ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট একাদশ সংসদ নির্বাচন

কুমিল্লায় নির্বাচনমুখী মন্ত্রী-এমপিরা, বসে নেই বিএনপিও

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কুমিল্লায় নির্বাচনমুখী মন্ত্রী-এমপিরা, বসে নেই বিএনপিও

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কুমিল্লায় নির্বাচনী এলাকামুখী হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। এরই মধ্যে তারা কুমিল্লার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশসহ ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তারা জনসম্মুখে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচীতেই নয়, অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও। এসব অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরার মধ্য দিয়ে কার্যত তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কোন্দল নিরসনসহ মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বসে নেই বিএনপিও। বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ না করলেও বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতারা ঘরোয়া পরিবেশে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের মধ্য দিয়ে কৌশলে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানা গেছে, জেলার ১৬টি উপজেলার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২টি, স্বতন্ত্র ২টি ছাড়া অপর ৭টি আসনেই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরও প্রায় ২ বছর বাকি। এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে সমর্থন অটুট রাখতে এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকা- চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক জনসংযোগ, সভা-সমাবেশে তাদের উন্নয়ন এবং সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরছেন- দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতিও। এছাড়া এ জেলার যেসব আসনে দলীয় কোন্দল রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতেও বেশ তৎপর রয়েছেন। সাংগঠনিকভাবে বিভক্ত কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গত বছর হলেও এখনও ঘোষণা করা হয়নি মহানগর কমিটি। এছাড়া জেলার যেসব উপজেলায় আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে সেসব উপজেলায় কমিটি গঠনেও সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছেন। জেলার চৌদ্দগ্রাম আসনের এমপি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব প্রতি সপ্তাহে এলাকায় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিগত সময়ে চৌদ্দগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অপরদিকে সংসদ সদস্যদের মধ্যে এলাকায় সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক এবং সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের অনুষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে এলাকায় আসেন এফবিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মুরাদনগরের এমপি আলহাজ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি মুরাদনগরে কয়েকটি উন্নয়নমূলক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এমপি, সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, দেবিদ্বারের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলসহ অন্যান্য এমপিরাও অনুরূপ সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি বলেন, নির্বাচনের আরও দুই বছর বাকি। এ সরকারের আমলে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার পরে দেশে আর কোন সরকার তা করতে পারেনি। সরকারের এসব উন্নয়নের কারণে দেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চৌদ্দগ্রামে কোন উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগের আমলে চৌদ্দগ্রামে সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মুরাদনগরের এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা অতীতের যে কোন সরকারের চেয়ে অনেক ভাল। এ সরকারের আমলে মুরাদনগরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুতায়নসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। অপরদিকে বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও দলের প্রভাবশালী নেতারাও বসে নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা জেলার সকল উপজেলা ও সংসদীয় আসনে দলকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আলহাজ মনিরুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদসহ অন্য নেতারা প্রকাশ্যে বড় ধরনের সভা-সমাবেশ না করলেও এলাকার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। নিরপেক্ষ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে এবং সেই আশা নিয়ে নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছে।
×