ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থার সদস্য ওরা;###;দেশী-বিদেশী অর্থায়নে গ্রামাঞ্চল থেকে শহর পর্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে;###;ফেসবুকে পরিচিত ‘ব্লাডরোজ’ নামে

হাজারো সক্রিয় ॥ জামায়াতের নতুন কৌশল নারীকর্মী

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

হাজারো সক্রিয় ॥ জামায়াতের নতুন কৌশল নারীকর্মী

শংকুর কুমার দে ॥ আকলিমা রহমান মনি (২২) বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর আনুকূল্যে গড়া ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নেত্রী রাবেয়া বিনতে আজহার নামে এক নেত্রীর হাত ধরেই ছাত্রী সংস্থায় যোগ দিয়ে দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দু’বছর সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে সে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় আকলিমার ‘বড় পদ’ পাওয়ার কথা ছিল। এভাবেই ইসলামী ছাত্রী সংস্থা থেকে জেএমবি নামক জঙ্গী সংগঠনে ভিড়ে গিয়ে দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশ নেয়ার জন্য মিলিত হতে গিয়েই গ্রেফতার হন আকলিমা। গত ১৫ আগস্ট তার সঙ্গে গ্রেফতার হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ঐশী, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মৌ ও মেঘনা। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আকলিমা বলেছেন, সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে আনা হয় তাকে। গ্রেফতারের দুই সপ্তাহ আগে জামায়াতের এক নেতার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছে আকলিমা। আহলে হাদিস নেতা আসাদুল্লাহর বাসায়ও যাতায়াত ছিল তার। আকলিমা খুব মেধাবী ছাত্রী। এক ভাই চার বোনের মধ্যে সবার ছোট আকলিমা। তার বাবার নাম শহিদুর রহমান ও মায়ের নাম ওমেদা বেগম। গাজীপুর সাইনবোর্ড এলাকায় তাদের বাসা। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য সহপাঠীদের সঙ্গে মিরপুরের একটি মেসে থাকত। সেখানেই নারী জঙ্গী সম্পৃক্ততায় গ্রেফতার হয় আকলিমা। আকলিমার সঙ্গে গ্রেফতারকৃত অপর নারীরাও জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, জামায়াতের ইন্ধনে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার হয়ে দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়েই জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছেন। এই চার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক এ্যাডিশনাল ডিআইজি খন্দকার লুৎফুল কবীর। জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ৮৩টি সাংগঠনিক জেলার সাড়ে ৩ শতাধিক থানা ও মহানগর এলাকায় জামায়াতের মহিলা উইং (শাখা) ও ছাত্রী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার নেত্রী ও কর্মীরা সক্রিয়। সারাদেশে জেলা ও থানা শহর, বন্দর, পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জে দাওয়াতী কার্যক্রমে সক্রিয় আছেন এমন নারী ও ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ এক সময়ে নারী নেতৃত্ব আদর্শবিহীন বলে প্রচার করলেও এখন সুদূরপ্রসারী নীলনক্সা নিয়ে মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থা খুলে তাদের মাঠে নামানো হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য দেশগুলোর থেকে ধর্মের নাম ব্যবহার করে পাওয়া কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনুদান, ফেতরার টাকায় বিরাট ফান্ড (তহবিল) গঠন করে এখন তাদের মহিলাকর্মীসহ পুরুষকর্মীদের মাসোহারা ভিত্তিতে নিয়োগ করে জঙ্গীবাদ, নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে ব্যয় করা হচ্ছে। জামায়াতের মহিলা শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু করে মাদ্রাসার ছাত্রীদেরও দাওয়াতী কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে এ ধরনের কর্মকা-ের সহযোগী করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন এনে গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছে। দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছে। বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর প্রতিশোধে মরিয়া হয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের কারণে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে মহিলা টিমকে সামনে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থার নামে দাওয়াতী কার্যক্রম চালানোর আড়ালে তারা জঙ্গীবাদে জড়িত থেকে নাশকতা ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। গত তিন বছরে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা, থানা পর্যায়ে অন্তত পাঁচ শ’ নারী কর্মীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দাওয়াতী কার্যক্রমের আড়ালে জঙ্গীবাদ, সরকার উৎখাত, দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, ষড়যন্ত্রসহ নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও বেআইনী কার্যক্রমের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। যেসব নারী কর্মী গ্রেফতার হয়েছে তাদের কাছ থেকে ককটেল, গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, জিহাদী গ্রন্থ, লিফলেট, প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীসহ নানা তৎপরতার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ। জামায়াতে ইসলামীর মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থার নারীরা দাওয়াতী কার্যক্রমের আড়ালে নাশকতাসহ সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার বিষয়ে গোপন আলোচনা করতেই গোপন বৈঠক করছিল এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন তাজমহল রোডের ১১/৭ নম্বর দোতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে গোপন বৈঠক করার সময় গ্রেফতার হয় ২৮ নারী। তারা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রী ও কর্মী। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর নারী বিভাগের সেক্রেটারি জেনারেল শাহনাজ বেগম, রোকন পর্যায়ের নেত্রী নাঈমা আক্তার, উম্মে খালেদা, জোহরা বেগম, সৈয়দা শাহীন আক্তার, উম্মে কুলসুম, জেসমিন খান, খোদেজা আক্তার, সালমা হক, সাকিয়া তাসনিম, সেলিমা সুলতানা সুইটি, হাফসা, আকলিমা ফেরদৌস, রোকসানা বেগম, আফসানা মীম, শরীফা আক্তার, রুবিনা আক্তার, তাসলিমা, আসমা খাতুন, সুফিয়া, আনোয়ারা বেগম, ইয়াসমিন আক্তার, সাদিয়া, ফাতেমা বেগম, উম্মে আতিয়া, রুমা আক্তার, রাজিয়া আক্তার ও রাহিমা খাতুন। তাদের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত জামায়াতের ২৮ নারী নাশকতা এবং সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করতেই জড়ো হয়েছিল। নাশকতাসহ সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার বিষয়ে গোপন আলোচনা করতেই তারা গোপন বৈঠক করছিল। মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াতের ২৮ নারীকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে বই, সাংগঠনিক বিভিন্ন নথিপত্র, উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বই, লিফলেটসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে। ওই নারীরা নাশকতা ও সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করতেই জড়ো হয়েছিল। তারা নানাভাবে সরকারকে বিব্রত করার ষড়যন্ত্র করছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধের দ-প্রাপ্ত আসামির পরিবারের সদস্য রয়েছেন। ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকেই এসেছেন। অধিকাংশই শিক্ষিত। কেউ কেউ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তবে অনেকেই তাদের প্রকৃত পরিচয় দিচ্ছেন না। তাদের তাবলীগের কথা বলে ধর্মীয় কর্মকা-ের আড়ালে নাশকতা ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতায় মহিলারা ॥ জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জামায়েতের আমির ও সেক্রটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় ছয় নেতার ফাঁসি কার্যকর ও অন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা, তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থবিরতা কাটিয়ে সক্রিয় করার অংশ হিসেবেই মহিলা উইংকে সক্রিয় করে মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগর মিলিয়ে সর্বমোট ৮৩টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। ২০১৭-১৯ মেয়াদের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নতুন কমিটি মনোনীত করেছেন দলের আমির মকবুল আহমদ ও সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছেন ডাঃ শফিকুর রহমান। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দ-প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আবারও স্বপদে বহাল আছেন। দলটির আমির মকবুল আহমদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় আমির নির্বাচনের পর গত ২০ অক্টোবর শুরু হওয়া জেলা-মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা নির্বাচন সম্পন্ন করেছে জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে সব জেলার আমির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এরপর জেলা ও মহানগরের আঞ্চলিক রোকনদের ভোটে আঞ্চলিক শূরা নির্বাচন করার পর সেক্রেটারি নিয়োগ দেবেন আমিররা। গঠনতন্ত্রের ধারা-৩১-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, জেলা/মহানগরী সদস্যদের (রোকনগণের) ভোটে। নতুন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য হিসেবে ২৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ৪২ হাজার রোকনের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ধারা ১৮-এর ২ উপধারায় বলা আছে, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার কার্যকাল হবে তিন বছর। এর বাইরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মহিলা শাখার সদস্যরা মিলিয়ে আরও ৪০ জন কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য হতে পারেন। গঠনতন্ত্রের একই ধারার ৪-এর ‘ঙ’ এ বলা আছে, কেন্দ্রীয় মহিলা মজলিশে শূরার সকল সদস্য কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য হবেন। মজলিশে শূরার সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় মহিলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলও নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রেক্ষাপট ॥ আজকের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠালগ্নে নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামীয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী। প্রতিষ্ঠালগ্নের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তিন বার। বর্তমানেও জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীর বিচারে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর থেকে এই দলটি বাতিলের জন্য দাবি উঠেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং একে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল জামায়াত। এই দলটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাঙালী জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল। দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে যোগদান করেছিল। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকা-ের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের ওপর থেকে নিষেদ্ধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরীয়াভিত্তিক একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। জামায়াতের বিরুদ্ধে হিন্দু ও বৌদ্ধ এবং আহমদীয়া মুসলমানদের উপর ধারাবাহিক আক্রমণের অভিযোগ আছে। ১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের নামে বহুদলীয় জোটে যোগদান করে নিজেদের কুর্কীতি আড়াল করার চেষ্টা করে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে মিলিত হয়ে আরো অন্য দুটি দলসহ চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয় লাভ করলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীন জামায়াতের দুজন সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। ২০১২ সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের যাবজ্জীবন কারাদ- হলে কারারুদ্ধ অবস্থায় মারা যান এবং জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আবদুল কাদেরের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস প্রতিবাদ করে যাতে অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বহু লোক নিহত হয় ও সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি হয়। ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটনায়। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় রোকন (সদস্য), আমিরে জামায়াত, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। জামায়াতের মূলনীতির পরিবর্তন ও নেতৃত্বের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় স্থবির হয়ে জামায়াতকে গত বছর থেকে আবারও সক্রিয় করার জন্য মাঠে নামার প্রস্তুতির পর্যায়ে এখন মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থাকেও সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জামায়াতের অর্থায়ন ॥ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কোচিং সেন্টার, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মাল্টিপারপাস সমিতিসহ ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে র‌্যাব-পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য আরব দেশগুলো থেকে ফেতরা, সাহায্য এনে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে জামায়াত-শিবির। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জামায়াত-শিবির সমর্থক বা কর্মীদের একটি বড় অংশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার কাজে সক্রিয় থেকে সরকারবিরোধী বা দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। ২০১৩ সালে জামায়াতের মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ নজরদারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই নির্দেশে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণকারী অন্য সরকারী সংস্থাগুলোকেও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়। সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন সরকারের উদ্বেগের কারণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের দলীয় বিশ্বাস ও কর্মকা-ের প্রচার চালাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বৈদেশিক সাহায্যের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে আনা হয়েছে। সেসব অর্থ সংগঠনের পেছনে ব্যয় করার পাশাপাশি বিভিন্ন জঙ্গী ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ওষুধ প্রস্তুততকারী প্রতিষ্ঠান, আবাসন প্রতিষ্ঠান, পরিবহন কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার, স্কুল-কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে বলে এর আগে গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেছেন, ২০১৩ সালেই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অর্থনীতিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা যোগ হয়েছে। ওদের শুধু নিট মুনাফা ধরলেই অঙ্কটা প্রায় এক লাখ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়, যেটা বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন বাজেটের চেয়ে বেশি। জামায়াতে ইসলামীর এসব অর্থায়নে পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থার সদস্যরাও নিয়োজিত হয়ে সক্রিয় আছেন মাসোহারা ভিত্তিতে। মাসোহারা ভিত্তিতে তাদের মহিলা টিমের সদস্যরা বোরকা ও হিজাব পরে শহর, বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লায় গিয়ে ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে, যা নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-কে ডেকে আনছে। জামায়াতের মহিলা উইং প্রধানের দেয়া তথ্য ॥ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মুত্যদ- কার্যকর করা জামায়াতের আমির যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী জামায়াতের মহিলা শাখার সেক্রেটারি সামছুন্নাহার নিজামী পরিচালিত স্কুলটিতে গত বছরের আগস্ট মাসে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয় মহিলা কর্মীসহ ১৮ জামায়াতকর্মীকে। পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টের ৮ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত নিজামীর স্ত্রী সামছুন্নাহার নিজামী পরিচালিত ইসলামী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজে। এ স্কুলে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক চলাকালে জামায়াতের বাড্ডা শাখার আমির ও প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল ফকরুদ্দিন মোহাম্মদ কেফায়েতুল্লাহসহ ১৮ জামায়াতকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, ইসলামী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ নামে এ প্রতিষ্ঠানের গুলশান ও মেরুল বাড্ডায় দুটি শাখা রয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই প্রিন্সিপালের দায়িত্বে রয়েছেন যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী মহিলা জামায়াতের সেক্রেটারি সামছুন্নাহার। যেভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম ॥ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা উইং ও ছাত্রী সংস্থার গ্রেফতারকৃত নারী কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে পুলিশ জানায়, তারা জেলাপর্যায়ে পাড়া-মহল্লায় ধর্ম প্রচারের নামে ও ছোট ছোট সাপ্তাহিক ধর্মসভার আড়ালে কাজ করছে। পুুরুষদের পাশাপাশি জঙ্গীবাদে মহিলাদের তৎপরতায় সম্পৃক্ত তারা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা পরিকল্পনা করার পর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছেন নারীরা। দেশী-বিদেশী অর্থায়নের মাধ্যমে নারীদের দিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সারাদেশেই জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী ও সংগঠনে নারীদের নিয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা বোরকা ও হিজাব পরিহিত থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছেন। আবার বোরকা ও হিজাব পরে দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগানো যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত নারীরা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, নারীরা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায়। জঙ্গী সংগঠনগুলোর মতোই এ নারীরা ধর্মীয় ও জিহাদী কথা বলে ধর্মপ্রাণ মা-বোনদের উদ্বুদ্ধ করে এবং আর্থিক সহায়তা নিয়ে থাকে। কিন্তু আড়ালে তারা জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল প্রকাশ্য নারীবিদ্বেষী, সেই তারাই গড়ে তুলেছে তাদের মহিলা উইং ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। তাদের একটি অংশকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী প্রশিক্ষণের বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে নেমেছে এ নারীরা। যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কাছে ককটেল, গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, জিহাদী গ্রন্থ, লিফলেট, প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীসহ নানা তৎপরতার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ। উচ্চশিক্ষিত তরুণীরাও জড়িত হয়ে পড়েছে। জামায়াত পরিচালিত ও অর্থায়নে গড়ে ওঠা বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলো জঙ্গী মন-মানসিকতা তৈরি করে আসছে। শিক্ষিত তরুণীরা ইন্টারনেটের যোগসূত্রগুলো কাজে লাগিয়ে বিদেশের উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ ও জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। দাওয়াতী কার্যক্রমের সময় মহিলা ও নারী কর্মীরা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিলাভের উপায় এবং আল্লাহর সান্নিধ্যলাভের নামে প্রতারণামূলক প্রলোভন দিয়ে সংগঠনে যোগ দিতে সহজ ও সরলমনা নারীদের উদ্বুদ্ধ করছে। বর্তমান সময়ে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে না পারার কারণে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা উইং ও ছাত্রী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার সদস্যদেরই নারী টিম হিসেবে মাঠে নামিয়েছে জামায়াত। জামায়াতের নারী জঙ্গী তৈরির কারখানা ॥ গত বছরের আগস্টে মনি, মৌ, মেঘনা ও ঐশী নামের যে চার তরুণী গ্রেফতার হয়েছিল, ওই চারজনের মধ্যে তিনজনই মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির। এ ইউনিভার্সিটির গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, গুলশানে। গুলশানে মানারাত ঢাকা নামে ইসলামী ভাবধারার কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদ-ে দ-িত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোলা মানারাত ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সচিব ছিলেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান জামায়াতঘনিষ্ঠ সাবেক আমলা শাহ আবদুল হান্নান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যও। সদস্যদের মধ্যে আরও আছেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এলাকায় আলবদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য এবং ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মানারাত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। ওই স্কুলটিই পরে ১৯৮৫ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল কলেজ এবং সর্বশেষ ১৯৯১ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে রূপ নেয়। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যানুযায়ী পুলিশ জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার কর্মী আছে, যারা দাওয়াতী কার্যক্রমের আড়ালে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। জঙ্গীবাদের নেপথ্যে জামায়াত ॥ নিষিদ্ধ সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশসহ (জেএমবি) জঙ্গীগোষ্ঠীর নারী জঙ্গীদের নেপথ্যে জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাত্রী সংস্থার আকলিমা রহমান মনি, মৌ ও মেঘনা। গত বছর গাজীপুর, মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এ নারীদের। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, তিন মাস আগে (পরপর দুই শুক্রবার) তারা গাজীপুরের ‘হাজীর পুকুরে’ মিলিত হন। সেখানে তাদের নির্দেশনা দিতে তিন যুবকও আসেন। তারা নারী জঙ্গীদের কাছে কিছু বইপত্রও দিয়ে যান। আগেও তারা সেখানে একাধিকবার মিলিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে জায়গাটি নিরাপদ হওয়ায় কোন ঝুঁকি ছিল না। তাই হাজীর পুকুর এলাকার মসজিদে তারা জুমার নামাজ পড়তেন। পরে জঙ্গী আনসার আলীর লাইব্রেরিতে বসে আলোচনা হতো তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, হাজীর পুকুরে এক হওয়ার আগে তারা নিজেদের মধ্যে থ্রিমা এ্যাপসে যোগাযোগ করেন। রাবেয়া বিনতে আজহার নামে এক নারী এ সবকিছুর সমন্বয় করতেন। এ নারী সবাইকে এ্যাপসে দাওয়াত দিতেন। দিন-তারিখ মোতাবেক শুক্রবার জুমার নামাজের আগেই তারা সেখানে হাজির হতেন। এ রাবেয়াই সবাইকে আসল নাম-পরিচয় গোপন রাখার পরামর্শ দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাবেয়া বিনতে আজহার হলেন জামায়াতের আনুকূল্যে গড়া ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাংগঠনিক পর্যায়ের নেত্রী। রাবেয়ার হাত ধরেই তারা ছাত্রী সংস্থায় যোগ দেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আইএসের দাবিক ম্যাগাজিন, অডিও-ভিডিও বার্তা, আইএস সংক্রান্ত নানা তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করতেন। আইএসের কর্মকা-ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘নিজ ফোরামে’ থাকা নারীদের ছবক দিতেন। তাদের হাতে আপডেট ভিডিও পাঠানো হতো এ্যাপসে। গ্রেফতারকৃতরা জানান, জামায়াতের ছাত্রী সংস্থার নেত্রী রাবেয়া বিনতে আজহারের পরামর্শ মোতাবেক তাদের দলের মেয়েরা কোড নামে সক্রিয় হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন। এরা নিজেদের দ্বীনি বোন বলে সম্বোধন করে। তারা সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ব্লাড রোজ’ নামে এক গ্রুপের সদস্য বলে পরিচিতদের সহযোগিতায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রমের আড়ালে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াতের নারী টিম, মহিলারা।
×