ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিজিবি-বিএসএফ ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিজিবি-বিএসএফ ঐকমত্য

আজাদ সুলায়মান ॥ যে কোন মূল্যে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। দু’দেশের মধ্যে অভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রিতির বন্ধন আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করা হয়। চারদিনব্যাপী বিজিবি ও বিএসএফের সম্মেলনে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়। এগুলো হচেছÑ মানব পাচার রোধে কৌশলগত অবস্থান নেয়া, সীমান্ত হাট জোরদার করা, সীমান্ত পর্যটন চালু করা, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে আগরতলায় একটি ইটিপি স্থাপন করা ও আখাউড়ায় একটি বক্সকালভার্ট তৈরি করা। এ ছাড়া পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে যৌথ প্রশিক্ষণ, অনুশীলন, দুঃসাহসিক প্রশিক্ষণ, কায়কিং, র‌্যাফটিং, সাইক্লিং, রোয়িং, মাউন্টেইন ক্লাইম্বিং পদক্ষেপ গ্রহণেও মতৈক্য হয় সম্মেলনে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪৪তম সীমান্ত সম্মেলন। সম্মেলন শেষে মঙ্গলবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ও বিএসএফ প্রধান কে কে শর্মা। পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে এই সংবাদ সম্মেলনে দুইপক্ষের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোহসিন রেজা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য চোরাচালানের বিষয়ে উভয় মহাপরিচালক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা দু’জনেই এসব প্রতিরোধে তাদের আন্তরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হন। মানব পাচার ও অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। উভয়পক্ষের সদস্যদের যৌথ সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংগঠিত অপরাধী চক্রের তথ্য আদান-প্রদান, সীমান্তে অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ কৌশল গ্রহণের ওপর জোর দেন উভয়পক্ষ। এ সংক্রান্ত আন্তঃসীমান্ত অপরাধপ্রবণ এলাকার ম্যাপিং প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি এবং মহাপরিচালক পর্যায়ের প্রতিটি বৈঠকের পূর্বে হালনাগাদ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, বৈঠকে বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতের কারাগার ও সংশোধন কেন্দ্রে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তাদের জাতীয়তা যাচাইয়ের কাজ তরান্বিত করার অনুরোধ করেন। এ প্রেক্ষিতে বিজিবি মহাপরিচালক ভুক্তভোগী বাংলাদেশী নাগরিকদের সঠিক নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্যাদি প্রদানের অনুরোধ করেন, যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের জাতীয়তা শনাক্তকরণের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানান হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোও উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। বিএসএফ মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলনে বলেন-প্রাণঘাতী নয়, এমন কৌশল অবলম্বন করার ফলে মৃত্যুর ঘটনা কমিয়ে আনা গেলেও অপরাধীদের দ্বারা বিএসএফের সদস্যদের ওপর আক্রমণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শর্মা দাবি করেন, তার বাহিনীর সদস্যরা ‘আত্মরক্ষার্থেই’ অস্ত্র ব্যবহার করেন। তবে ‘নন-লেথাল’ অস্ত্র দিয়ে ‘ফায়ার’ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়- বিজিবি মহাপরিচালক বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করা ও হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ কর্তৃক সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও ভারতীয় নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিজিবি মহাপরিচালক পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ী সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নতুন ক্যাম্প নির্মাণের সুবিধার্থে ভারতের সীমান্ত সড়ক ব্যবহারের পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য ভারত সরকার এবং বিএসএফের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় নিয়োজিত উভয় বাহিনীর সদস্যদের জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হন।
×