ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মতিউর রহমান

অসাধু চক্রের অপকর্ম!

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অসাধু চক্রের অপকর্ম!

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার অনেক জিনিসেই আজ বিষাক্ত ফরমালিন মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন কোন খাদ্য নেই যাতে ভেজাল নেই। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও যে ভেজাল আছে তা ভাবতেও অবাক লাগে। ওষুধ খেয়ে মানুষ সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষের রোগ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এদেশে অনেক ওষুধ কোম্পানি আছে যাদের কার্যক্রম ওষুগুলোর বিক্রি, মার্কেটিং শুধু গ্রামাঞ্চলের হাতুতে ডাক্তার ও ওষুধের দোকানগুলো ঘিরে। আমরা কেউ ওই সব কোম্পানির বা তাদের ওষুধসমূহের নাম জানি না। ওদের ব্যবসা মূলত ডিসপেনসারিনির্ভর। স্কয়ারের কোন এ্যান্টিবায়োটিক যদি ২০ টাকায় কিনে ২৫ টাকায় বিক্রি করে ৫ টাকা লাভ করে তবে ওই আটা-ময়দা-সুজি দিয়ে তৈরি অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ ৫ টাকায় কিনে ৩০ টাকায় বিক্রি করে লাভ করতে পারে ২৫ টাকা। রোগীর ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। ওষুধ ক্রয়ের পেছনে পুরো পয়সা ব্যয় করেও তারা ওষুধ বিক্রেতাদের লোভের বলি হয়। আমাশয়ের রোগী, প্রেসক্রিপশনে ভাল কোম্পানির ওষুধ লেখা অথচ তাকে সেটা না দিয়ে বিক্রেতা অধিক লাভের জন্য কোন এক পচা কোম্পানির পচা ওষুধ গছিয়ে দেয়। ফল হয় মর্মান্তিক। জেনেরিক ও ট্রেড নাম নিয়ে একটা উদাহরণ দেই। চধৎধপবঃধসড়ষ হলো জ্বর ও ব্যথা নিবারণের ওষুধ। অর্থাৎ ট্যাবলেটের ভেতর যে মূল উপাদান থাকে এর নাম চধৎধপবঃধসড়ষ। এই ঢ়ধৎধপবঃধসড়ষ-কে দিয়ে তৈরি ওষুধকে ইবীরসপড় নাম দিয়েছে ঘধঢ়ধ, ঝয়ঁধৎব নাম দিয়েছে অঈঊ, পচা কোম্পানি অষশধফ নাম দিয়েছে অষশধঢ়ধৎড়ষ, চযধৎসরশ কোম্পানি এর নাম দিয়েছ অহধঢ়ড়ষ, ঈড়ংসড় ঢ়যধৎসধয়-এর নাম ঈঢ়সড়ষ ইত্যাদি। এখানে ঘধঢ়ধ, অঈঊ, অষশধঢ়ধৎড়ষ, অহধঢ়ড়ষ, ঈঢ়সড়ষ এসব কোম্পানিগুলোর দেয়া চধৎধপবঃধসড়ষ এর ঃৎধফব বা বাজারী নাম। আর এসবগুলোর ভেতরেই যেহেতু চধৎধপবঃধসড়ষ থাকে- চধৎধপবঃধসড়ষ এখানে মবহবৎরপ বা মূল নাম। কিন্তু বেশির ভাগ ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নাম লেখেন না। এবহবৎরপ নাম লেখা বাধ্যতামূলক হলে কি হবে কে মানছে সেটা? ডাক্তার ঢ়ৎবংপৎরঢ়ঃরড়হ এ ঘধঢ়ধ বা অঈঊ লিখতে পারবে না- চধৎধপবঃধসড়ষ লিখতে বাধ্য। তাহলে হবে কি লোভী ওষুধ বিক্রেতা আপনাকে আটা-ময়দা কোম্পানির গছিয়ে দিলেও তাকে চার্জ করার কোন মৎড়ঁহফ থাকবে না কেননা সে তো ঢ়ধৎধপবঃধসড়ষ গ্রুপের ওষুধই দিয়েছে। আইনত সে শতভাগ ঠিক। ওই কোম্পানিগুলোও যে ঘুষপাতি দিয়ে ওষুধ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লাইসেন্স রেজিস্ট্রেশন ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছে। এখন এসব খেয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে দোষ হবে ডাক্তারের। উল্লেখ্য, পচা কোম্পানির নানাবিধ ওষুধ খেয়ে গণহারে কিডনি নষ্টসহ অন্যন্য ট্র্যাজেডি এই নিকট অতীতেই বেশ কয়েকবার ঘটেছে। আবার অনেক অসাধু ও লোভী ডাক্তাররা পচা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে প্রেসক্রিপশনে রোগীদের মানহীন ওষুধ ধরিয়ে দেয়। আবার ডাক্তার ভাল মানের ওষুধ লিখে দিলেও ফার্মাসিস্টরা তা বদল করে দেয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত লোকেরা বেশি এর শিকার হয়। বাজারে এ সমস্ত ভেজাল ওষুধের সয়লাবের ফলে রোগীরা আরও রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যাতে ভেজাল কোম্পানিগুলো ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করতে না পারে। কানাইঘাট, সিলেট থেকে
×