ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু থেকে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বঙ্গবন্ধু থেকে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম

স্পোর্টস রিপোর্টার কলকাতা থেকে ॥ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারতের গান্ধী পরিবারের আপাতত শেষ প্রধানমন্ত্রী তিনি। তিনি রাজীব গান্ধী। এ দুই কীর্তিমানের নামে গড়া আছে নিজ দেশে একটি করে স্টেডিয়াম। বঙ্গবন্ধুর নামে গড়া আছে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। আর রাজীব গান্ধীর নামে গড়া আছে হায়দরাবাদে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের কি সৌভাগ্য। দুইজনের নামে গড়া স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনাকারী ম্যাচ খেলছে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলে টেস্ট আঙ্গিনায় পা রেখেছে বাংলাদেশ। আর রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে খেলা দিয়ে সবদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলার মর্যাদায় ভূষিত হচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুইয়ে; সবকটি দেশেই টেস্ট খেলা হয়েছে বাংলাদেশের। শুধু যাদের (ভারতের) বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, সেই ভারতের মাটিতে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলা হয়নি। বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া টেস্ট দিয়ে ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার কোটাও পূরণ করবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের টেস্ট খেলা, রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টেস্ট খেলা দিয়ে শেষ হচ্ছে টেস্ট খেলুড়ে সবদেশের মাটিতে বাংলাদেশের টেস্ট খেলা। ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্টের অভিজাত আঙ্গিনায় পা দিয়েছে। তাতে দেশ গড়ার কারিগর বঙ্গবন্ধুর নামে গড়া স্টেডিয়ামে খেলায় বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া মিলেছে। এবার যখন বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ, সেখানেও ভারতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নামে স্টেডিয়ামে খেলবে। সেটি হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হবে এবং এজন্য গান্ধীর ছোঁয়াও থাকবে। বাংলাদেশ গড়ার পেছনে যার সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামকরণের স্টেডিয়ামে অবশ্য বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম টেস্টে ভালই খেলেছে। এবার রাজীব গান্ধীর নামকরণের স্টেডিয়ামে সেই নৈপুণ্য বা তারচেয়েও ভাল কিছু করে দেখাতে পারলেই হয়। জীবনে কখনও টেস্ট খেলেননি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। এরপরও যে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করেছে, সেটিতেই প্রশংসায় ভেসেছে দল। বিশেষ করে ১৪৫ রান করা বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট শতক করা আমিনুল ইসলাম বুলবুল তো নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তার শতকেই দল ৪০০ রান করতে পেরেছে। এরপর প্রথম ইনিংসে ভারত মাত্র ২৯ রানে এগিয়ে যায়। ভারতের প্রথম ইনিংসে প্রশংসা কুড়ান অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব যে তিনিই সর্বপ্রথম গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ৯১ রানে অলআউট না হলে রেজাল্ট অন্যরকমও হতে পারত। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। তবে শুরুটা দুর্দান্ত হয়। শুরুতেই বাজিমাত করে বাংলাদেশ। এরপর এক এক করে ৯৭টি টেস্ট খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। ৭৪টিতে হারে। ১৫টি টেস্ট ড্র করে। ৮ টেস্টে জয় পায়। এরমধ্যে ভারতের বিপক্ষে খেলে ৮টি টেস্ট। হারে ৬টিতে। ড্র হয় ২টি টেস্ট। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, এই ৮টি টেস্টই হয় বাংলাদেশের মাটিতে। ১৬ বছর অতিক্রম করে টেস্টের ১৭ বছরে পা রেখেছে বাংলাদেশ। অথচ এখন পর্যন্ত ভারতের মাটিতে কোন টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ পায়নি। অবশেষে সেই আমন্ত্রণ মিলেছে। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্টও খেলতে নামবে বাংলাদেশ। যে দলটির বিপক্ষে টেস্ট খেলেই টেস্ট যুগে পা রাখে বাংলাদেশ, সেই দলটির দেশে ১৬ বছর পর টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে। সেই টেস্টটি হবে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। এ স্টেডিয়ামে এরআগে মাত্র ৩টি টেস্ট হয়েছে। তিন টেস্টের দুটিতে জিতে ভারত। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ জিতে। একটিতে ড্র করে। সেটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে এ স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্ট ম্যাচে। ২০১৩ সালের মার্চে হয় এ স্টেডিয়ামে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচটি। স্টেডিয়ামের ইতিহাস ঘেঁটে যতদূর বোঝা যাচ্ছে, হায়দরাবাদের মূল স্টেডিয়ামই এখন এটি। ৫৫ হাজার আসন সংখ্যাবিশিষ্ট, ১৬ একর জমিতে গড়া এ স্টেডিয়ামে অবশ্য এখন পর্যন্ত কোন আইসিসির ইভেন্টের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। ফ্ল্যাট উইকেট। যেখানে ব্যাটসম্যান ভুল না করলে রান করা সম্ভব। তবে এ উইকেটে স্পিনটা অনেক বেশি কার্যকর হয়। যে স্পিনের ফাঁদে পড়েই ব্যাটসম্যানরা ভুল করে বসেন। স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ স্কোরটি ভারতেরই। ২০১৩ সালে হওয়া শেষ টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০৩ রান করে ভারত। ৩৫০ রানের ওপরে আরও চারটি স্কোর রয়েছে। ৫ ব্যাটসম্যান শতক করতে পেরেছেন। ভারতের চেতস্বর পুজারা একাই ২টি শতক করেছেন। আর তাই এবার টেস্ট দলেও সুযোগ পেয়েছেন পুজারা। একটি ২০৪ রানের স্কোরও আছে। নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম (২২৫) ও পুজারাই ডাবল শতক করতে পেরেছেন। তবে স্পিনটাই এখানে পার্থক্য গড়ে দেয়। বিশেষ করে অশ্বিন ২ ম্যাচ খেলে তিন ইনিংসেই ৫ বা তার বেশি উইকেট শিকার করেছেন। ২ ম্যাচেই ১৮ উইকেট শিকার করেছেন। এ স্টেডিয়ামে পেসাররা যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। শুধু বোলিংই করে যান। উইকেট আর ধরা দিতে চায় না। জহির খান যেমন পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেন। তাও ৪ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি। এ স্টেডিয়ামে উইকেট শিকারের দিক দিয়ে জহির আছেন ৮ নম্বরে। ওপরের সাতজনই হচ্ছেন স্পিনার। বোঝাই যাচ্ছে, স্পিনটাই যত সমস্যা হয়ে ধরা দিতে পারে। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ দল বাজে খেলেছে। দুর্দশা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। এরপরও আশা, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ভালই করেছিল বাংলাদেশ। এবার ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। সেটি হবে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এবারও বাংলাদেশ ভাল করলেই হয়।
×