ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভবদহে বিল সেচে বোরো চাষ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভবদহে বিল সেচে বোরো চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ বিলের নাম ডুমুর। কয়েক মাস ধরে জলাবদ্ধ হয়ে আছে বিলটি। অবশেষে বিলের পানি সেচে বোরো চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। চলতি বোরো মৌসুমের শেষ সময়েও তারা ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে দিনরাত বিলের পানি সেচে রোরো চাষের প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিল ডুমুরের অবস্থান যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলায়। যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় গত বছরের ৯ ও ১০ আগস্টের টানা বর্ষণে ভবদহ অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ তলিয়ে যায়। আবারও ২১ ও ২২ আগস্টের ভারি বৃষ্টিতে ভবদহের অবশিষ্ট অংশ তলিয়ে যায়। সেই থেকে ভবদহ অঞ্চলের অন্যান্য বিলের মতো বিল ডুমুরও জলাবদ্ধ হয়ে আছে। বিলটিতে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তেশ্বরী নদী থেকে একটি খাল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বিল ডুমুরে গিয়ে মিশেছে। খালটির নাম চৌরালী খাল। বিলের উপরের অংশে মনিরামপুর উপজেলার হরিদাশকাটি গ্রাম। বিল থেকে কিছুটা সামনের দিকে গ্রামের একটি সেতুর সামনে খালটিতে আড়াআড়ি মাটির বাঁধ দিয়ে তার ওপর সাতটি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র বসিয়ে বিলের পানি সেচে খালে ফেলা হচ্ছে। পাশে আরও তিনটি সেচযন্ত্র রাখা হয়েছে। খালে ফেলা পানি যাচ্ছে মুক্তেশ্বরী নদীতে। বিলের জেগে ওঠা জমিতে কৃষক ব্যস্ত বোরোর চারা রোপণে। বিল ডুমুরের কৃষকরা জানান, বিলে অভয়নগর উপজেলার রাজাপুর, ফুলেরগাতী, হরিশপুর, মাগুরা, ধলিরগাতী, গাবখালী ও জিয়াডাঙ্গা এবং মনিরামপুর উপজেলার হরিদাশকাটি, আঠারোপাকিয়া বিলে প্রায় পাঁচ হাজার বিঘা জমি রয়েছে। চৌরালী খাল বেঁধে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে তারা ছয়টি ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে দিনরাত বিলের পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেন। পরে আরও চারটি সেচযন্ত্র কাজে লাগানো হয়। এ পর্যন্ত বিলের কোথাও দেড় ফুট আবার কোথাও এক ফুট পানি কমেছে। বিলের নিচের অংশে এখনও এক থেকে দুই ফুট পানি রয়েছে। তারা জানান, কৃষকরা চাঁদা তুলে ডিজেল কিনে সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচ শুরু করেছেন। বিলের মধ্যে অবস্থিত মাছের ঘেরের পানি সেচতে বিঘাপ্রতি ৪০০ টাকা এবং বাইরের পানি সেচতে ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত কোন সহযোগিতা তারা পাননি। তারা জানান, বিলের উপরের অংশের জমি জেগে উঠেছে। ওই জমিতে বোরোর চারা রোপণ করা হচ্ছে। মৌসুম প্রায় শেষ। আরও সপ্তাহখানেক সেচযন্ত্র চালানো হবে। সব মিলিয়ে বিলের চার হাজার বিঘার মতো জমিতে বোরোর আবাদ হতে পারে বলে তারা জানান। কৃষক অসীম ধরের বিলে জমি আছে ১৩ বিঘা। তিনি এ পর্যন্ত তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার বোরোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিলের জল সেচের ফলে বোরো চাষ করা হচ্ছে। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত আমার সব জমি উঠে যাবে।’ কৃষক দেবেন ম-ল বলেন, ‘আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে জল সেচে বোরো চাষ করছি। জল সেচের জন্য আমরা কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। বিলে আমার নয় বিঘা জমি আছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন বিঘায় বোরো ধান লাগিয়েছি।’ অভয়নগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের কৃষক অরুণ সরকার বলেন, ‘ডুমুর বিলে আমার তিন বিঘা জমি আছে। সব জমি বিলের উপরের অংশে। জমি থেকে জল সরে গেছে। জমিতে ধান লাগিয়েছি।’ ফুলেরগাতী গ্রামের কৃষক সাধন রায় বলেন, ‘বিলের নিচের দিকে আমার এক বিঘা জমি আছে। জমিতে এখনও প্রায় এক হাত জল আছে। শেষ পর্যন্ত ওই জমিতে ধান চাষ করতে পারব কি-না জানি না।’ অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানী বলেন, ‘এটা একটা ভাল উদ্যোগ। কৃষকদের আমরা সেচের জন্য ডিজেল কিনে দিতে পারিনি। তবে তাদের পরামর্শসহ অন্যান্য সহযোগিতা করছি।’ মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘কৃষকের এ উদ্যোগের ফলে ভবদহ অঞ্চলের বোরো চাষের জমির পরিমাণ অনেক বাড়বে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ দফতর থেকে কৃষকদের সেচ বাবদ আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার তেমন সুযোগ নেই। তবে আমরা তাদের বিভিন্ন রকম কারিগরি সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
×