ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি

শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবন তথা সরকারী চাকরিতে প্রবেশের দ্বার হিসেবে বিবেচিত হয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা। যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তারা অপেক্ষায় থাকেন এই বৈতরণী পার হওয়ার। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে কেউ কেউ একাধিকবারও পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রায়শ নানা রকম জটিলতায় তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সাধারণত এগারো থেকে বারো মাস পর পর বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি কবে হবে, জানা হয় না অংশ গ্রহণেচ্ছু পরীক্ষার্থীদের। আবার দেখা গেছে, ছত্রিশতম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে না হতেই পঁয়ত্রিশতম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গেছে। তখন ছত্রিশতম বিসিএসের প্রার্থীরা প্রিলিমিনারি শেষে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে সাঁইত্রিশতম বিসিএসের আবেদনপত্র নেয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষা নিতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করতেই সময় লেগেছে আট মাস। এই দীর্ঘ সময় প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এরপর লিখিত পরীক্ষা তো রয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকারের রাজস্ব ভা-ার সমৃদ্ধ করার কাজে বেশ ভাল ভূমিকা রাখছে। যেমন একটি বিসিএসে পিএসসির তহবিলে জমা হয় প্রায় আট কোটি টাকা। সেখান থেকে তিন কোটি টাকা ব্যয় হয় সংশ্লিষ্ট বিসিএসের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে। অবশিষ্ট পাঁচ কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে যায়। এত আয় করলেও পরীক্ষাসহ সার্বিক বিষয়ে মানোন্নয়নের জন্য তেমন ব্যয় হয় না। সম্মানী বা পারিশ্রমিক কম হবার কারণে এ কাজে সহায়তাকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও সংস্কার হয়নি। সর্বত্র একটা দায়সারা-গোছের ভাব। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষায় নকল, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ বহুদিনের। পরীক্ষা প্রথার বিদ্যমান জটিলতার কারণে অনেকেই অংশ নিতে পারে না বয়স বেড়ে যাওয়ায়। সময়ের কাজ সময়ে শেষ না করা কিংবা নিজের ছাড়া অপরের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবিত না হওয়ায় যেন পিএসসির মজ্জাগত। সময় ক্ষেপণের সংস্কৃতিতে আঁকড়ে রেখেছে দীর্ঘকাল। অবশেষে কর্তৃপক্ষ চাইছেন অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরীক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার নিয়ে আসতে। সিলেবাসের আধুনিকায়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি ও নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন ছাড়াও যুগোপযোগী করার চিন্তা-ভাবনা করছেন। একক পরীক্ষার পরিবর্তে দ্বৈত পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনাও নিয়েছে। ইংরেজী মাধ্যম ও ভার্সনের পরীক্ষার্থীরা ইংরেজীতে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি, নম্বর বণ্টন ও সিলেবাস নিয়ে শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টদের আপত্তি এতদিন গ্রাহ্যে নেয়া হয়নি। এখন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সচেতনতা জেগেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। মেধা ও কোটা নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোরও দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের সময়সীমা কমিয়ে আনা না হলে বিপত্তি বাড়তেই থাকবে সব পক্ষেরই সরকারী প্রতিষ্ঠানে অধিকতর যোগ্য ও মেধাবীরা নিয়োজিত হোক এটা সবারই কাম্য। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আরও উন্নত করার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগে পরীক্ষা ও ফল এবং চাকরিতে যোগদানের সময়সীমা দীর্ঘ মেয়াদীর পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদী হলে ধকল কমে সবারই। সেইসঙ্গে পিএসসিকে গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রও প্রসারিত করা হোক।
×