ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে তৃণমূল ফুটবলে নজর দিচ্ছে বাফুফে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অবশেষে তৃণমূল ফুটবলে নজর দিচ্ছে বাফুফে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হারিয়ে গেছে ফুটবলের গৌরবময় ইতিহাস। দেয়ালে ঠেকে গেছে ফুটবলের পিঠ। অনেক আগেই রসাতলে চলে গেছে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবল। এরজন্য পুরোপুরিই দায়ী বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ফুটবল উন্নয়নে তৃণমূলে যেতে হবে, নতুন খেলোয়াড় তুলে আনতে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে জোর দিতে হবে ... এই বাস্তব সত্যটাই গত নয় বছর ধরে অনুধাবন করতে পারেননি বাফুফে সভাপতি। কদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে সে কথাটাই বলেছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায়। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেছিলেন, ‘তৃণমূল ফুটবলের গুরুত্ব সবাই বোঝে, শুধু বাফুফে ছাড়া।’ কথায় আছে, ‘ঠুস না খেলে হুঁশ হয় না।’ অনেক দেরিতে হলেও বাফুফে নামের ‘কুম্ভকর্ণে’র নিদ্রার অবসান হয়েছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপায়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আশাপ্রদ কিছু না হওয়ায় আবারও পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরে যাচ্ছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আগামী ৯ মার্চ থেকে সারাদেশের আটটি জোনে (এখনও ভেন্যু ঠিক হয়নি) দেশের ৬৪ জেলা, পাঁচটি শিক্ষা বোর্ড, ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিকেএসপি অংশ নেবে (তবে সুপার মক কাপের কোন ফুটবলার এ আসরে অংশ নিতে পারবে না) ‘অনুর্ধ-১৮ জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে’। প্রতি দল গ্রুপে কমপক্ষে তিনটি করে ম্যাচ খেলবে। শুরুতেই খেলা নকআউট পদ্ধতিতে হবে না। অনেকেই মনে করছেন এটি হচ্ছে সর্বশেষ নয় বছর আগে (২০০৭ সালে) অনুষ্ঠিত হওয়া ‘সোহ্রাওয়ার্দী কাপে’র নতুন সংস্করণ। তবে বাফুফের এতে দ্বিমত আছে। তাদের ভাষ্য, এটা ভিন্ন টুর্নামেন্ট। কেননা সোহ্রাওয়ার্দী কাপ ছিল অনুর্ধ-১৯ বয়সীদের নিয়ে। আর এটা হচ্ছে অনুর্ধ-১৮ বয়সীদের নিয়ে। তবে সোহ্রাওয়ার্দী কাপ অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে সময়-সুযোগ হলে। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, অ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে এ পর্যন্ত ৬০ দল সাড়া দিয়েছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বাফুফে প্রতিটি জেলা/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন করে কোচ পাঠাবে (দলগুলোর দুজন স্থানীয় কোচ থাকবেন)। তারা প্রতিটি দলকে সপ্তাহ খানেকের প্রশিক্ষণ দেবেন। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার জন্য দলগুলো পাবে ৪৫ হাজার করে টাকা (তিন কিস্তিতে), এছাড়া প্রতি খেলায় উইনিংমানিও পাবে। মূল প্রতিযোগিতার খেলা আগামী ৯ মার্চ এবং চূড়ান্ত পর্বের খেলা ২৩ মার্চ থেকে শুরু হবে। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে এক লাখ এবং রানার্সআপ দল পাবে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ পুরস্কার। টুর্নামেন্টের বাজেট প্রায় ৮০ লাখ টাকা। টুর্নামেন্টের জন্য স্পন্সর সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে বাফুফে। স্পন্সর না পেলে ফিফা ও এএফসি থেকে ফুটবল উন্নয়ন খাতে প্রাপ্ত অর্থ খরচ করবে তারা। টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাদল রায় জানান, এ বছর এএফসি অ-১৯ টুর্নামেন্টে খেলবে বাংলাদেশ। এই অ-১৮ আসরটি হবে তারই প্রস্তুতি আসর। তাছাড়া এই আসরের মাধ্যমে ভবিষ্যতের মেধাবী কমপক্ষে ৩০ ফুটবলারকে বেছে নেয়া হবে, যাদের নিয়ে পরে আলাদা ট্রেনিং ক্যাম্প হবে। দেশের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে বয়স চুরি হয়Ñ এটা পুরনো অভিযোগ। অ-১৮ জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আসর এই অভিযোগ থেকে কতটা কলঙ্কমুক্ত থাকতে পারবে? বাদল জানান, ‘আগে আমরা বয়স নির্ধারণ করে দেব, তারপর ৩০ জনের প্রাথমিক দলগঠন হবে। চূড়ান্ত দল হবে ২০ জনের (ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলা দল গঠিত হয়ে গেছে)। তারপর বাফুফে কোচ পাঠিয়ে তাদের সপ্তাহ খানেক অনুশীলন করাবে। সবশেষে টুর্নামেন্টে খেলবে তারা। বয়স নির্ধারণে এবার আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব।’ বাদল আরও জানানÑ ‘বয়স নির্ধারণের কাজটা বাফুফের ৩০-৩৫ কোচ করবেন বিভিন্ন জেলায় গিয়ে। স্কুল সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র ... বিভিন্ন পদ্ধতিতে সব খেলোয়াড়ের বয়স যাচাই করা হবে। আশাকরি এতে কোচরা সফল হবেন। এ মাসের মধ্যেই কাজটা শেষ হবে।’ সবশেষে বাদল বলেন, ‘আমাদের ফুটবল এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে করে তৃণমূল ছাড়া আর কোন গতি নেই।’ এই আসরের মাধ্যমে দেশের ফুটবলের হারানো জনপ্রিয়তা আবারও ফিরে আসবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বাফুফে সহ-সভাপতি ও কম্পিটিশন্স কমিটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও বাফুফে সহ-সভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায়। আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সদস্য সত্যজিৎ দাশ রূপু, ইলিয়াছ হোসেন, ইকবাল হোসেন, এবং বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।
×