ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ারই শেষ কেভিতোভার!

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১ মার্চ ২০১৭

ক্যারিয়ারই শেষ কেভিতোভার!

গত বছরের ডিসেম্বরে নিজ বাসায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে আহত হন পেত্রা কেভিতোভা। তার বাঁ হাতের পাঁচটি আঙ্গুলেই আঘাত লাগে, যে কারণে সুস্থ হতে কমপক্ষে ছয় মাস লেগে যেতে পারে ২৬ বছর বয়সী এ টেনিস তারকার। কেভিতোভার ঘরে চোর ঢুকেছিল। সামনে তাকে দেখে ছুরি নিয়ে আক্রমণ করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি। জীবন বাঁচাতে বাঁ হাত বাড়িয়ে দেন কেভিতোভা। এটাই যে কাল হয়ে এলো চেক প্রজাতন্ত্রের এ টেনিস তারকার জীবনে! কেননা তিনি যে মূলত বাঁ হাতেই খেলেন। এ হাতেরই পাঁচটি আঙ্গুলে আঘাত পেয়েছেন কেভিতোভা। ওই দিনই হাতে অস্ত্রোপচার করা হয় তার। তার আঘাত এতটাই মারাত্মক ছিল যে, অস্ত্রোপচার করতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। স্টেফিগ্রাফের এক পাগল ভক্তের কারণে মনিকা সেলেসের মতো খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারটা ধ্বংস হয়ে গেছে। সে ঘটনাটা অনেক টেনিসপ্রেমীরই জানা। ১৯৯৩ সালে হামবুর্গে সেলেসের পিঠে ছুরি বসিয়ে দেন মানসিকভাবে অসুস্থ গুন্টার পার্চ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চোট কাটিয়ে উঠলেও মানসিকভাবে কখনই আর সেই সেলেসকে দেখা যায়নি টেনিস কোর্টে। আর পেত্রা কেভিতোভা তো টেনিস থেকে ছিটকে পড়েছেন ছয় মাসের জন্য! তাই তার ফেরা নিয়ে অনেকের মনেই দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে চেক প্রজাতন্ত্রের এ টেনিস তারকার বয়স কম হওয়ায় অনেকেই আশাবাদী। অস্ত্রোপচারের পর কেভিতোভার মুখপাত্র কারেল তেইকাল এমনটাই জানিয়েছিলেন। তবে প্রথম তিন মাস পেশীতে কোন চাপই দিতে পারবেন না কেভিতোভা। এ বিষয়ে তেইকাল জানিয়েছিলেন, ‘অন্তত তিন মাস পেশীতে কোন ধরনের চাপ দিতে পারবে না সে। চোটটা গুরুতর। তবে চিকিৎসক বলেছেন, পেত্রার বয়স কম তাই আবারও টেনিস খেলতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’ দুই যুগ আগে টেনিস কোর্টে দোর্দ- প্রতাপ ছিল মনিকা সেলেসের। জার্মান কিংবদন্তি স্টেফিগ্রাফের একমাত্র চরম প্রতিপক্ষ। আর সে কারণেই স্টেফির ভক্ত ম্যাচ চলার মাঝের টাইম আউটে ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ ফলার ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে বসেছিলেন মনিকা সেলেসকে। সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল পেত্রা কেভিতোভার ক্ষেত্রে। এরপর থেকে অনেক টেনিস তারকাই এখন বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন অন্তত ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নিজেদের সঙ্গে রাখার অনুমোদন দেয়ার জন্য। ইতোমধ্যে অনেকে আবার ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগও করেছেন। এ ব্যাপারে কানাডার তরুণ প্রতিভাবান টেনিস তারকা ইউজেনি বাউচার্ড এক সাক্ষাতকারে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘পেত্রার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সেটা খুবই ভীতিকর ব্যাপার। আশা করছি সে খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবে। এরপর আমি নিজের ক্ষেত্রে অন্তত মনে করছি যে, নিরাপত্তাটা কী ভীষণভাবে প্রয়োজন। আমি সব সময়ই এটা নিয়ে বেশ সতর্ক থাকি। আমি এবং আমার টিম প্রতি সপ্তাহেই এটা নিয়ে আগাম সতর্কতা হিসেবে কিছু কাজ করি। বিষয়টি মোটেও হেলাফেলা করার মতো নয়। এটা জীবনের প্রশ্ন।’ বাউচার্ড জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত দেহরক্ষী রেখেছেন যাকে প্রতিটি সফরে সঙ্গে রাখেন। এমনকি কোর্টে খেলার সময় কর্তৃপক্ষের কাছে বাড়তি নিরাপত্তাকর্মী রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, ‘বিশ্বের যে কোন ক্রীড়ার চেয়ে টেনিসে ভক্ত-সমর্থকরা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে খেলোয়াড়দের কাছাকাছি আসতে পারে। কেভিতোভার ঘটনার পর আমি এটাকে এখন হুমকি বলেই মনে করছি।’ বিশ্বের সাবেক এক নম্বর তারকা ক্যারোলিন ওজনিয়াকিও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নিজের সঙ্গে অবশ্যই নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হবে শুধু সবকিছু ঠিকঠাক আছে এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকার জন্য। যে কোন জায়গায় সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিনই সতর্ক থাকা জরুরী।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুটি গ্র্যান্ডসøাম জিতেছেন পেত্রা কেভিতোভা। দুটিই আবার উইম্বলডনে। ২০১১ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। ২০১৪ সালে জেতেন দ্বিতীয়টি। এরপর আর বড় কোন শিরোপা জয়ের স্বাদ পাননি চেক প্রজাতন্ত্রের এ টেনিস তারকা। তবে টেনিস কোর্টে নিষ্প্রভ থাকলেও কখনই দমে যাননি পেত্রা কেভিতোভা। তবে বর্তমানে যে আঘাতে ভুগছেন তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়। কেভিতোভা টেনিস কোর্টের বাইরে ছিটকে পড়লেও এ মুহূর্তে আলো ছড়াচ্ছেন তারই স্বদেশী ক্যারোলিনা পিসকোভা। তারকা সব খেলোয়াড়ের ভিড়ে গত বছর তো ইউএস ওপেনের ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার! শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে এ্যাঞ্জেলিক কারবারের কাছে হেরে যান তিনি। তবে সময়ের সঙ্গে ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছেন পিসকোভা। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যেই যে দুটি ডব্লিউটিএ শিরোপা নিজের শোকেসে তুলে ফেলেছেন তিনি। বছরের শুরুতেই ব্রিসবেন ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান। এরপর শনিবার কাতার ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বর্তমানে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে থাকা এ চেক তারকা। ফাইনালে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক শীর্ষ তারকা ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের অষ্টম শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসেন তিনি। কাতার ওপেন জয়ের পথে সেøাভাকিয়ার ডোমিনিকা সিবুলকোভাকেও হারের স্বাদ উপহার দেন পেত্রা কেভিতোভার স্বদেশী, যে কারণেই তার স্বপ্নের পরিধিটা আরও বাড়ছে। এখন তার চোখ-মুখে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান আর গ্র্যান্ডসøাম জয়ের তীব্র আকাক্সক্ষা। তবে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করার আগে তার লক্ষ্য গ্র্যান্ডসøাম জয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে এক নম্বর দখল করার চেয়ে আরও একটি লক্ষ্য আছে আমার। তা হলো গ্র্যান্ডসøাম জেতা। এর আগে ফাইনাল খেলেছি, এখন আমার লক্ষ্য এটায় জয়লাভ করা।’ এসবের পেছনে পিসকোভার অনুপ্রেরণা কিন্তু কোচ ডেভিড কোটিজা। তার আগে যে পেত্রা কেভিতোভার কোচ হিসেবে দুটি মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের দারুণ অভিজ্ঞতা রয়েছে কোটিজার।
×