ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাঘ পালাল হাড় না কাঁপিয়ে, শুরু হলো ফাগুন হাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মাঘ পালাল হাড় না কাঁপিয়ে, শুরু হলো ফাগুন হাওয়া

সমুদ্র হক ॥ সবাইকে অবাক করে দিয়ে শীতের বদলে উল্টো উষ্ণতার রুদ্রতা দিয়ে এবারের মাঘ পালিয়েই গেল। আগাম আভাস দিয়ে গেল, এরপর বাঙালীর ঋতুবৈচিত্র্যের মাঘ মাস আর বাঘ পালানো শীত নিয়ে ফিরবে না। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মাঘ মাস অস্তিত্ব হারাতেও পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট। যা সমর্থন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিক এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (নাসা) কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এই ভবিষ্যত বার্তা যে অনেকটাই ঠিক তার প্রমাণ মিলেছে এবারের মাঘের বৈরী আচরণ অনুভব করে। অশনি সঙ্কেতও দিয়েছে, সামনেই তীব্র উষ্ণতা। যার প্রভাব পড়বে ভূগর্ভের সেচ, ফসল ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। যা শুরু হলো ফাগুনের হাওয়ায়। দেশে এবারের মাঘ মাস যে কখন এলো, কী ভাবে শেষ দিন রবিবার পার করে বসন্তকে স্বাগত জানালো তা বোঝাই গেল না। মাঘের শেষের দিনে তরুণ-তরুণীদের ফুল কেনার হিড়িক ও অতি আগ্রহ দেখে প্রথমে ভ্রান্তি বিলাসের মধ্যে পড়তে হয়। কৌতূহলী লোকজন ফুলের বাড়তি কেনাকাটার হিসাব মেলাতে গিয়ে বুঝতে পারে- কালই (আজ সোমবার) তো ফাগুনের দিনের শুরু! শ্বাস নিয়ে বলাবলি হয় মাঘ চলেই গেল, আশ্চর্য তো! এবারের শীতকালের শুরুটা ছিল উষ্ণায়নের থাবা দিয়ে। পৌষে অনেকেই লেপ বের করেনি। কাঁথা কম্বল দিয়ে পার করেছে। ধারণা ছিল মাঘে লেপ বের করতে হবে। আবহাওয়া বিভাগ বঙ্গোপসাগর ও মৌসুমী বায়ুর মতিগতি দেখে বলেছিল, শৈত্যপ্রবাহ নামবে। মাঘের মাঝপথে (জানুয়ারির শেষ দিকে) হিমালয় পাদদেশীয় হাড়কাঁপানো শীতের উত্তরাঞ্চলের মাত্র দুদিন হালকা বাতাসের সঙ্গে শীত নামে। তবে তা হাড় কাঁপানো ছিল না। বলাবলি হয় মাঘ এবার তার খেলা শুরু করল। দুদিন পরই সকালের সূর্য তাপ বাড়িয়ে ঘাম ঝরিয়ে দেয়। এরপর সেই যে শীত পালাল শেষ দিন পর্যন্ত আর ফিরল না। শীত মৌসুমে যারা শীতের পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে বের হন তারা এবার বেশ হতাশই হয়েছে। স্যুট খুব একটা বের করতে হয়নি। যারা কোট প্যান্ট টাই পরেছেন তাদের ভাবটা এমন ছিল- শীতে স্যুট পরতে হয় তাই পরেছি। যে শীত তা নিবারণের জন্য দরকার ছিল না। শাল মাফলার সোয়েটার উলের হাত মোজা মেয়েদের কার্ডিগান নকশী চাদর পরেছেন শীতের সৌজন্যে। আগামী শীত যে কতটা পড়বে এবারের শীত তারও সন্দেহ এনে দিয়েছে। এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে চলতি বছর (২০১৭) থেকেই বিশ্বজুড়ে যে উষ্ণতা বাড়বে তা গত এক হাজার বছরেও হয়নি। এ বছর বাংলাদেশে বসন্তের মধ্যভাগেই শুরু হতে পারে খরা। যা চলবে পরবর্তী শীত মৌসুম পর্যন্ত। গড় তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে ১ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যে তাপমাত্রা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক মাত্রার কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। যার প্রভাব পড়বে ভূগর্ভের সেচের ওপর। পানির স্তর নিচে নেমে সেচের স্বাভাবিক উত্তোলন হারিয়ে কৃষি উৎপাদনের হেরফের হবে। অনাবৃষ্টিরও আভাস দিয়েছে তারা। এ অবস্থাকে আবহাওয়াবিদের ভাষায় এল-নিনো বলা হয়।
×