্রিটেনে ঘণ্টাটি বাঁধা হয়ে গেছে। যেদিনই ব্রেক্সিট গণভোটে রায় হয়েছে ওই দিনই ব্রিটেনের স্বাধীন মিডিয়ার ঘণ্টা বাজানো হয়েছে। কারণ, ব্রেক্সিট ভোটের ফল শুধু ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ইস্যুতে হয়নি। এর সঙ্গে মুসলিম মৌলবাদের নামে ধর্মীয় বিদ্বেষ, ইমিগ্রান্টের নামে রেসইজম- এগুলো কিন্তু ছিল। ব্রিটেন অনেক বেশি গণতান্ত্রিক, তাদের গণতান্ত্রিক সভ্যতার ধারা অনেক জোরে প্রবহমান। তাই এ সব ধারাকে ওইভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু আগামী সাধারণ নির্বাচনে ব্রিটেনে যদি লেবার ও কনসারভেটিবের বাইরে কোন কট্টরপন্থী নেতা বাইবেলিক ন্যাশনালইজম বা ক্রিশ্চিয়ান ন্যাশনালইজম নিয়ে উপস্থিত হন এবং তিনি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন, তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ ইউরোপের দেশে দেশে সেটাই ঘটছে। জার্মানির আগামী নির্বাচনে যে কট্টরপন্থীরা জিতবে তা অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাদের ইস্যু কিন্তু প্রচ্ছন্নভাবে বাইবেলিক ন্যাশনালইজম। আর জার্মানিতে যখন বাইবেলিক ন্যাশনালইজম আসবে তখন তার ভিতর যদি হিটলারের সেই প্রাসা রক্ত প্রবাহের শ্রেষ্ঠত্ব লুকিয়ে থাকে তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না। নেদারল্যান্ডেও এখন সাধারণ নির্বাচন সামনে। সেখানে জনমত জরিপে এখন পার্টি ফর ফ্রিডমের নেতা গিট উইডারস এগিয়ে। তার নির্বাচনী ইস্যুর সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী ইস্যুর কোন পার্থক্য নেই। পার্টি ফর ফ্রিডমের নির্বাচনী ইস্যু মুসলিম অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, ইমিগ্রান্টের বিষয়ে কড়াকড়ি এবং অবাধ বাণিজ্য ও চলাচল বন্ধ করা ও ইউরেপেীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসা। আগামী মার্চের নির্বাচনে যদি গিট নামক এই ট্রাম্প নেদারল্যান্ডের নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে সেটা হবে ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কফিনে শুধু শেষ পেরেক মারা নয়, ইউরোপীয় উদারতন্ত্রেরও এক ধরনের অগস্ত্য যাত্রা। এই অগস্ত্য যাত্রার পরে ইউরোপে স্বাধীন ও উদার মিডিয়ার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে ঘটবে। পৃথিবীতে যে উদার চিন্তার ও উদার মিডিয়ার মৃত্যু শুরু হয়ে গেছে, বা অবচেতনভাবে সকলে তা মেনে নিচ্ছে তার খোঁজ কিন্তু কেউ নিচ্ছে না। বিংশ শতাব্দীতে আফ্রিকান আমেরিকান নিউজ পেপারস ছিল শুধু আমেরিকার মানবাধিকার নয়, শুধু আফ্রিকান আমেরিকান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নয়, গোটা বিশ্বের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এক বিশাল মুখপত্র। এদের ভিতর অন্যতম ছিল পিটার্সব্যুর্গ কুরিয়ার, লস এঞ্জেলস সেন্টিনেল। এই সব পত্রিকা ইতোমধ্যে সমাজে তাদের আধিপত্য হারিয়েছে। তাদের ওই অর্থে কোন সার্কুলেশান নেই। ঠিক একই ভাবে দেখা যাচ্ছে গার্ডিয়ান, ভারতের দি হিন্দু এই ধারার যে সব পত্রপত্রিকা তারাও তাদের সার্কুলেশান হারাচ্ছে। অতি মোটা দাগে দেখা হচ্ছে, এর মূল কারণ, সোস্যাল মিডিয়া। সোস্যাল মিডিয়ায় তো রক্ষণশীল বা প্রতিক্রিয়াশীলরাও সরব। কিন্তু কই, প্রতিক্রিয়াশীল পত্রপত্রিকা তো সার্কুলেশান হারাচ্ছে না। তাই সত্যি অর্থে ব্রেক্সিটের নেতা, নেদারল্যান্ডসের ফ্রিডম পার্টির নেতা বা ট্রাম্প এরাই কিন্তু কমবেশি আমাদের সকলের মগজ দখল করে নিচ্ছে। তাই এ সময়ে উদার মিডিয়ার ভবিষ্যত সংকুচিত হবেই। আর আরও স্পষ্ট করে বলতে হয়, সত্যি অর্থে মিডিয়া সব সময়ই উদার হতে হবে। কারণ, মিডিয়ার মূল উদ্দেশ্য তথ্য বিক্রি করে কেবলমাত্র লাভবান হওয়া নয়, একটি আধুনিক সমাজ গড়া। কারণ, মিডিয়া আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার ফসল। গত কয়েক দিনে মিডিয়াকে বেশি আলোচনায় এনেছেন ট্রাম্প। তিনি মিডিয়ার একটি অংশকে ঢুকতে দেননি হোয়াইট হাউসে। যাননি হোয়াইট হাউস সংবাদদাতাদের ডিনারে। এর একটি কারণ যেমন ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ সারা পৃথিবীর উদারনৈতিক চিন্তাকে সংকুচিত করছে। তাদের বাহন মিডিয়াকে ধ্বংস করছে। তেমনি ট্রাম্পের এই মিডিয়া বিরোধিতার আরেকটি কারণ আছে, যা ছিল ট্রাম্পের নির্বাচনী নীতিতেও। ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, আমেরিকাকে তিনি আবার গ্রেট করবেন। বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতায়, আমেরিকা একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নতুন করে তার আর খুব বেশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। ক্লিন্টন থেকে ওবামা অবধি চেষ্টা করেছেন। কিছু বেকারত্ব দূর হয়েছে। কিন্তু ্আমেরিকার অর্থনীতির খুব বেশি উন্নতি করতে পারেননি। বরং বর্তমান পৃথিবীতে আমেরিকা একটি থিওসিডিডস ট্রাপে। অর্থাৎ পুরনো বড় অর্থনীতি এখন নতুন বড় অর্থনীতির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। বাস্তবে বর্তমান পৃথিবীর পুরনো বড় অর্থনীতি আমেরিকা এবং নতুন বড় অর্থনীতি চীন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, গত কয়েক হাজার বছরে এমন যত ঘটনা ঘটেছে তার শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। আর সাধারণত এই ধরনের যুদ্ধগুলোতে সব সময়ের জন্যে নতুন অর্থনৈতিক শক্তিই জয়ী হয়। আমেরিকার, বিশেষ করে ট্রাম্পের নীতিনির্ধারকরা লক্ষ্য করছেন, চীন ও চীনের প্রতিবেশী মিত্র অর্থাৎ ফারইস্ট দেশগুলো প্রতিদিন অর্থনৈতিক উন্নতি করছে। অন্যদিকে আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নতি যেমন এক স্থানে স্থির হয়ে আছে তেমনি আমেরিকার মিত্র ইউরোপের অর্থনীতি এখন ক্ষয়িষ্ণু। কট্টরপন্থীরা সব সময়ে মনে করেন, যে কোন উন্নয়নের জন্যে কঠোরতা দরকার। তাছাড়া ট্রাম্পের নীতিনির্ধারক বা কট্টরপন্থী চিন্তাবিদরা লক্ষ্য করছেন যে, চীন ও তার মিত্র দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থা অথরেটিয়ান। তারা উন্নয়নের স্বার্থে সেখানে সব ধরনের সমালোচনা বন্ধ করে রেখেছে। অন্যদিকে কট্টরপন্থীদের স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে উদার মিডিয়া বা সমালোচনা এক ধরনের বাধা। এবং ইউরোপের এই অর্থনৈতিক কম উন্নয়নকে তারা তাই মনে করছে। আমেকিার উন্নয়ন কম হওয়াকেও তারা তেমনটি মনে করছে। যে কারণে, ট্রাম্প ও তার নীতিনির্ধারকরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চারপাশে দেয়াল তুলতে চাচ্ছে ঠিকই, আমদানির বদলে উৎপাদনে যেতে চাচ্ছে, এমনকি রোবট দিয়ে গার্মেন্ট তৈরির পথে যাত্রা শুরু করতে চেষ্টা করছে। এবং সকল আমদানিতে তারা চীনা ভূত দেখছে। তবে এরপরেও তারা চীন থেকে একটি পণ্য আমদানি করতে রাজি তা হলো মিডিয়া। অথোরেটিয়ান দেশ চীন যেভাবে মিডিয়া চালায় সেইভাবেই ট্রাম্প মিডিয়া চালু করতে চাচ্ছে আমেরিকায়। ট্রাম্প ও তার ইউরোপীয় কট্টরপন্থী বন্ধু ও ট্রাম্পের পরামর্শকরা একটি স্থানে ভুল করছেন। আসলে তারা মনে করছেন, শুধু বিলিয়নিয়ার হওয়াই উন্নয়ন। চীনের আর্থিক উন্নয়নকে তারা উন্নয়ন মনে করছেন। কিন্তু ইউরোপের লাইফ স্টাইলের উন্নয়নকে তারা বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন না। আসলে জীবন বোধের উন্নয়ন ছাড়া আর্থিক উন্নয়ন কখনই স্থায়ী হয় না। আর এই জীবন বোধ ও স্থায়ী আর্থিক উন্নয়নের জন্যে প্রয়োজন উদার গণতন্ত্র এবং এই গণতন্ত্রের যমজ ভাই উদার মিডিয়া। উগ্র জাতীয়তার মোড়কে সারা পৃথিবীতে যে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ জেগে উঠেছে এর ভিতর দিয়ে অনেক ছোট-বড় ট্রাম্পের জন্ম হবে গণতান্ত্রিক দুনিয়ায়। অন্যদিকে অথরেটিয়ান দেশগুলোতে স্বাধীন মিডিয়ার স্থান নেই। তাই চীনের অনান্য পণ্যের মতো সারা দুনিয়াতে কি এখন চীনা মিডিয়া বাজার দখল করবে? আপাতত তো মনে হচ্ছে, ট্রাম্প চীনা মিডিয়াই আমাদানি করছেন। [email protected]
×