ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে পড়ার সুযোগ

মেধাবী হিম্মনের লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে?

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২ মার্চ ২০১৭

মেধাবী হিম্মনের লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে?

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ জীবন মানেই যুদ্ধ। জীবনের নানা মুহূর্তে মানুষকে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয়। এমনি এক জীবনযুদ্ধে নেমেছে মেধাবী হিম্মন চন্দ্র দাস। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম পৌরসভার মাঝিপাড়ায়। ছোটবেলা থেকে অভাবী পরিবারে বেড়ে উঠেছে সে। প্রচ- সংগ্রাম করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। তার জীবনে রয়েছে করুণ কাহিনী। বাবা-মায়ের ছোট সন্তান সে। সংসারে আর্থিক অনটন হলেও পড়াশুনায় কখনও অবহেলা করেনি। তার বাবা হলোধর চন্দ্র দাস ক্ষুদ্র জেলে। ধরলা নদীতে যে দিন মাছ পায় সে দিন তাদের সংসারে খাবার জোটে নতুবা পুরো পরিবার উপোস থাকতে হয়। মেধাবী বলেই তাকে পড়ালেখা কোন বাধাই থেমে রাখতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছে আর মানসিক শক্তি তাকে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার খুব শখ হিমেলের। এইচএসসি পাস করার পর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। পরবর্তীতে বুয়েট অনুমোদিত সানজিন ইন্টারন্যাশনাল ধানম-ি ঢাকা নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চীন সরকারের শিক্ষা বৃত্তির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখানে সে উর্ত্তীণ হয়। শুরু হয় জীবনের আর এক অধ্যায়। তার পরিবারকে ঘটনাটি জানালে তারাও রাজি হয় বিনা খরচে তাদের সন্তান উচ্চশিক্ষিত হতে পারবে। বিদেশে পড়াশুনা করলে তার ভাল চাকরি হবে। যা ভাবা সেই কাজ। এদিকে হিম্মন তার জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তিও বাতিল করে সমস্ত কাগজপত্র চীনে পাঠিয়ে দেয়। হিম্মন চীনের কুনমিং পাবলিক ও বিঞ্জান প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হয়। আগামী এপ্রিল মাস থেকে তার ক্লাস শুরু হবে। ইতোমধ্যে তার পরিবার ৫০ হাজার টাকা ধারদেনা করে সানজিন ইন্টারন্যাশনালকে ভর্তি বাবদ দেয়। বাকি দুই লাখ টাকা এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি। পর্যায়ক্রমে দিতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানকে। বাড়ির ভিটেমাটি বন্ধক রেখে এক লাখ টাকা যোগাড় করলেও বাকি টাকা যোগাড় করতে পারেনি এখনও তার পরিবার। চীনে উচ্চশিক্ষার অনিশ্চয়তার পরেছে হিম্মন। হিম্মন জানায়, তাদের ধারণা ছিল সম্পূর্ণ বিনা খরচে চীন সরকার তার শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তাদের টিউশন ফি চীন সরকার দিলেও থাকা এবং খাওয়া নিজে বহন করতে হবে। এ জন্য বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাগবে। প্রথম বছরটি কোন রকম পার করলে একটা পারটাইম জব খুঁজে বাকি তিন বছর নিজ খরচ যোগাড় করতে পারবে বলে জানায়। হিম্মনের বাবা সন্তানের পড়াশুনার জন্য বাড়ির গরুসহ বেশকিছু গাছ বিক্রি করে দিয়েছে। এখন বিক্রি করারও কিছু নেই তাদের। হিম্মনের বাবা হলোধর চন্দ্র জানান, আমার ছেলেটির ছোটবেলা থেকে পড়াশুনার প্রতি খুব ঝোঁক কিন্তু টাকার অভাবে কিছুই দিতে পারিনি। নিজ মেধা গুণে চীনে ভর্তি হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম চীনে বিনা খরচে পড়াশুনা করতে পারবে। তাই তাকে চীনে ভর্তি হতে বলেছিলাম। আমি ইতোমধ্যে দুটি গরু, গাছ বিক্রি করে কিছু টাকা দিয়েছি। মাছ বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালাই। মাসে আয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। জানি না এখন কি হবে।
×