ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত নয়া ইসি

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্বাগত নয়া ইসি

একটি সুন্দর ও গঠনমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নয়া নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির সুপারিশ করা দশজনের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপর চারজন কমিশনার নিয়োগের মধ্য দিয়ে নয়া ইসির যাত্রা হলো শুরু। শীঘ্রই তারা শপথ নেবেন। স্বাধীনতার পর এই প্রথম ইসির নিজস্ব ভবন ‘নির্বাচন ভবন’ দিয়ে যাত্রা শুরু হবে নতুন কমিশনের। আর দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাদের প্রথম কাজই হবে আগামী ২২ মার্চ গাইবান্ধা-১ আসনের উপনির্বাচন আয়োজন করা। এরই মধ্য দিয়ে সবার কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারবেন নয়া ইসি। তাতেই আস্থা অর্জনের প্রথম সুযোগ তৈরি হবে। তারা সুনির্দিষ্ট মেয়াদে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বভার পালন করবেন। যে কোন গণতান্ত্রিক দেশে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব অপরিসীম। কমিশন সব ধরনের প্রভাবের উর্ধে থেকে সকল জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। বাংলাদেশেরও নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিককালে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি কাজটি করেছেন। সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত ১০টি নাম থেকে ৫টি বাছাই করেছেন তিনি। এ দেশের সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদে নির্বাচনকালীন কমিশনের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে ভারতের মতোই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত গঠিত বারোটি নির্বাচন কমিশনের কয়েকটি বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে সামরিক জান্তা শাসকদের আমলে যেমন, তেমনি ভোটে নির্বাচিত জান্তা শাসকের উত্তরাধিকারীর আমলেও। তারা নির্বাচন কমিশনকে বশংবদ বানিয়ে রেখেছিল। মিডিয়া ক্যু, মার্শাল ক্যু-এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটের রায়কে বদলে ফেলায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছিল। নির্বাচন পদ্ধতিকে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল, আর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় বসে এক কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে ভোট ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ শুধু নয়, একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। তারা নিজেদের পছন্দমতো নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিল দু’দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে। আর তাদের সেই কমিশন মাগুরা, মিরপুর ও রমনার উপনির্বাচনে যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করে, তাতে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিটি তখন সামনে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সাংবিধানি উপায়ে ইসি গঠন করে। রাষ্ট্রপতি এবারকার মতোই গতবার সবার সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী কমিশন জাতিকে উপহার দেন। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশও একটা আইন। গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের চার সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আরেকজনের শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিদায়ী ইসি ভালমন্দ মিলিয়ে অনেক পর্যায়ের নির্বাচন আয়োজন করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনও সম্পন্ন করতে হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্য দিয়ে। সেসব এখনও ইতিহাসের অংশ। স্বাগত নয়া নির্বাচন কমিশন, একই সঙ্গে আমাদের অভিনন্দন। আগামী ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে তাদের একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই কমিশন সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে দেশবাসীর আশা। স্বভাবসুলভ ও নেতিবাচক রাজনীতির কারণে জামায়াতের সহযোগী বিএনপি এই ইসির বিরুদ্ধাচরণ করছে। এই ইসির নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে তারা নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে বরাবরের মতো। ইসিতে তাদের পছন্দসই ও মনোনীত ব্যক্তি থাকার পরও সমালোচনামুখর। দেশবাসীর কাছে এসব ভাষ্য গ্রহণযোগ্য অতীতেও হয়নি, এবারও হবে না। ইসিরও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এবার মানুষের আস্থা অর্জন করার কাজটি সুচারুরূপে করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী আমরা। শুভ কর্মপথে ইসি নির্ভয় গান গেয়ে উঠুক সেই কামনা।
×