ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্রিকেট স্বর্গে’ ব্রাজিল আর্জেন্টিনা মহারণ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘ক্রিকেট স্বর্গে’ ব্রাজিল আর্জেন্টিনা মহারণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবলপ্রেমীরা আবারও বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত দ্বৈরথ দেখার সুযোগ পাচ্ছে। কেননা আগামী জুনে প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। আগামী ৯ জুন বিশ্বের সেরা দুই দলের লড়াইটা হবে ক্রিকেটের স্বর্গখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার দ্বৈরথের বিষয়টি শুক্রবার নিশ্চিত করেছে ভিক্টোরিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এই লড়াইটা পরিচিত ‘সুপারক্ল্যাসিকো’ হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে যে লড়াইয়ে ব্রাজিলই অনেকটা এগিয়ে আছে। ২০১২ সালের পর থেকে তারা একবারও হারেনি আর্জেন্টিনার কাছে। মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে আছে পেলের দেশ। পুরো শক্তির দল নিয়ে মেলবোর্নের প্রীতি ম্যাচ খেলতে যেতে পারে দল দু’টি। এ কারণে সময়ের অন্যতম সেরা দুই তারকা লিওনেল মেসি ও নেইমারের আরেকটি দ্বৈরথও উপভোগের সুযোগ থাকছে ফুটবলপ্রেমীদের। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনায় এ দু’জন সতীর্থ। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের এক বছরের বেশি সময় আগে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দুই ফুটবল পরাশক্তি। রাশিয়া বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে গত নবেম্বরে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ব্রাজিল। এ মুহূর্তে বাছাই পর্বের শীর্ষে আছে নেইমাররা। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বেও খেলা অনেকটা নিশ্চিত সেলেসাওদের। তবে পঞ্চম স্থানে আছে আর্জেন্টিনা, যে কারণে তাদের চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিয়ে বেশ সংশয় আছে। আগাসী জুনে রাশিয়ায় শুরু হবে মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদের আসর ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ। সেখানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা অংশ না নিলেও খেলবে অস্ট্রেলিয়া। তার আগ দিয়ে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দুই দলের বিরুদ্ধেও মাঠে নামতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলাররা। সেটা নিশ্চিত না হলেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ নিশ্চিত হয়েছে। এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ভিক্টোরিয়া রাজ্যের পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী জন এরেন। তিনি বলেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াইয়ের চেয়ে বড় কোন আসর ফুটবলে নেই। আর এটা মেলবোর্নে আসছে। এই ম্যাচে মেসি-নেইমার দু’জনেই খেলবেন। আমরা খুব খুশি। ছন্দময় এবং শৈল্পিক ফুটবলের পূজারী বলা হয় ব্রাজিলকে। সাফল্যের পরিসংখ্যানে এমন অবস্থা ব্রাজিল মানেই সেরা হওয়া। ‘দ্বিতীয়’ হওয়াটাকেও দেশটি ব্যর্থতা হিসেবে মনে করে। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর দীর্ঘ দুইযুগ পর ১৯৯৪ সালে আবারও বিশ্বকাপ জেতে জাগো বনিতোরা। আধুনিক যুগে এসে এ সময় থেকেই মূলত দেশটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা তিন বিশ্বকাপে ১২ বছর বিস্ময়কর সাফল্য দেখায় ব্রাজিলিয়ানরা। এ সময়ের তিনটি বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই ফাইনালে খেলে ব্রাজিল এবং দু’টিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। এমন আকাশচুম্বী সাফল্যের পর ব্রাজিল দল যেন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এ কারণেই ২০০৬ বিশ্বকাপে ‘হেক্সা’ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে জার্মানি পাড়ি জমায় লুই ফিলিপ সোলারির দল। এ সময় রোনাল্ডিনহোরা এতটাই ফর্মের তুঙ্গে অবস্থান করছিলেন যে বিশ্বকাপ জয় করা নিয়ে কোন সংশয় ছিল না। কিন্তু চূড়ান্ত লড়াইয়ে খেই হারিয়ে বিদায় নিতে হয় পেলের দেশকে। এরপর দলের দায়ভার দেয়া হয় ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কার্লোস দুঙ্গাকে। কিন্তু দলের সেরা ফুটবলারদের বিশ্বকাপে না এনে তথাকথিত ‘শ্রমিক’ দিয়ে শিল্পকর্ম করতে যেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর স্বাভাবিকভাবেই অপসারিত হতে হয়েছে এই লৌহমানবকে। ২০১৪ বিশ্বকাপে নিজেদের মাঠে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আশাভঙ্গ হয় নেইমার, ডেভিড লুইজদের। তিনটি বিশ্বকাপে দারুণ সম্ভাবনাময় দল নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিল। পরবর্তী ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপকে তাই পাখির চোখে নিয়েছে ফুটবল পাগল দেশটি। বাছাইপর্বে দেশটির দারুণ পারফর্মেন্স আশাবাদী করে তুলছে ভক্তদের। আর্জেন্টিনাও ব্রাজিলের দুঃখ ভোলার চেষ্টায় আছে। এর আগে দু’দলের লড়াইয়ের দিকে দৃষ্টি সবার।
×